ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনাচরণ

হারিয়ে যাচ্ছে শতবর্ষী সংস্কৃতি, অনেকেই  শিক্ষা থেকে বঞ্চিত

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার  

প্রকাশিত: ২১:৪২, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে শতবর্ষী সংস্কৃতি, অনেকেই  শিক্ষা থেকে বঞ্চিত

.

পাহাড়-নদী-সাগর-বন্দর সবমিলে এক অনন্য ভূমি এই পর্যটন জেলা  কক্সবাজার-যেখানে একদা আদিবাসীদেরই কণ্ঠধ্বনি এই ভূ-খন্ডের আকাশে বাতাসে প্রথম ধ্বনিত হয়েছিল। আজ সব কিছু হারিয়ে গেছে। নেই শত বছরের পুরনো বৌদ্ধ বিহার। পেগোন্ডা বা জাদিসহ হাজার বছরের পুরনো তালপাতা দিয়ে লেখাগুলো নষ্ট হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো রক্ষা বা সংস্কার মেরামত করা হলে হাজার বছরের কক্সবাজার ইতিহাসে লেখা থাকত বলে মনে করেন উপজাতি নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, এগুলো রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আদিবাসী ফোরাম নেতৃবৃন্দ বলেন, কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ বিহার, জাদি, তালপাতাগুলো সংরক্ষণ করে পর্যটন শিল্পকেও এগিয়ে নিতে পারে। রাখাইন আদিবাসীরা শিক্ষিত হলেও সরকারি চাকরি নেই বললে চলে। আবার চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, মারমা আদিবাসীদের বাস দুর্গম এলাকায় হওয়ায় শত শত বছর ধরে তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আদিবাসীদের আর্থিক অসচ্ছলতা, ভাষাগত সমস্যা মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব সচেতনতার অভাব বাংলাদেশের আদিবাসী নারী হিসেবে আরও বেশি নির্যাতিত। আদিবাসী নারীদেরও একই চিত্র অনেক সময় প্রকাশ হয় না। আদিবাসী নারীদের অধিকার ও মানবাধিকারে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন নেতৃবৃন্দ।
ভূমিহীন আদিবাসীদের অবস্থা আরও করুণ। উখিয়া ও টেকনাফে চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা আদিবাসীরা বনভূমিতে শত শত বছর যাবৎ বসাবাস করছে অথচ তাদের কোনো ভূমির মালিকানা নেই। তাই যে কোনো সময়ে উচ্ছেদ হতে পারে। ভূমি আইনে ১৯৫০ সনে ৯৭ ধারা উল্লেখ রয়েছে আদিবাসীদের ভূমি যদি কোনো আদিবাসী ভূমি মালিক স্বেচ্ছায় তার জমি বা জমির কোনো অংশ আদিবাসী কোনো ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করতে চাইলে হস্তাস্তরের অনুমতি চেয়ে তাকে রেভিনিউ অফিসারের নিকট আবেদন করতে হবে। আদিবাসী ভূমি অ-আদিবাসীর নিকট বিক্রি বা হস্তাস্তর করা যাবে না। তাই আদিবাসী ফোরাম মনে করে সমতলে আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা জরুরি। আর যেগুলো বৌদ্ধ বিহার দখলে রয়েছে সেগুলো অবৈধ দখলদার থেকে উচ্ছেদ পূর্বক ভূমিগুলো ফেরত প্রদানের দাবি জানান তারা।
পুরো কক্সবাজারে আদিবাসীদের জীবন মানে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। তাদের উপার্জনের তেমন কোনো কর্মের নিশ্চয়তা নেই। তারা যখন যা পান তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য কর্মজীবন নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন আদিবাসী নেতারা। গ্রামের শিক্ষার হার আগের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে তাদের অনেকে চাকরি পায়নি। আবার অনেকে পরিশ্রম করে পড়া লেখা চালিয়ে যাচ্ছে, বিগত ৭-৮ বছর পূর্বে এই গ্রামে মাধ্যমিক পাস করার মতো কেউ ছিল না। কিন্তু এখন অর্ধেক পরিবারের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন হলেও আছে। এই নিয়ে অল্পতে হলেও গর্ব করে বলতে পারছেন আদিবাসীরা।  
 

×