ছবি : সংগৃহীত
ইলুমিনাতি, যেখানে রহস্য বা চক্রান্তের গন্ধ পাওয়া যায়, সেখানেই ইলুমিনাতিকে খুঁজে পায় অনেকে। তাই অনেকের মতে ষড়যন্ত্র তথ্য আর ইলুমিনাতি যেন একই মুদ্রার দুটো পিঠ। কিন্তু এই ইলুমিনাতি আসলে কি? কিভাবে বা এর উৎপত্তি হলো?
ইলুমিনাতি মূলত রহস্যময় এক গুপ্ত সংগঠনের নাম। যারা পুরো পৃথিবী জুড়ে বিছিয়ে রেখেছে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের জাল। কারা এই সংগঠনের সদস্য, আর কিভাবে কাজ করে তা জানার আগ্রহ কমবেশি সকলেরই রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, ইলুমিনাতির সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন আমাদের আশেপাশেই। তাদের চেনা যায় না বা ধরা যায় না, কিন্তু টের পাওয়া যায়।
আজ থেকে ২৪৯ বছর আগে ইলুমিনাতি নামে একটি গোপন আর বাস্তব সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অর্ডার অফ দা ইলুমিনাতি বা ইলুমিনাতি হলো ব্যাভারিয়াতে প্রতিষ্ঠিত একটি গোপন সমাজ, যা বর্তমান জার্মানির অংশ। এই সংগঠনটি ছিল ১৭৭৬ থেকে ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত। ইলুমিনাতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আইনের অধ্যাপক অ্যাডাম উইসাব। ইলুমিনাতি গোষ্ঠীর প্রথম বৈঠকটি ১৭৭৬ সালের পয়লা মে। ইন্দোস্টেট শহরের কাছে একটি জঙ্গলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। যেখানে পাঁচজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন এবং ওই পাঁচজন সংগঠনের গোপন আদেশ পরিচালনা করবে, এমন নিয়ম জারি করা হয়েছিল।
একসময় গোষ্ঠীটি রাজনীতি, রাজতন্ত্র ও চার্চের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর প্রভাব বাড়াতে থাকে। ইলুমিনাতির কিছু সদস্য পরে তাদের সংগঠনে নতুন সদস্য আনতে ফ্রিম্যাসন সোসাইটিতে যোগ দেয়। ফ্রিমেসন সোসাইটি হলো শুধু পুরুষদের নিয়ে গঠিত একটি প্রাচীন গোপন সমাজ। যেখানে সব সদস্য একে অপরকে সাহায্য করে এবং নিজেদের যোগাযোগের জন্য গোপন চিহ্ন ব্যবহার করে। পরে বার্ড অফ মিনারভা নামের একটি পাখি এই সমাজের প্রতীকী চিহ্ন হয়ে ওঠে। বার্ড অফ মিনার এই বার্ড আসলে একটি প্যাঁচা, যা রোমান জ্ঞানের দেবী মিনারভার প্রতীক। কেউ যদি ইলুমিনাতিতে যোগ দিতে চায় তাহলে তার, সেই সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের অনুমতি এক কথায় সর্বসম্মত অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।
সেই সাথে তাদের অঢেল সম্পদের মালিক হতে হবে এবং খ্যাতনামা হতে হবে। এছাড়াও ইলুমিনাতিতে সদস্য পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি রয়েছে। যেখানে কিছু শ্রেণীবিভাজন দেখা যায়। একজন নতুন সদস্য হিসেবে এই সংগঠনে প্রবেশ করার পর তিনি নোভিস পদবী পান। এরপর তিনি হন মিনারবাল, যা কিনা নোভিসের এক ধাপ উপরের স্তর। এর চাইতে উপরের স্তর হলো এনলাইটেন্ড মিনারবল, সংস্থাটির পূর্ণ সদস্য হতে হলে ১৩ টি শর্ত পূরণ করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।
১৭৮৪ সালে ব্যাভারিয়ার শাসক কার্ল থিওডর আইন দ্বারা অনুমোদিত শাসন নয় এমন কোন কর্পোরেশন বা সমাজ তৈরি করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরের বছর তিনি দ্বিতীয় ডিগ্রি পাশ করেন, যেখানে স্পষ্ট ভাবে ইলুমিনাতিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ওই সময় ইলুমিনাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সেখানকার সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হতো। তখন বেশ কিছু নথি পাওয়া যায়, যেখানে নাস্তিক্যবাদ এবং আত্মহত্যার মত ধারণাকে সমর্থন করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে গর্ভপাত করার নির্দেশনাও পাওয়া যায়।
ভবিষ্যতে কি ঘটতে যাচ্ছে, কিছু প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে তার আগাম বার্তা দেয় ইলুমিনাতি। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত সিমসন কার্টুনকে ইলুমিনাতির মুখপাত্র বলেন অনেকেই। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবেন আরো ১৬ বছর আগেই তা একটি কার্টুনে ফুটে উঠেছিল। যদিও সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি ছিল অকল্পনীয়। মার্কিন পথ তারকা বিয়সেকে বলা হয় ইলুমিনাতির রানী।
২০১৩ সালের দিকে সুপার বল হাফ টাইম পারফরমেন্সে, তিনি এমন কিছু ডার্ক সিম্বল ব্যবহার করেন, যা ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের পুরোপুরি নাড়িয়ে দেয়। সাধারণ মানুষদের ব্রেন ওয়াশ করে ইলুমিনাতি তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। ফলে তারা সবচেয়ে সোজা পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে মিউজিক ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।
টেইলর সুইফট, জেসি, কিম কার্ডিশিয়ান, ক্যানি ওয়েস্ট, রিহান্না, লেডি গাগা, ববলান, জিম ক্যারি, ম্যাডোনা, প্রিন্স ছাড়াও আরো বেশ কিছু তারকা ইলুমিনাতির সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হয়। ইলুমিনাতির তত্ত্বে এর মূল প্রতীক এক চোখের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। আমেরিকার এক ডলার নোটেও এমন এক চোখা একটি পিরামিড দেখা যায়, যেখানে বলা হয়, ‘অল সিং আই অফ গড’। পিরামিডের নিচে একটি সংকেত লেখা আছে, এমডি সিসি এল এক্স ভিআই, রোমান সংখ্যায় যেটি মূলত ১৭৭৬। ইলুমিনাতেও ১৭৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে অনেকেই এই ব্যাখ্যাটাকে ভুল বলে দাবি করেন। তাদের মতে, আমেরিকা ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা অর্জন করার কারণেই দ্যা গ্রেট সিলে ব্যাপারটা উল্লেখ করা হয়েছে।
মো. মহিউদ্দিন