ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

হার মানতে রাজি নয় মৃৎশিল্পীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

হার মানতে রাজি নয় মৃৎশিল্পীরা

ছবি - জনকণ্ঠ

হার মানতে রাজি নয় সুতাং কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। তারা হারাতে দেবে না তাদের আদিপেশাকে। হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় এই সুতাং কুমারপাড়া। একসময় পুরো পাড়াটাতেই মৃৎ শিল্পের জয়জয়কার ছিল। নানা কারণে হারিয়ে যায় সে জৌলুষ। তারপরও হাল ছাড়েননি, ধরে রেখেছেন পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী আদিপেশা।


যারা আজও এ পেশায় নিজেদের আকঁড়ে রেখেছেন, তারা পুরনো ধ্যান-ধারণার সঙ্গে বর্তমানকে সমন্বয় করে শিল্পটিকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সুতাং কুমারদের এই প্রচেষ্টায় কেউ সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন না। তারপরও হারানো মৃৎশিল্পে আশার আলো দেখতে কাজ করছেন সুতাং কুমারপাড়ার লোকজন। কিন্তু এগোতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এ পাড়ায় মৃৎশিল্পের শুরুটা প্রায় শতবছর পূর্বে। শুরুতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি পরিবার এ শিল্পে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে ৭টি পরিবার এ শিল্প নিয়োজিত রয়েছে। এ শিল্পর মন্দাভাবে বাকীরা অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। বিষয়টি জেনেও কেউ এগিয়ে আসছে না।

এ কারণে বর্তমানে নিয়োজিত মৃৎশিল্পের কারিগরদের মনে অনেক কষ্ট। তাদের দুঃখ কষ্টের কথা শুনার কেউ নেই, এমনটাই মনে করছেন তারা। তারা পাচ্ছে না প্রশিক্ষণ। পাচ্ছেন না আর্থিক সহযোগীতা। এ শিল্পের জন্য উপকরণের দাম বেড়েছে। সে তুলনায় বাড়েনি তাদের উৎপাদিত জিনিসের দাম। তাপরও তারা বসে নেই। 

হাঁড়ি, পাতিল, টব, ব্যাংক, খেলনাসহ নানা ধরনের মাটির জিনিসপত্র তৈরি করছেন। এই কুমারপাড়ার পাশ দিয়ে চলে গেছে সুতাং নদী। এ পাড়ায় প্রায় শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। এ শিল্পে নানা সমস্যা দেখা দিলেও অনেক পরিবার পেশা পাল্টান।

এর মধ্যে মাত্র ৭টি পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। যারা জড়িত তাদের বিশ্বাস এখনও মাটির তৈরি জিনিসের কদর রয়েছে। এ কারণে তারা এ শিল্পে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছে। 


কুমারপাড়ার বাসিন্দা শ্যামা সুন্দর পাল, প্রিয়বাসী পাল, সুভাষ পাল, মনি রাণী পাল, অমূল্য পাল এরা বলেন আমাদের আদি পেশা মৃৎশিল্প। এটিকে আমরা আরও এগিয়ে নিতে চাই। এ শিল্পটিকে গড়তে চাই আধুনিকভাবে। এ চেষ্টায় সফল হতে পারব বলে আমরা আশাবাদী। এজন্য চাই সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগীতা ও প্রশিক্ষণ। 


শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পল্লব হোম দাস বলেন, সুতাংয়ের মৃৎশিল্পটি প্রাচীন। এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আমরা তাদের পাশে আছি। তারাও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ পাড়ায় মাটির জিনিস তৈরি হচ্ছে। তাদের তৈরি এ মালামাল জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আর্থিক অনুদান প্রদান করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, সবাই মিলে এ শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে। শিল্পটিকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
 

মনিষা মিম

×