বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন/ছবি : সংগৃহীত
‘জিনিয়াস’,
এই শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনের পর্দায় যে ছবিটি ফুটে ওঠে তিনি বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, যাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ বলা হয়ে থাকে। ১৮৭৯ সালের ১৪ই মার্চ জার্মানিতে জন্ম নেয়া এ মানুষটি প্রথম কথা বলা শুরু করেন চার বছর বয়সে। তার মুখে প্রথম বাক্যটি ছিল ‘সুপটি খুব গরম’।
কিন্তু এতদিন তিনি কেন কথা বলেননি এর কারণ জানতে চাইলে, তিনি নাকি উত্তরে বলেন, এতদিন তো সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। এভাবে দেরিতে কথা বলা এই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন মানবতার এক অনন্য আলোর দিশারী।
আইনস্টাইনের জীবনের কিছু অজানা তথ্য, যার কোনটি হয়তো আপনি আগে জেনে থাকতেও পারেন, আবার অনেকগুলোই হয়তো অজানায় রয়ে গেছে, তার জীবনের এই মূল্যবান গল্পগুলো ও পাঁচটি গোপন উপদেশ বদলে দিতে পারে, আপনার জীবনদৃষ্টি এমনকি আপনার বাকি জীবনটাই।
শুরুতে আইনস্টাইনের জীবনের সেই অজানা তথ্যগুলো জেনে নেই।
বোকা শৈশব :
শৈশবে আইনস্টাইনের কথা বলতে দেরি হচ্ছে দেখে, তার পরিবার ভাবতে শুরু করেছিল, তিনি সম্ভবত বুদ্ধিমান নন। অথচ সেই শিশুটি বড় হয়ে বিজ্ঞানকে এমনভাবে বদলে দিলেন, যা পৃথিবী আজও বিস্ময়ের সঙ্গে স্মরণ করে। তাই সকাল দেখে দিনটি কেমন হবে বলে ধারণা করতে চাওয়া মানুষদের তিনি ভুল প্রমাণ করেছেন, মানুষের ক্ষেত্রে এ ভাবনাটি সঠিক নয়। শৈশব দেখে মানুষকে বিচার করা যাবে না।
গণিতের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার গল্প:
আমরা সাধারণত মনে করে থাকি, যে জিনিয়াস সে জন্ম থেকেই জিনিয়াস। আর আইনস্টাইনের মত মানুষ তো ছোটবেলা থেকেই জিনিয়াস হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, এটা সত্যি নয়। আপনি কি জানেন, আইনস্টাইন ছোটবেলায় গণিতে দুর্বল ছিলেন। তার গণিত শিক্ষক নাকি তাকে এমনও বলেছিলেন, তুমি বড়জোর একজন শিক্ষক হতে পারবে। অথচ সেই মানুষই বড় হয়ে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিখ্যাত সমীকরণ E=Mc2 আবিষ্কার করেন, যা বিজ্ঞানের গতানুগতিক ধারণাকে বদলে দেয় এবং পৃথিবীর বিজ্ঞান চর্চায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। আইনস্টাইন যখন বুঝতে পারেন, গণিত ছাড়া তিনি তার চিন্তাগুলো কাউকে বোঝাতে পারবেন না, তখন তিনি বিষয়টিতে মনোযোগ দেবার সিদ্ধান্ত দেন এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে গণিত চর্চা শুরু করেন। এভাবে একসময় তিনি হয়ে ওঠেন গণিতের অসামান্য প্রতিভাধর। জানা যায়, মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি ক্যালকুলাস শিখে ফেলেছিলেন। আইনস্টাইনের জীবনের এই গল্পটি আমাদের শেখায়, আন্তরিকভাবে চাইলে ও নিরন্তর চেষ্টা করলে, যেকোনো বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠা সম্ভব।
সংগীতের প্রতি ভালোবাসা:
আইনস্টাইনের জীবন শুধু গণিত তার বিজ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি ভায়োলিন বাজাতে খুব ভালোবাসতেন এবং বলতেন যদি আমি বিজ্ঞানী না হতাম, তবে হয়তো একজন সংগীতজ্ঞ হতাম। তিনি একবার মজার ছলে বলেছিলেন, ভায়োলিন বাজানোর সময় আমি সমাধান খুঁজে পাই যা গবেষণাগারে পাই না। তিনি বেহালাকে তার চিন্তার সঙ্গী মনে করতেন। কোন সমস্যার সমাধান খুঁজতে হিমসিম খেলে তিনি বেহালা বাজিয়ে নিজেকে শান্ত করতেন।
জীবনের সরলতা:
আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন, জীবনকে সহজ করে তুলুন কারণ সরল জীবনেই প্রকৃত সুখ। তিনি পোশাক নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। প্রায়ই একই ধরনের পোশাক পড়তেন। জুতো নিয়ে তিনি একদমই চিন্তা করতেন না। একবার তিনি বলেছিলেন, জুতো নিয়ে চিন্তা করাটা সময়ের অপচয়।
আইনস্টাইনের প্রথম চাকরি:
বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জনের আগে আইনস্টাইন, সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরের পেটেন্ট অফিসে একজন ক্লার্ক হিসেবে কাজ করতেন। অফিসের ফাইলগুলো যাচাই করার ফাঁকে, তিনি তার মনের গভীরে বিজ্ঞানের নতুন ধারণাগুলো লালন করতেন। পরবর্তীতে তিনি মজা করে বলতেন, পেটেন্ট অফিসে কাজের এক ঘেমই আমাকে সৃষ্টিশীল করে তুলেছে।
নোবেল পুরস্কারের গল্প:
যদিও আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য তিনি বিখ্যাত, তবে নোবেল পুরস্কারটি তিনি পেয়েছিলেন আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার জন্য। পুরস্কার নেয়ার সময় আইনস্টাইন বলেছিলেন, আপেক্ষিক তত্ত্ব বুঝতে সবাই অনেক সময় নেবে কিন্তু ততদিনে এটা পৃথিবী বদলে দেবে।
ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ প্রত্যাখ্যান:
১৯৫২ সালে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে, আইনস্টাইন বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তার যুক্তি ছিল, রাজনীতির চেয়ে বিজ্ঞানের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা বেশি।
পাসপোর্ট হারানোর গল্প:
একবার আইনস্টাইন তার পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন। তাই হোটেলে ওঠার সময় পাসপোর্টের বদলে, তিনি বিলের পেছনে নিজে সই করে বলেছিলেন, আমার নামই আমার পরিচয়। তার সরলতা আমাদের জন্য একটা বড় শিক্ষা।
ট্রেনের টিকিট হারানোর গল্প:
একবার আইনস্টাইন ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন। যখন টিটি এসে তার কাছে টিকিট চাইলেন, তিনি টিকিট খুঁজতে লাগলেন। তার পকেট, ব্যাগ সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজেও, তিনি টিকিটটি পেলেন না। টিটি তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, স্যার, চিন্তা করবেন না, আমি আপনাকে চিনি।
আপনি অবশ্যই টিকেট কেটেছেন, তবুও আইনস্টাইন খুঁজতে থাকেন। অবশেষে টিটি আবার এসে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এত খুঁজছেন কেন, স্যার? আইনস্টাইন মৃদু হেসে বললেন, আমি জানি, আমি টিকিট কেটেছি কিন্তু টিকিট না পেলে আমি জানবো কিভাবে, যে কোথায় যাচ্ছি?
সরল ও রসবোধ সম্পন্ন মানুষ:
আইনস্টাইনের বিখ্যাত জিহ্বা বের করা এই ছবিটি কখন কিভাবে তোলা হয়েছিল এই নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে। আর তার মত একজন মহাজ্ঞানী মানুষ, তিনি নিশ্চয়ই খুব হ্রাসভারী ভাব নিয়ে থাকবেন, এমনই ধারণা অনেকের। কিন্তু না, অত্যন্ত রসবোধ সম্পন্ন মানুষ ছিলেন।
ছবির এই ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৫১ সালে তার ৭২ তম জন্মদিনে। এইদিন সাংবাদিকরা তার ছবি তুলতে ভিড় করেছিলেন। অসংখ্য ছবি তোলার পর, এক পর্যায়ে আইনস্টাইন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। আর তখন মজা করে তিনি একবার এইভাবে জিহ্বা বের করে দিয়েছিলেন। আর এই অনন্য মুহূর্তের ছবিটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠলো, এটি তার সরলতা ও রসবোধের প্রতীক হয়ে রয়েছে।
কল্পনার শক্তি:
আইনস্টাইন বলতেন কল্পনা জ্ঞানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞান সীমিত, কল্পনা জগৎজুড়ে বিস্তৃত। তার আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রমাণ করে যে, বাস্তব সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথমে কল্পনা করতে জানতে হয়। তার এই দর্শন বিজ্ঞানকে আজকের পর্যায়ে এনেছে।
যে ডিভাইসটিতে আপনি এই তথ্য পড়ছেন, সেটা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার কিংবা টেলিভিশন, এমনকি ঘরবাড়ি, বিমান, রকেট, মানুষের তৈরি যা কিছু আছে, এর সবই প্রথমে কেউ কল্পনা করেছেন। সেই কল্পনায় বিশ্বাস রেখে, তাকে বাস্তব করে তুলতে কাজ করেছেন এবং পরে তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এভাবে এমন অনেক কিছুই ভবিষ্যতে হতে চলেছে, যা হয়তো এখনো কারো কল্পনায় রয়েছে বা ভবিষ্যতের মানুষ কল্পনা করবে। তাই আইনস্টাইন প্রথম, কল্পনার শক্তিকে এইভাবে তুলে ধরে আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছেন,কল্পনা জ্ঞানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এই শক্তি মানুষকে অনন্য করেছে। আমাদের সবার জীবনেই আমরা এই কল্পনাশক্তির প্রয়োগ করছি জেনে বা না জেনে। আমাদের ব্যক্তিজীবনের যেকোনো সমস্যার সমাধানে, আমরা এই কল্পনাশক্তিকে, আরো সচেতনভাবে ব্যবহার করে জীবনকে আরো সফল করে তুলতে পারি।
পরমাণু বোমা ও আইনস্টাইনের অনুশোচনা:
আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E=Mc2 পরমাণু শক্তির যে তত্ত্ব তার ভিত্তি স্থাপন করেছে। যা পরমাণু বোমা আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও তিনি সরাসরি পরমাণু বোমার প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন না, কিন্তু তবুও তার লেখা একটি চিঠি এই প্রকল্পের সূচনা করেছিল।
১৯৩৯ সালে বিজ্ঞানী লিও সিলার্ড আইনস্টাইনকে অনুরোধ করেন, জার্মানির পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট এর কাছে একটি চিঠি লেখার জন্য। পরে আইনস্টাইন এই চিঠিটি লিখেছিলেন এবং এর ফলে ম্যানহাটন প্রজেক্ট শুরু হয়, যা পরমাণু বোমা তৈরির কাজকে ত্বরান্বিত করে।
১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ব্যবহার করা হলে আইনস্টাইন গভীর অনুশোচনায় ভুগতে থাকেন। তিনি বলেন, যদি জানতাম, জার্মানি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে ব্যর্থ হবে তাহলে আমি কখনোই সেই চিঠি লিখতাম না। তিনি পরবর্তী জীবনে পরমাণু অস্ত্রের বিপক্ষে এবং বিশ্বশান্তির পক্ষে কাজ করেন। এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে, বিজ্ঞানের শক্তি যত বিশাল, একজন বিজ্ঞানীর নৈতিক দায়বদ্ধতাও ঠিক ততটাই গভীর হওয়া দরকার, আর এর ব্যবহারের নৈতিকতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সমান গুরুত্বপূর্ণ।
অপারেশনে রাজি না হওয়ার গল্প:
১৯৫৫ সালে আইনস্টাইনের শরীরের প্রধান ধমনীতে একটি মারাত্মক অ্যানিউরিজম ধরা পড়ে। এটি মূলত ধমনীতে এমন একটি ফুলে ওঠা অংশ, যা দুর্বল হয়ে রক্ত প্রবাহের চাপে ফেটে রোগীর তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে।
চিকিৎসকরা তাকে অপারেশনের প্রস্তাব দিলে, তিনি তার সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, আমি কৃত্রিমভাবে বেঁচে থাকতে চাই না। প্রকৃতি যা চায় তাই ঘটুক। এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি বলেছিলেন, আমি আমার জীবনে যা করার ছিল তা করেছি। এখন মৃত্যুকে তার কাজটি করতে দিন। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল, ৭৬ বছর বয়সে বিশ্ববরেণ্য এ বিজ্ঞানী এইভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নেন।
শেষ কথার অজানা রহস্য, ১৯৫৫ সালে মৃত্যুসজ্জায় থাকা অবস্থায় তিনি শেষ কথাগুলো বলেছিলেন জার্মান ভাষায়, যা তার পাশে থাকা নার্স বুঝতে পারেননি। তাই এই কথাগুলো আজও রহস্যই রয়ে গেছে।
আইনস্টাইনের জীবনের গল্পগুলো আমাদের বলে দেয় যে, সাফল্যের চাবিকাঠি শুধু মেধা নয় বরং নিরন্তর প্রচেষ্টা, জীবনকে ভালোবাসা, এবং নতুন কিছু শেখার জন্যে নিজেকে প্রস্তুত রাখার মধ্যেই রয়েছে।
আইনস্টাইনের মতে পাঁচটি বিষয় কখনো অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়। কিছু বিষয় মানুষের সঙ্গে শেয়ার করা যেতে পারে কিন্তু কিছু বিষয় সবসময় গোপন রাখা উচিত, তা যত কাছের মানুষই হোক না কেন।
আলবার্ট আইনস্টাইনের মতে, সেই পাঁচটি বিষয় কি তা জেনে নেই, যা কখনোই অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়।
১. আপনার সাফল্যের রহস্য:
আপনার সাফল্যের গোপন রহস্য কখনো কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এর মানে এই নয় যে আপনি আপনার সাফল্য নিয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন না। তবে আপনার সাফল্যের প্রতিটি গোপন কথা, সবার সাথে শেয়ার করাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এই পৃথিবীতে আমরা জানিনা, আসলে কোন মানুষ কেমন। কিছু ভালো মানুষ অবশ্যই আছে কিন্তু সকলে নয়। স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন। তবে কিভাবে এবং কোন বিষয়গুলো আপনার সাফল্যে অবদান রাখছে, তা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি যদি কাউকে আপনার সাফল্যের রহস্য বলেন, তারাও তাই করার চেষ্টা করবে কিন্তু যদি তারা ব্যর্থ হয়, তবে তারা আপনাকে সত্য না বলার জন্য অভিযুক্ত করবে। তাই আপনার সাফল্যের রহস্য কখনো কাউকে বলবেন না।
২. আপনার সমস্যাগুলো অন্য কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না:
সমস্যাগুলো শেয়ার করলে আমাদের কিছুটা ভারমুক্ত মনে হয় ও হালকা লাগে। তবে অনেক ক্ষেত্রে এটা সমাধানের বদলে বরং সমস্যাকেই বাড়িয়ে তোলে। যখন আপনি আপনার সমস্যা অন্যের সাথে শেয়ার করতে যান, তখন আপনি নিজেকে অন্যদের উদ্দেশ্যমূলক গসিপের উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। অনেকেই আপনার সমস্যাগুলোকে পাত্তা দেয় না বরং খুশি হয় যে আপনি সমস্যায় আছেন। সেরা কাজ হলো নিজের সমস্যার সমাধান নিজেই খুঁজে বের করা,অন্যের কাছে নিজেকে উন্মুক্ত না করে।
প্রকৃতপক্ষে ৭০ শতাংশ মানুষ আপনার সমস্যায় আনন্দিত হয়, আর মাত্র ১০ শতাংশ সত্যিই গুরুত্ব দেয়। তাই সমস্যাগুলো শেয়ার করার আগে দুইবার ভাবুন, যতই বিশ্বাসযোগ্য মনে হোক না কেন, আপনার সমস্যাগুলো নিজের কাছে গোপন রাখুন। যদি প্রয়োজন হয় শুধুমাত্র পেশাদার পরামর্শ এবং সাহায্যের জন্য আপনার ডাক্তার, থেরাপিস্ট বা কোন পেশাদার ব্যক্তির সাথে শেয়ার করতে পারেন।
৩. আপনার স্বপ্নগুলো শেয়ার করবেন না:
আপনার স্বপ্নগুলো কখনোই কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না। যদি আপনি ইতোমধ্যেই আপনার জীবনের লক্ষ্য এবং আপনার স্বপ্নগুলো ঠিক করে থাকেন, তবে সেগুলো নিজের কাছে রাখাই ভালো। কারণ সেগুলো শেয়ার করলে তা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি এবং আপনার উদ্দেশ্যকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এতে আপনি আটকে যেতে পারেন। সবার কাছ থেকে একই মতামত বা পরামর্শ আশা করতে পারেন না, কারণ প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।
আপনার স্বপ্ন অনেকের কাছে মজার বা মূল্যহীন মনে হতে পারে। আপনি হয়তো আলো দেখতে পাচ্ছেন অথচ তারা অন্ধকারে দেখছে। প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তাই সবাই আপনার সাথে একমত হবে না। কিন্তু এটা কোন সমস্যা নয়, এটাকে নিজের কাছে রাখুন এবং বাস্তবে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কাজ করুন।
৪. আপনার আয়ের পরিমাণ কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না:
আপনার আয় কত, তা কখনো কারো সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। আপনার আয়ের ব্যাপারে অন্যদের জানা উচিত নয়। যদি আপনার আয় এবং আর্থিক বিষয়গুলো সবাইকে জানাতে থাকেন, তাহলে শীঘ্রই আপনার জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদ্বেষ তৈরি হবে। আপনার আয় এবং ব্যক্তিগত অর্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলো শুধুমাত্র আপনার মধ্যে থাকা উচিত। যদি অর্থ নিয়ে পরামর্শের প্রয়োজন হয়, তবে সঠিক কর্তৃপক্ষের কাছে যান, বন্ধুর কাছে নয়।
৫. আপনার পারিবারিক সমস্যাগুলো কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না:
পারিবারিক সমস্যাগুলো কখনোই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়। কোন পরিবারই সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। কিছু পরিবারের বড় সমস্যা আছে, তো কিছু পরিবারের ছোট। তবে পারিবারিক সমস্যা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করলে, সমস্যা আরো জটিল হয়।
এটাকে পারিবারিক সমস্যা বলা হয়ে থাকে, তাই এটা পরিবার ও এর সদস্যদের মধ্যেই থাকা উচিত। কোন তৃতীয় পক্ষ এতে অংশ নিতে পারবে না। প্রত্যেক পরিবারে কিছু আলাদা আলাদা সমস্যা রয়েছে। কিন্তু যদি আপনার সমস্যা খুব বড় বলে মনে হয়, তাহলে অন্যরা তাদের নিজেদের সমস্যা ভুলে, আপনার সমস্যাটিকে নিয়ে গসিপ শুরু করে দেবে। মোট কথা হলো, অনেক বিষয় ব্যক্তিগত রাখতে হবে।
কিন্তু এই পাঁচটি বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যদি এগুলো গোপন রাখতে পারেন তাহলে অন্যান্য বিষয়গুলো ঠিক হয়ে যাবে।
মো. মহিউদ্দিন