ক’দিন পর শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
বইমেলার সময়টা চলে আসছে। আর মাত্র কদিন পর ঢাকায় শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা। শহর ঢাকায় এর চেয়ে উৎকৃষ্ট, এর চেয়ে বৃহৎ মেলা আর হয় না। সাহিত্যপ্রেমী সৃজনশীল মানুষ মেলাটির জন্য তাই অপেক্ষা করে থাকেন। অবশেষে সেই অপেক্ষার প্রহর গোনা শেষ হচ্ছে। বাঙালির ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত মাস ফেব্রুয়ারি আসন্ন।
রফিক শফিক বরকতদের রক্তে রাঙানো মাসের প্রথম দিন মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন একইসঙ্গে বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে জোরালো করেছিল। একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তবীজ থেকেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াই এবং ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ পাওয়া হয়েছিল। অমর একুশে বইমেলা ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের অভিন্ন চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। ফলে এটা শুধু বইয়ের মেলা নয়, তারও বেশি।
প্রায় প্রতিদিন স্টল প্যাভিলিয়ন ঘুরে বইয়ের খোঁজ করা, ধ্রুপদী সাহিত্য পাঠের অতীত স্মৃতি রোমন্থন। নতুন বই কী এলো, কবে কোনটা আসবে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ। পাতা উল্টে দেখার জন্য অপেক্ষা। বই সংগ্রহের পাশাপাশি গল্প আড্ডা। প্রাণের মানুষের সঙ্গে উদ্যাপন। সব মিলিয়ে দারুণ কাটে। এবারও ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। তার আগে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
একাডেমি প্রাঙ্গণ বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেলে প্রস্তুতিপর্বটা বেশ ভালোভাবেই প্রত্যক্ষ করা যায়। মূল কাঠামো আগেই নির্মাণ করে রেখেছিল একাডেমি। লটারি শেষে নিজ নিজ স্টল ও প্যাভিলিয়নের জায়গা বুঝে পেয়েছেন প্রকাশকরা। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করে দিয়েছেন। ফলে গোটা এলাকাজুড়েই করাতের আওয়াজ, পেরেক ঠুকার শব্দ। এই শব্দ এক ধরনের আহ্বানও বটে। যেন মেলায় আসার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অবশ্য কিছু সমস্যাও রয়ে গেছে। বিশেষ করে প্যাভিলিয়ন জটিলতা কাটছেই না। প্রতিষ্ঠিত কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন যৌক্তিক দাবি সত্ত্বেও ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। তদুপরি নতুন নিয়ম করে একাডেমি বলছে, প্যাভিলিয়নের চারপাশ খোলা রাখা যাবে না। বদ্ধ ঘরেই মেলা বই প্রদর্শন ও বিক্রি করতে হবে। কিন্তু প্রকাশকদের দাবি, এই সিদ্ধান্ত বাস্তব সম্মত নয়। এমনটি করতে চাইলে প্যাভিলিয়নের আকার আরও অনেক বাড়াতে হবে।
না বাড়িয়ে চারপাশ বন্ধ করে দিলে পাঠকের চাপ সামলানো যাবে না। এ অবস্থায় মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি এবং প্রকাশকদের মধ্যে টানা পোড়েন চলছে। প্রকাশকদের একটি সংগঠন প্যাভিলিয়ন আগের অবস্থায় রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে চিঠিও দিয়েছে একাডেমিকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা যায়নি। তবে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে মেলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এদিকে, দুই প্রাঙ্গণ ঘুরে এখন মেলার একটি চেহারা কল্পনা করা যায়। সে অনুযায়ী, বড়সর কোনো পরিবর্তন আসেনি।এলে ভালো বৈ মন্দ হতো না। আরও কিছু সমস্যা সংকট সৃষ্টির আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। একাডেমিকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মতো শক্তি সাহস এবং দক্ষতা দেখাতে হবে। আমরা নিশ্চয়ই দারুণ সফল একটি মেলা আশা করবো এবারও।
গুলশান ২ এলাকা এড়িয়ে চলার বার্তা ॥ আগামী ২৬ জানুয়ারি গুলশান-২ এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রান্সজিট কোম্পানি লিমিটেড। বৃহস্পতিবার ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক মো. আফতাব হোসেন খান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে পাতাল ও উড়াল সমন্বয়ে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের প্রস্তাবিত রুট গুলশান-২ (গোল চত্বর) মেট্রো স্টেশন এলাকায় আগামী ২৬ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পরিষেবা লাইন স্থানান্তরের কাজ চলছে।
এ সময় গুলশান-২ মোড় অভিমুখী লেনে যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে নাগরিকদেরকে যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হওয়ার এবং সম্ভাব্য বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে বার্তাটিতে। দুর্ভোগ এড়াতে একটু মনে রাখবেন।