ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১

মঙ্গোলিয়ায় কেন মানুষ থাকে না? এর পেছনে কী রহস্য?

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ২১ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৪:৫৩, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

মঙ্গোলিয়ায় কেন মানুষ থাকে না? এর পেছনে কী রহস্য?

ছবি : সংগৃহীত

মঙ্গোলিয়া—একটি রহস্যময় দেশ, যার খালি প্রান্তর ও বিস্তীর্ণ মরুভূমির মাঝেও মানুষ নেই। পৃথিবীর কিছু জায়গা এমন রয়েছে যেখানে প্রকৃতির শক্তি এবং পরিবেশের কঠোরতায় মানব বসতি স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। মঙ্গোলিয়া এই ধরণের একটি দেশ, যেখানে জনবসতির সংখ্যা অনেক কম, এবং জীবনের কষ্টকর বাস্তবতার কারণে বহু অঞ্চলে একেবারে মানুষের অস্তিত্ব নেই। তবে এর পেছনে কি শুধুই প্রকৃতির কঠিন বাস্তবতা, নাকি এর মধ্যে অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে?

পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক ও শীতল স্থান হিসেবে পরিচিত মঙ্গোলিয়া, ২০১৯ সালে পৃথিবীর জনবহুল দেশগুলির তালিকায় ১৩৩ তম স্থানে ছিল। দেশটির ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ঐতিহাসিক কারণগুলির পাশাপাশি সমাজিক, অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে, যা মানুষের জীবনযাত্রাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

মঙ্গোলিয়ায় মানুষের সংখ্যা কম থাকার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা প্রধানত তার প্রাকৃতিক পরিবেশ, জলবায়ু, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাথে সম্পর্কিত। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:

১. প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলবায়ু
মঙ্গোলিয়া একটি মরুময় এলাকা, যেখানে অনেকটাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অস্বস্তিকর জলবায়ু রয়েছে। দেশটির অধিকাংশ অংশ বিশাল পাহাড়, মরুভূমি এবং তাপমাত্রার বিরাট পার্থক্যে আচ্ছাদিত। শীতকাল অত্যন্ত ঠাণ্ডা এবং গ্রীষ্মকাল খুবই গরম। শীতকালে তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামতে পারে, যা মানুষের বসবাসের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। এমন পরিবেশে কৃষি ও পশুপালন যেমন কঠিন, তেমনি মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনও অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে।

২. পানি এবং কৃষিকাজের অভাব
মঙ্গোলিয়া একটি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর দেশ, যার ফলে এখানে নদী বা সেচযোগ্য জলাশয়ের অভাব রয়েছে। দেশের একমাত্র প্রধান নদী, উরুক নদীও প্রায় মরুভূমির মধ্যে পড়ে এবং পানি সরবরাহের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে কাজ করে না। ফলস্বরূপ, কৃষিকাজ এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

৩. অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব
মঙ্গোলিয়ার অর্থনীতি অনেকটা কৃষি ও পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু সেই সেক্টরগুলো খুবই সীমিত এবং সংকীর্ণ। উন্নত প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামোর অভাবের কারণে মানুষের জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন। শহরগুলোর বাইরের অঞ্চলে অর্থনৈতিক সুযোগ খুবই কম, এবং অধিকাংশ মানুষ রাজধানী উলানবাতরে বা কিছু বড় শহরে বাস করতে উৎসাহী। এতে গ্রামের অঞ্চলগুলো মানববসতিহীন হয়ে পড়ে।

৪. ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট
মঙ্গোলিয়া ইতিহাসে বহুবার আক্রমণ, যুদ্ধ এবং দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়েছে। মঙ্গোলিয়ার গ্রীষ্মকালীন বসবাসের জন্য কঠিন পরিবেশের কারণে, মানুষের জীবনযাত্রা ইতিহাসে বারবার অস্থির ছিল। তাছাড়া, দেশটির স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও অনেকটা খামার ও nomadic (যাযাবর) জীবনধারার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যেখানে মানুষ অনেকটা বিশাল প্রান্তরের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে।

৫. জনসংখ্যার কেন্দ্রীভূত হওয়া
মঙ্গোলিয়ার বেশিরভাগ জনসংখ্যা রাজধানী উলানবাতে থাকে, যেখানে উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। শহরের বাইরের এলাকাগুলোতে জনবসতির হার অনেক কম, কারণ সেখানে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। ফলে, প্রাকৃতিক এবং সামাজিক কারণে দেশটির অধিকাংশ জায়গা প্রায় জনমানবশূন্য।

৬. স্বল্প আয়ু এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
মঙ্গোলিয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবা একেবারেই সীমিত। বেশ কিছু অঞ্চলে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসক নেই, ফলে উচ্চ মৃত্যু হারও এখানে অনেক বেশি। অনুন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মানুষের বসবাসের সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৭. বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার অভাব
এছাড়া, মঙ্গোলিয়ায় শিক্ষার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। অনেক স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা উন্নত প্রশিক্ষণ সুযোগের অভাব আছে, যা মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো কঠিন করে তোলে।

এসব কারণে মঙ্গোলিয়ার অনেক এলাকা জনবসতিহীন এবং বসবাসের জন্য অপ্রতুল। তবে, কিছু শহর ও গ্রামে মানুষ বসবাস করলেও বৃহত্তর অঞ্চলগুলো এখনও তুলনামূলকভাবে নির্জন।

নুসরাত

×