তুর্কমেনিস্তান, মধ্য এশিয়ার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, যার রাজধানী আশখাবাদ। এই দেশের একটি বিশেষ স্থান, যা ‘নরকের দরজা’ (Door to Hell) নামে পরিচিত, তা আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হয়ে আসছে। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক বিস্ময়, যা আজও বৈজ্ঞানিক ও ভূতাত্ত্বিক গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কিভাবে এটি ‘নরকের দরজা’ হয়ে উঠল? চলুন, জেনে নেই এর আকর্ষণীয় ইতিহাস এবং বৈশিষ্ট্যগুলি।
১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূতাত্ত্বিকরা তুর্কমেনিস্তানের Darvaza অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান করছিলেন। তখনই এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে, যখন ড্রিলিংয়ের ফলে বিশাল একটি গর্তের সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস বের হতে শুরু করে। তখন বিজ্ঞানীরা সুরক্ষার জন্য গ্যাসটি পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন, ধারণা ছিল যে, কয়েক দিনের মধ্যেই গ্যাস শেষ হয়ে আগুন নিভে যাবে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, সেই আগুন আজও নিবেনি,এটি আজও জ্বলছে, যা ‘নরকের দরজা’ নামে পরিচিত।
এই গর্তটি, যাকে "Darvaza Gas Crater" বা "নরকের দরজা" বলা হয়, তুর্কমেনিস্তানের Darvaza শহরে অবস্থিত। এটি এক ধরনের জ্বলন্ত গ্যাস ক্ষেত্র যা পৃথিবীর অন্যান্য গ্যাস ক্ষেত্রের থেকে একেবারে ভিন্ন। এটির মধ্যে গ্যাস ও আগুনের মিশ্রণে এমন এক রহস্যময় এবং ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা দেখতে অনেকটা "নরকের দরজা"-র মতো মনে হয়। রাতে বিশেষভাবে এটি খুবই চমকপ্রদ হয়ে ওঠে, যখন এর শিখার উজ্জ্বলতা অনেক দূর থেকে দেখা যায়। সেই দৃশ্য মুগ্ধ করে পরিব্রাজকদের এবং পর্যটকদের।
নরকের দরজা এমন একটি স্থান যেখানে তার উত্তাপ এতটা প্রবল, যে কেউ ৫ মিনিটের বেশি সেখানে থাকতে পারবে না। এটি এতটাই উত্তপ্ত যে, তাপমাত্রা সহ্য করা সম্ভব নয়। তবে, এই ভয়ঙ্কর শিখার চমকপ্রদ দৃশ্য মানুষকে আশ্চর্য করে তোলে। রাতের বেলা যখন আগুনের শিখা আকাশে উঠে, তখন এটি প্রায় অন্য পৃথিবীটার মতো মনে হয়। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যটির কারণে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত এবং ভয়াবহ স্থানগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।
এটি মূলত একটি প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র, যা ভূতাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাসের অতিরিক্ত সঞ্চয় এবং বিস্ফোরণের ফলে গর্তটির সৃষ্টি হয়। এটি এখন এক প্রাকৃতিক বিস্ময় হিসেবে পরিচিত, যা বিজ্ঞানীদের জন্যও এক অদ্ভুত গবেষণা ক্ষেত্র। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন, তবে সেখানে অবস্থান করা কঠিন, কারণ গর্তটির কাছাকাছি গেলে তাপমাত্রা সহ্য করা সম্ভব হয় না।
এটি তুর্কমেনিস্তানের অন্যতম প্রধান পর্যটন স্থান হয়ে উঠেছে। স্থানটি দূর থেকে দেখা যায়, এবং পর্যটকরা সেখানে এসে উজ্জ্বল শিখার দৃশ্য উপভোগ করেন। যদিও এটি একটি ভয়ঙ্কর স্থান, তবে এর রহস্য এবং সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। একদিকে যেমন এটি ভীতিকর, অন্যদিকে এর অদ্ভুত সৌন্দর্যও পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
এই জায়গাটি আজও এক রহস্যময় দৃষ্টান্ত হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত। ‘নরকের দরজা’ নামে পরিচিত স্থানটি তুর্কমেনিস্তানের ইতিহাস এবং প্রাকৃতিক বিশালতার একটি চিরন্তন নিদর্শন হয়ে থাকবে। এটি শুধু একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং এটি বিজ্ঞান এবং মানব সভ্যতার জন্য এক শিক্ষা। এটি প্রমাণ করে যে, পৃথিবী কতটা অদ্ভুত এবং রহস্যময়।
সূত্র:https://www.youtube.com/watch?v=wNkWYI-Avyc
আফরোজা