ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

ডেমরায় মাদকের কারবার 

কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডবে  এলাকাবাসীর নাভিশ্বাস

নিজস্ব সংবাদদাতা, ডেমরা, ঢাকা

প্রকাশিত: ২২:৫১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

কিশোর গ্যাংয়ের তান্ডবে  এলাকাবাসীর নাভিশ্বাস

.

ঢাকার ডেমরা এলাকায় কিশোর গ্যাং ও মাদক কারবারের তান্ডবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা অপরাধীরা এখন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এক কিশোর গ্যাং এলাকায় ভীতি ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই কিশোর গ্যাং তাদের অপরাধমূলক কর্মকা-ের সূচনা করে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে। তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আমলে একাধিক মামলা থাকলেও বর্তমানে রাজনৈতিক পরিচয় বদলে বিএনপির নাম ব্যবহার করে একই ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। 
জানা যায়, শিমরাইল মশারি মিলের শ্রমিকদের বেতন লুট, বাঘমারার মেহেদী, হাজীনগরের সাগর ও সোহেলসহ একাধিক যুবকের ওপর নির্যাতন চালিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া এবং ডিসেম্বরের শেষদিকে রাকিব নামে এক তরুণকে তার বাড়ি থেকে ডেকে এনে তার মাকেসহ মারধর করে টাকা আদায়ের মতো ঘটনা ঘটেছে। ৩০ ডিসেম্বর নুরুল ইসলামের বাড়িতে রামদা, ছুরি ও লাঠি নিয়ে আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি তার পরিবারের সকলকে মেরে ফেলার হুমকি  দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া, তারা মোটরসাইকেলে করে গলাকাটাপুল, চিটাগাং রোড ও কাঁচপুর এলাকায় নিয়মিত ছিনতাই চালায়। ৬৭নং ওয়ার্ডের এলাকাগুলোতেও তারা ছিনতাই চালিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। পথচারী, শ্রমজীবী মানুষ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত তাদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। তাদের অপরাধের আরেকটি ভয়াবহ দিক হচ্ছে মাদক ব্যবসা। ৬৭ ও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে মাদক সরবরাহ করে কিশোরদের মাদকাসক্ত করে তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বাবুল ও তার ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। 
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই কিশোর গ্যাং দিনের বেলায়ও প্রকাশ্যে লুটপাট ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। মুদি দোকানদার জোবায়েদের (ছদ্ম নাম) দোকান থেকে প্রতিনিয়ত পণ্য নিয়ে যায় এবং টাকা চাওয়ায় তাকে নির্মমভাবে মারধর করে গুরুতর আহত করে।  মো. মহিউদ্দিনের অনুপস্থিতিতে তার বাড়ির গেট, জানালা-দরজা এমনকি টিনের চাল পর্যন্ত খুলে বিক্রি করে দেয়।  মো. মনির হোসেন নামের একজন বাসিন্দা জানান, তিনি এক রাতে বাড়ি ফেরার পথে দেখেন,  তারা এক যুবককে নির্মমভাবে মারধর করছে। তিনি প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। শারমিন আক্তার জানিয়েছেন, তার ঘরের জানালা দিয়ে দেখতে পান এক মহিলার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করছে। এসব ঘটনার ফলে বাসিন্দারা এখন ঘর থেকে বের হতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছেন। তাদের অপরাধের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা এলাকার মানুষের জন্য এক অমানবিক জীবনযাত্রার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাধীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। এলাকাবাসী দ্রুত এই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান জানান, কিশোর গ্যাং ও মাদকের বিরুদ্ধে তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন এবং এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। মাদক ব্যবসায়ী ও সরবরাহ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপের তথ্য প্রদান করে জনগণ পুলিশের সহযোগী হতে পারে। ডেমরাকে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই অভিযানগুলো পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

×