ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

শীতে ফেরার চেষ্টা 

বৈশিষ্ট্য হারানো  মাঘে বাঘের  স্মৃতি 

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

বৈশিষ্ট্য হারানো  মাঘে বাঘের  স্মৃতি 

.

এক সময় খুব শোনা যেত কথাটা। জনপ্রিয় প্রবাদ হয়ে উঠেছিল: মাঘের শীতে বাঘ পালায়! শীত কাকে বলে, উহা কত প্রকার ও কী কী তা অন্তত এই মাসে টের পাওয়া যেত। পৌষের শীত নিয়ে অনেক আদিখ্যোতা দেখালেও, মাঘের বেলায় সতর্ক থাকতেন সবাই। বছরের সবচেয়ে বেশি শীত পড়ত এ সময়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ডের তথ্য দিত আবহাওয়া অধিদপ্তর। ‘হাড় কাঁপানো শীত’ বলে যে কথাটি চালু আছে তা মূলত মাঘ মাসকেন্দ্রিক। মাঘে শীত উপভোগের রোমান্টিক পরিকল্পনা বাদ দিয়ে প্রতিরোধের চিন্তা করতে হতো। মাঘের শীত আসলে কত ভয়াবহ হয় সেটি বোঝাতে লোকমুখে শোনা যেত, মাঘের শীতে বাঘ পালায়। বাস্তবে শীতের সঙ্গে বাঘের আলাদা করে লড়াই সংগ্রাম হয় বলে মনে হয় না। তবে বাঙালি ‘বিপুল শক্তিধর’ বা ‘ক্ষমতাবান’ অর্থেও ‘বাঘ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। অনুমান করা যায়, অভিন্ন ভাবনা থেকে মাঘের সঙ্গে বাঘের গল্প জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। বলার চেষ্টা করা হয়েছিল, বাঘের মতো অতি সাহসী পশুটিও মাঘের শীতের কাছে কুপোকাত হয়ে যায়। সেই থেকে মাঘ এলে বাঘের স্মৃতিটাও মনে পড়ে। তবে শুধুই স্মৃতি। মাঘের মৌলিক বৈশিষ্ট্য আর খুঁজে পাওয়া যায় না।  
যত দিন যাচ্ছে বদলাচ্ছে প্রকৃতির পরিবেশ। উলটপালট হয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। একই নিয়মে বদলেছে মাঘের আচরণ। এখন মাঘ মাসের শীতে বাঘ তো দূরের কথা, বিড়ালও জায়গা বদল করে না! এবারও প্রথম সপ্তাহজুড়ে মামুলি শীত ছিল। তবে গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি সামান্য বদলেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতে কাঁপছে মানুষ। সূর্যকে গিলে খাচ্ছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের তাপ আর নিচ পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। ফলে গ্রামীণ জনপদে দিন রাতের পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। কুয়াশার কারণে কাছের দৃশ্যও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। অনবরত শিশির ঝরছে। এ অবস্থায় হঠাৎ দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রামের মানুষ। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে মাঘের শীত দাপট দেখাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রাথ  রায়ের দেওয়া তথ্য মতে, গত বুধবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড়ে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি  সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। দিনাজপুরের হিলিতেও শীতের প্রকোপ। নেত্রকোনার মানুষ গত তিন দিন ধরে সূর্যালোক বঞ্চিত বলে জানা গেছে। এসব এলাকায় কুয়াশার কারণে দিনেরবেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের তথ্য বলছে, শীতে ফেরার চেষ্টা করছে মাঘ। 
রাজধানীর কথাই বা বাদ যাবে কেন! ‘শীত চলে গেছে’ বা ‘গরম লাগছে’ বলা বাসিন্দারা এখন ভালো করে নাম মুখ ঢেকে পথ চলছেন। পকেট থেকে হাত সহজে বের করছেন না। কারণ শহর ঢাকায়ও শীতের প্রকোপ। শুক্রবার সূর্যের দেখা মেলেনি বললেই চলে। কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হয়েছে দিনভর। অনেকে হয়ত ঘর থেকে বের হননি। বিকেলে মেট্রো ট্রেনে চড়তে গিয়ে দেখা গেল অন্যান্য শুক্রবারের তুলনায়  ভিড় কম। এসির বাতাস থেকে যাত্রীরা দূরে থাকার চেষ্টা করছিলেন। বাসা-বাড়ির দরজা জানালাও বন্ধ হয়ে গেছে। ঠান্ডার ভয়ে স্নান গোসল পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়ার গল্পও কানে আসছে অহরহ! 
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যও মাঘকে প্রতিষ্ঠা করে চলেছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শীত আরও কয়েকদিন থাকবে। বাড়তেও পারে সামনের দিনগুলোতে। সব দেখে মনে হচ্ছে নিজের বৈশিষ্ট্য পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করছে মাঘ। এ কারণে অবশ্য দুর্ভোগও বাড়ছে। সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শিশু এবং বৃদ্ধদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। এর বাইরে ফুটপাতে, বিভিন্ন ভবনের সিঁড়িতে, ফুটওভার ব্রিজে রাত কাটানো মানুষগুলো থর থর করে কাঁপছে। ভাগ্যবঞ্চিত এই মানুষগুলোর দিকে তাকালে মনে হয়, কী দরকার মাঘের বাঘ হয়ে ফেরার! যা আছে তা-ই থাক। কিন্তু প্রকৃতিকে বাধ্য করার আছে সাধ্য কার!  

×