ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১

আবাসন বঞ্চিত শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ১৯:২০, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

আবাসন বঞ্চিত শিক্ষার্থী

সমতার আলোকে দেশ যদি এগিয়ে যেতে বিঘ্নতার সম্মুখীন হয় তা হলে সার্বিক উন্নয়ন দৃশ্যমান হতেও সময়ক্ষেপণ হবে। যে কোনো সমাজের মূল অসমতা কিন্তু নারী-পুরুষের প্রভেদ। যা সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই এক বিবদমান পরিস্থিতি। একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের মধ্যগগনেও তেমন বৈষম্য, ফারাক দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান। প্রথম সেই বিভাজনের সূতিকাগার নাকি অতি আদিম ক্ষুদ্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান পরিবারই। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে জন্মদাত্রী মা-ই নাকি তার শিশু কন্যাটির সঙ্গে পুত্রের অসমতা তৈরিতে মূল ভূমিকায় থাকেন। জন্ম-জন্মান্তরের এক কঠিন প্রথা কন্যা শিশুর জন্মই তার আজন্মের বঞ্চনা। সেখান থেকে মুক্তি কবে মিলবে তা ধারণার বাইরে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জোরদার কর্মসূচিতে পুরনো সরকারের বিদায় এক কাক্সিক্ষত অর্জন বলে চিহ্নিত। পাশাপাশি আরও হরেক বিষণ্ন্নতার পরিবেশও সামনে এসে যাচ্ছে। তবে কন্যা শিশুর এমন পারিবারিক কিংবা সামাজিক অবস্থার মান্ধাতা আমলের চাইতে অনেকটাই সহনীয়। কারণ নারী শিক্ষা এখন অনেকটাই অবারিত। শিক্ষিত নারীরা অধিকার সচেতন এবং পিছিয়ে থাকার অবরুদ্ধতার জাল থেকেও মুক্তি পাচ্ছে। প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে সফলতা অর্জন করে উচ্চ শিক্ষার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা শিক্ষাকে সার্বজনীন অবস্থায় নিয়ে আসা। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলেও ছাত্রীদের সামনের সারিতে থাকা দেশের জন্য আর এক সমতাভিত্তিক বলয়৬ তৈরির সমূহ সম্ভাবনা। আমরা জানি শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সেখানে যদি রুদ্ধতার জাল কিংবা কিছু অংশের পেছনে থাকা শিরদাঁড়া উঁচু হতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। তাই নারী শিক্ষার নির্বিঘ্ন বলয় জাতির জন্য অহঙ্কারই শুধু নয় পরম পাওয়াও বটে। তবে যে অসাম্য বৈষম্য সমাজের শিকড়ে প্রোথিত সেটা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও দৃষ্টিকটুভাবে বিষাদঘন প্রতিবেশ। যা আজও ঠেকানো গেল না। উচ্চ শিক্ষার পাদপীঠ বিশ^বিদ্যালয়গুলোতেও নারী শিক্ষার ইতিবাচক অনুপ্রবেশ গত শতকের ষাটের দশক থেকে। কিন্তু আজও ছাত্রী হলের আবাসন সংকট নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি পরিস্থিতির বিপন্নতা। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় তার শতবর্ষপূর্তি পার করে আরও চার শতকের দ্বারপ্রান্তে। এখনো ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে আবাসিক সংকট মোকাবিলায় আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। ছাত্রীদের অভিযোগে দৃশ্যমান বিশ^বিদ্যালয়ে আবাসিক হল আছে ১৯টা। সেখানে ছাত্রীদের জন্য নাকি মাত্র পাঁচটি। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ৬৮৬। তার মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ১৫ হাজার ১৩৪ জন। অর্ধেকের কিছু কম। তার ওপর নারী শিক্ষার হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ায় তাদের উচ্চ শিক্ষায় অনুপ্রবেশও বাড়তির দিকে। আবাসিক সমস্যার কারণে ছাত্রীদের আশপাশের মেস কিংবা কোথাও সাবলেট ছাড়াও হলের এক সিটে দুজন ভাগাভাগি করা প্রতিদিনের জীবনযাত্রার নিত্য সংকট। আর ঠান্ডা মাথায় পাঠে মনোনিবেশও যেন লোপ পাওয়ার দুর্দশা। ছাত্রীদের আপত্তি শুধু আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাংকিং কিংবা অবকাঠামো উৎকর্ষতায় শিক্ষার মান বাড়ে না। তার চেয়ে বেশি জরুরি পঠন-পাঠনে শিক্ষার্থীদের আবাসিক মান উন্নয়ন ছাড়াও সমতার আলোকে বিশ^বিদ্যালয় পরিবেশে স্বস্তি আর কাক্সিক্ষত যাত্রাপথ মুক্ত করা। হরেক দালান-কোঠায় বিশ^বিদ্যালয়ের উন্মুক্ত আলোয় পরিপূর্ণ হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সংকটের যে দুরবস্থা তা প্রশাসনের গাফিলতি কি না তা জানাটা জরুরি। আবাসিক সংকট মোকাবিলায় প্রাপ্ত হল সিটের অপ্রতুলতায় মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করে তাদের আবাসন নিরাপত্তাও প্রাসঙ্গিক বিবেচিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সমস্যা যে গভীরে সেই তিমিরেই থাকছে দিনের পর দিন। নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় অনেক বৈষম্যের নিরসন পরিস্থিতির ন্যায্যতা। তাই ছাত্র আন্দোলনে বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রীদের নিঃশর্ত অবদান স্মরণ রাখা উদ্ভূত পরিস্থিতিকে মান্যতা দেওয়া। আন্দোলনত ছাত্রীদের দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে বিশ^বিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা সংকট নিরসনে আশ^স্ত করেন ছাত্রীদের। একটি নতুন ছাত্রী হল নির্মাণের পরিকল্পনাও তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আরও অবহিত করেন চারটি ছাত্রী হলের বর্ধিত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে গৃহীত হয়। বাজেট বরাদ্দ হয়ে প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। নতুন প্রকল্পের অনুমোদন আসলে আরও ৩ হাজার ছাত্রীর আবাসিক সুব্যবস্থা দৃশ্যমান হবে।
তবে তা একটু সময়সাপেক্ষ বিষয়। সেখানে শাহনেওয়াজ হোস্টেল ভেঙে ১৫ তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হল তৈরি ছাড়া বিদ্যমান শামসুন্নাহার হলের ছয় ও দশতলা বিশিষ্ট দুটি সম্প্রসারণ ভবনের সমন্বয়ে আরও একটি ছাত্রী হল নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে। যাতে বেড়ে যাওয়া ছাত্রী সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আবাসন সংকট মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে। প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত কম ছাত্রী হলের দুর্ভোগ নতুন কিছু নয়Ñ বরং বিভিন্ন সময় আর পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবিলায় বহু বাদ-প্রতিবাদ-অভিযোগ এসব নিয়তই বিভিন্ন আন্দোলনের বহুমাত্রিক ধারা। সম্প্রতি বৈষম্যপীড়িত ছাত্র আন্দোলনের সুষ্ঠু পরিণতিতে যে নতুন সরকারের আগমন সেখানে কাঠামোর ভেতরে চেপে বসা হরেক সমস্যাও মাথাচাড়া দিচ্ছে। যেখান থেকে আন্দোলনের উৎপত্তি আর বিকাশই শুধু নয় রীতিমতো অভ্যুত্থানে লাগাতার শাসন ব্যবস্থার পতন সেখান থেকেই আধুনিক বিজয় রথ এগিয়ে যাবে।
ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেন ফেব্রুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবে বঞ্চিত ছাত্রীরা
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×