ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে ভেরন তেলের গাছ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে ভেরন তেলের গাছ

আগের দিনে বেপারীরা গ্রাম থেকে ভেন্না ওজনে কিনে নিয়ে যেত। এখন তাদের আর দেখা মেলে না। ভেন্নার আঞ্চালিক নাম ভেরন। এই ভেন্না গাছের ফল থেকে তেল তৈরি করা হয়। যা ভেরন তেল হিসাবে দক্ষিণাঞ্চলে পরিচিত।

বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের তালিকায় ভেন্না বা ভেরন একটি পরিচিত নাম। ভোজ্যতেল হিসেবে এই ভেন্না তেলের চাহিদা কম ছিল না।  

কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারাতে বসেছে এই ভেন্নার  আবাদ। দাম কম হওয়ায় ভেন্না আমাদের দেশের গরিব মানুষের ভোজ্যতেল হিসেবে পরিচিত। 

এ ছাড়া রোগব্যাধি নিরাময়ে এ তেল ব্যবহার করা হয়। ভেন্নার গাছ জ্বালানি হিসেবে, বাড়ির আঙ্গিনার বেড়া ও সবজির মাচায় ব্যবহার করা যায়। নদী তীরবর্তী এলাকার মাটি ভেন্নার জন্য খুবই উপযোগী। 

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভেন্না চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ অঞ্চল থেকে ভেন্নার আবাদ হারিয়ে যেতে বসেছে। 

সয়াবিন তেলের তুলনায় ভেন্না তেলের পুষ্টিমান কোনো অংশেই কম নয়। উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে সয়াবিন তৈলের ওপর নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে যাবে। 

ভেন্না তেলের অপর নাম ক্যাস্টর ওয়েল বা রেড়ির তেল। ভেন্না গাছ গজানোর পর দেখতে অনেকটা পেপে গাছের মতো। ভেন্না গাছগুলো আট থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। গজানোর সময় কোনো শাখা-প্রশাখা থাকে না। একটু বড় হলে শাখা-প্রশাখায় চারদিক ছড়িয়ে যায়।
ভেন্না বিনা চাষেই বর্ষাকালে গজায় এবং হেমন্ত ও শীতকালে ফুল ও ফল ধরা শুরু করে। অনুকূল পরিবেশ 

পেলে সারা বছরই ফল ধরে। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বোম্বাই ও স্থানীয় জাতের ভেন্নাই আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়।

গাছগুলো সাদা ও লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। ভেন্না ফলের কাঁদিগুলোতে পাক ধরলে হাল্কা কালচে বর্ণের হয়। তখন গাছ থেকে কাঁদিসহ ফল ছাড়িয়ে নিয়ে রোদে শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করা হয়। বীজগুলো ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে সরিষা, তিল অথবা তিসির সাথে মেশিনে ভাঙিয়ে ভোজ্যতেল তৈরি করা যায়। মেশিনে না ভাঙিয়ে পাতিলে পানি নিয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে পাটায় পিষে পুনরায় পানিতে জ্বাল দিয়ে ভেন্নার তেল তৈরি করা হতো। 

আড়াই কেজি ভেন্নার বীজে এক কেজি ভোজ্যতেল হয়। এ তেলে রান্না করা তরকারী সুস্বাদু হয়। গরম ভাতের সাথে খেলে খাবারে রুচি বাড়ে। এ তেল নিয়মিত ব্যবহারে মাথা ঠাণ্ডা থাকে। শরীরের যেকোনো কালো দাগ মিলাতে এ তেল বিশেষ কার্যকরী। 

কৃষি কাজের প্রয়োজনে পুকুর বা ডোবা-নালার নোংরা পচা পানিতে নামার আগে এ তেল শরীরে মেখে নিলে শরীর চুলকায় না এবং জোঁক কামড়ায় না। 

এর কাঁচা বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানে বিশেষ কার্যকর। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগলেও তেল গরম করে বুকে মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়। অনেক জায়গায় রেশম পোকার খাদ্য হিসেবে ভেন্না গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়। 

আমাদের দেশে অবশ্য তুঁত গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়। উন্নত কয়েকটি দেশে ভেন্নার তেল বায়োডিজেল বা বায়োফুয়েল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।  

সাধারণত বর্ষাকালে ভেন্নার চারা গজায়। প্রতি বছর হেমন্ত ও শীতকালে ভেন্নার ফুল-ফল হয়। সবুজ ফলের গায়ে নরম নরম কাঁটা থাকে। কাটা এতোই নরম হয়ে থাকে যে গায়ে ফোঁটে না।

খাদ্যমান, ভেষজ গুণ, সহজ চাষ, খরচ কমসহ নানা দিক বিবেচনা করে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভেন্না হয়ে উঠতে পারে দক্ষিন অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল।

মহি

×