ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

.

ঢাকায় জীবনযাপন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। অস্থিরতা, নানা মত পথের সংঘাত, নাগরিক দুর্ভোগ আরও কত সমস্যা সংকট! কোনোটিই বাড়ছে বৈ কমছে না। ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ, যেটা কিছুদিন আগেও কল্পনা করা যেত না। সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি যারপরনাই উপেক্ষিত। এলিফ্যান্ট রোডের ভয়াবহ সেই ঘটনাটির কথাইবা ভুলি কী করে! ব্যস্ততম এলাকার রাস্তায় সবার চোখের সামনে একজন ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে কোপানো হলো। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া দৃশ্য অনেকের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। মানসিক শান্তি স্বস্তি নষ্টের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজারে লাগা আগুনে পুড়তে হচ্ছে অহর্নিশ। সড়কে নামলে বিশৃঙ্খলা। যানজট। মিছিল মিটিং। লাঠিপেটা। টিয়ারগ্যাস। জলকামান। যাবে কোথায় মানুষ? বাসা বাড়িতে বসে কাটাবে? সে সুযোগও নেই। রাজধানীর বহু এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। মিরপুর, বাসাবো, রামপুরা, খিলগাঁও, বনশ্রী, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় চুলা জ্বলছে না। জ্বলছে না বললেই চলে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাসের সংকটে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে তাদের। সকাল এবং সন্ধ্যায় গ্যাসের চাপ একদম কমে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও অনেকে চুলো জ্বালাতে পারছেন না। কিন্তু রান্না তো করতে হবে, তা না হলে খাবে কী? অগত্যা কেউ বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক চুলো ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ খরচ বাড়লেও ব্যবহার করছেন এলপিজি গ্যাস। শুধু কি তাই? এই রাজধানী শহরে মাটির চুলো জ্বালিয়ে রান্না করতে দেখা যাচ্ছে এখন! না, অবাক হবেন না। এই লেখার সঙ্গে ব্যবহার করা ছবিটির দিকে তাকান। যা দেখছেন, ঘটনা তা-ই। রামপুরার উলুন এলাকার একটি বাসায় মাটির চুলোয় রান্না করা হচ্ছে। কেন? জানতে চাইলে বাসিন্দাদের জবাব: আর কোনো পথ খোলা নেই আমাদের সামনে। অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। আবার কিছু এলাকায় গভীর রাতে অল্প সময়ের জন্য গ্যাস আসে। তখন নির্ঘুম চোখে হুড়োহুড়ি করে রান্না করতে হয়। শিল্পকারখানার উৎপাদন এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারেও মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি করছে গ্যাস সংকট। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ মাত্র ২৬০ কোটি ঘনফুট। এই বিশাল ঘাটতির কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া শীতকালে চাহিদা বৃদ্ধি এবং এলএনজি টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে গ্যাসের সরবরাহ আরও কমে গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু সমাধান কী? না, এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অন্যান্য সংকটের সমাধানও সহসাই হবে বলে মনে হচ্ছে না। সুতরাং সমাধানের পথ খুঁজে নিতে হবে নাগরিকদেরই। 
ধন্যবাদ বাংলা একাডেমি ॥ বাংলা একাডেমি সম্পর্কে গত সপ্তাহে লিখেছিলাম। প্রতি বছরের মতো এবারও অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান। তবে এবার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। অনেক কিছু বদলে গেছে। এই সুযোগে মুক্তিযুদ্ধের বই, প্রগতিশীল চিন্তার বই এবং অন্যান্য বিষয়ে লেখা সৃজনশীল পুস্তকের প্রদর্শনী বিপণন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। দীর্ঘকাল ধরে যে প্রকাশকরা মানসম্পন্ন কাজ করে আসছিলেন, যারা শিল্পটিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখে চলেছেন সেই সমস্ত প্রকাশকদের টার্গেট করেছিল একদল সুযোগ সন্ধানী। তাদের পক্ষ থেকে হুমকি-ধমকি দিয়ে বলা হয়েছিল, মূল ধারার এই প্রকাশকদের মেলায় প্যাভিলিয়ন বা স্টল বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি প্রাথমিকভাবে এই অন্যায় দাবির আংশিক মেনে নিয়েছিল। তবে বঞ্চিত অপমানিত বোধ করা প্রকাশকরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। অন্যান্য অংশ থেকেও নিন্দা জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে বুধবার মেলা পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। যেসব প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নের আয়তন কমানো হয়েছিল অনেক ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্যাভিলিয়ন বাতিল করা হয়েছিল যাদের তাদের মধ্য থেকেও কয়েকজনকে প্যাভিলিয়ন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর ফলে পাঠকই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। সিদ্ধান্তটির জন্য তাই বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। ধন্যবাদ বাংলা একাডেমি। পাশাপাশি মনে করিয়ে দেয়া জরুরি যে, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই মেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। খ্যাতিমান এই লেখক মেলায় পা রাখলে মেলা আলোকিত হয়। তাঁর পেছনে শত শত ছেলে মেয়ে বই হাতে অটোগ্রাফের জন্য ছুটে। কিন্তু এবার জাফর ইকবালের বইয়ের জন্য আলাদাভাবে পরিচিত ‘তা¤্রলিপি’কে মেলায় প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্তটিও পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। একাডেমি কি ভেবে দেখবে বিষয়টি?  

×