ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

সব মানুষের ভালো লাগার পার্ক

শামীম রায়হান, দাউদকান্দি

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

সব মানুষের ভালো লাগার পার্ক

শহীদ রিফাদ শিশু পার্ক

‘পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র বলতেই দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতীসহ নানা বয়সের মানুষের আগমন ও বিচরণ ঘটে সেখানে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে পার্ক, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট ও হোটেল মোটেল। অবসর সময় ও অবকাশ যাপনের জন্য মানুষ অধিক পরিমাণে গমন করছে এস স্থানে। আর এসব স্থানে ঘটছে, অপ্রীতিকর ঘটনা, নগ্নতা, নোংরামি, অশ্লীলতা, যৌন হয়রানি, চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। বর্তমানে পরিবারের সকল সদস্য নিয়ে পার্কে যাওয়া অসম্ভব। কারণ, অশ্লীলতা ও সামাজিক অবক্ষয় অধিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু এর উল্টো দাউদকান্দি পৌর সদরের শহীদ রিফাত শিশু পার্ক।
সেখানে যে কোনো বয়সের মানুষ প্রাণ খুলে হাঁটা-চলা করতে পারছেন। ইচ্ছামতো ছবি তুলতে পারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ধরে গল্প ও সময় কাটাচ্ছে নিঃসঙ্কোচে। কোনো ধরনের অশ্লীলতা নেই বললেই চলে। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পৌর সদরে অবস্থিত উপজেলাবাসীর বিনোদন ও একটু অবসর সময় কাটানোর একমাত্র স্থান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শহীদ রিফাতের নামে নামকরণকৃত ‘শহীদ রিফাত শিশু পার্ক’।
দাউদকান্দি মডেল থানার সামনে অবস্থিত সবার জন্য উন্মুক্ত এই পার্কে রয়েছে, নান্দনিক নামফলক, প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে আল্লাহর ৯৯ নাম খচিত আল্লাহ টাওয়ার। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে, সুপেয় পানি। আধুনিক শৌচাগার, অজু ও নামাজের স্থান।
এ ছাড়া ভাইরাল ছবি তোলার জন্য ‘আই লাভ মুহাম্মদ (সা),’ আই লাভ দাউদকান্দি, নির্মাণাধীন পাঠাগার, স্টিট লাইব্রেরি, মৃত ব্যক্তির জানাজার জন্য নির্ধারিত স্থান, ওয়াকওয়ে, বড় বড় নারিকেল গাছ, সুপরিকল্পিত সুপারি বাগান, ফুল ও পাতাবাহারি গাছ। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে, দোলনাসহ নানা খেলাধুলার আইটেম, ব্যাডমিন্টন- ভলিবল খেলার মাঠ ও সারিবদ্ধ ফুচকা-চটপটির দোকান।
পার্কের এক পাশে নির্মাণ করা হয়েছে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শহীদ বাবুর নামে ‘শহীদ বাবু মুক্ত মঞ্চ’। এ ছাড়াও দর্শনার্থীদের অধিক নিরাপত্তার জন্য পুরো পার্কটিকে সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা হয়েছে। গোমতী নদীর তীর ঘেঁষা। উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে জ্বল জ্বল করছে মহান আল্লাহর ৯৯টি নামের একমাত্র ভাস্কর্যটি। ৩০ ফুট উচ্চতার এই স্তম্ভটিতে সর্ব উপরে আল্লাহর নাম। এর নিচে একটি ঘড়ি। তার নিচে সারিবদ্ধভাবে টাইলসে লিপিবদ্ধ স্তম্ভের চারপাশে বসানো হয়েছে মহান আল্লাহর ৯৯টি নাম। আরবী হরফের পাশাপাশি বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ রয়েছে। এ ছাড়াও ৩০ ফুট উচ্চতার দৃষ্টিনন্দন স্তম্ভের চূড়ায় বসানো হয়েছে ৪টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইট। চতুরদিকে রয়েছে  বিভিন্ন রঙের লাইট। নিচের গোলাকার বৃত্তের রয়েছে ঝরনা, ফুয়ারা ও ফুল বাগান। যা এর সৌন্দর্য আরও ফুটিয়ে তুলেছে।
সরেজমিন, দাউদকান্দি পৌর সদরের শহীদ রিফাত শিশু পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, আল্লাহর ৯৯ নামসহ স্তম্ভটি দেখতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। অন্যান্য স্থাপনা থাকলেও আল্লাহ টাওয়ারটিই প্রধান আকর্ষণ। নানা রঙের বৈদ্যুতিক লাইটের আলোকসজ্জায় সাজানো ভাস্কর্যটি সন্ধ্যার পর বাড়তি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এ ছাড়াও সন্ধ্যার পর থেকে প্রধান ফটকের ওপরে এলইডি স্কিন মনিটরের মাধ্যমে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী স্থান, সচেতনতা বার্তা ও বিভিন্ন ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। বিকেলের অবসরে উপজেলাবাসীসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত দর্শনার্থীরা এর সৌন্দর্য ও স্থাপত্য উপভোগ করে। আর এই সকল উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবিক দাউদকান্দি সংগঠনের তত্ত্বাবধানে’। পার্কে আগত দর্শনার্থী হাসানপুর শহীদ নজরুল সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার ও মেহেরুননেছা মীম বলেন, আজ কলেজ বন্ধ। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। এখানে আসলে ভালো লাগে। অশ্লীলতামুক্ত নিরাপদ একটি জায়গা। ড. মোশাররফ হোসেন কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, সানজিদা ইসলাম, তিথি, অধরা ও সাবিহা বলেন, এখানে আমরা প্রথম এলাম। ভালো লেগেছে।
মানবিক দাউদকান্দি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক রুবেল বলেন, পার্ক মানেই প্রশান্তিময় জায়গা। এই কথার যথার্থতাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি বিভিন্ন স্থাপনার মাধ্যমে। আগামী প্রজন্মকে মাদক, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার বিপরীতে ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করতেই এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এখানে কোনো ধরনের অশ্লীলতার স্থান নেই। সকল বয়সের মানুষের জন্য ভালো লাগার একটা জায়গা হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
মানবিক দাউদকান্দি সংগঠনের সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর খন্দকার বিল্লাল হোসেন (সুমন) বলেন, ৫ আগস্টের পর উপজেলাবাসীর একমাত্র বিনোদন কেন্দ্রটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করি। আন্দোলনে নিহত দুই শহীদের স্মৃতি তুলে ধরতে এবং তাদের স্মরণীয় করে রাখতে প্রথম শহীদ রিফাতের নামে পার্কটি নামকরণ করি এবং দ্বিতীয় শহীদ বাবুর নামে ‘শহীদ বাবু মুক্ত মঞ্চ’ নির্মাণ করা হয়। সকল ধরনের নোংরামি ও অশ্লীলতামুক্ত পার্কটিতে সকল বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ অবাধে প্রবেশ করতে পারে। দাউদকান্দি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুনায়েত চৌধুরী বলেন, পার্কটি থানার সামনে অবস্থিত। এখানে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আমরা সোচ্চার। এটার পরিবেশ ভালো।

×