ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

শরিফ ভাত না খেয়ে তিন যুগ

প্রকাশিত: ১৯:৪৩, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

শরিফ ভাত না খেয়ে তিন যুগ

শরিফ

বাংলাদেশে জন্ম নিয়েও বাঙালির  খাদ্যাভ্যাসের  থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে আলাদা রেখেছেন শাহজাদপুরের শরিফ। প্রায় ৩ যুগের জীবনে একবারের জন্যও মুখে দেননি ভাত। এত দীর্ঘ সময় এমন সুস্বাদু খাবার মুখে না তুললেও সুন্দরভাবেই বেঁচে আছেন তিনি।  শরিফ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের মৃত রজব আলী মোল্লার সন্তান। ১০ বছর আগে  বিয়ে করেছেন তিনি।  বর্তমানে এক কন্যা এবং এক ছেলের জনক শরিফ। ব্যাটারিচালিত অটোবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। শরিফের পরিবার জানায়, মায়ের বুকের দুধ ছাড়ার আগে মাত্র ৬ মাস বয়সে শরিফের মুখে ভাত তুলে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন মা। কিন্তু সেই অবুঝ শিশুই উগ্রে দিয়েছিল ভাত। এরপর যতবারই চেষ্টা করা হয়েছে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে কেবল। তাই সুস্বাদু ভাত-মাছের স্বাদ কেমন তা জানেন না শরিফ। এখন প্রতিদিন তার খাবারের তালিকায় থাকে রুটি এবং সঙ্গে সবজি ভাজি। মাঝে মাঝে রুটির সঙ্গে ভাজির পাশাপাশি ডিম কিংবা মাংস থাকে। তবে রুটির বিপরীতে কখনই ভাত কিংবা অন্য কোনো খাবার শরিফের প্লেটে জায়গা করে নিতে পারেনি। এদিকে তার এই খাদ্যাভ্যাস দেখে বিস্মিত স্থানীয়রা। ভাত না খেয়েও বাঙালি বেঁচে থাকতে পারে তার জীবন্ত উদাহরণ দেখতে অনেকেই শরিফের বাড়িতে ভিড় জমান। এমনকি শরিফের নামের চেয়ে বিশেষণ বললেই চেনে সকলে। এলাকায় ‘রুটি’ নামেই বেশি পরিচিত তিনি। কিছুটা লাজুক প্রকৃতির এই শরিফকে  মানুষজন ‘রুটি’ নামে ডাকলেও বিব্রত হন না কখনো। এ বিষয়ে শরিফের মা সাবেয়া বেগম বলেন,  শরিফ তার দুই ছেলের মধ্যে ছোট। জন্মের পর ছয়-সাত মাস বুকের দুধ পান করেছে সে। এরপর তাকে ভাত নরম করে মুখে দিলে বমি করে ফেলে দিত। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর আটার রুটি বানিয়ে মুখে দিলে তা খেতে শুরু করে। সেই যে শুরু হলো আটার রুটি খাওয়া যা আজও চলছে।  তিনি আরও বলেন, ছেলের এই অভ্যাসের জন্য কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে রুটি বানিয়ে নিয়ে যেতে হতো। কোনো দাওয়াতে গেলে শরিফের জন্য আলাদা করে রুটি বানিয়ে দেয় সেই বাড়ির মানুষেরা। এই ৩৫ বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। সবচেয়ে বড় কথা শরিফকে বিয়ে করানোর সময় বৌকে রুটি বানিয়ে দেওওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।
সৈয়দ হুমায়ুন পারভেজ শাব্বির
শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ

×