অমর একুশে বইমেলা সামনে রেখে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। থেমে নেই আলোচনা সমালোচনাও
অমর একুশে বইমেলার সময়টি আসন্ন। প্রতিবছরের মতো এবারও ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে মেলা শুরু হবে। মাসব্যাপী এই আয়োজন লেখক পাঠক প্রকাশকদের মিলনমেলা হিসেবে পরিচিত। শুধু বই নিয়ে মেতে থাকা নয়, এ সময় বাঙালি সংস্কৃতির বিস্ময়কর জাগরণ ঘটে। সরকারি আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই সাধারণত কাজ করে থাকে। তবে এবার সময়টা সাধারণ সময়ের মতো নয়।
অচেনা। অস্থির। প্রতি মুহূর্তে কত কী যে ঘটে চলেছে! এসবের প্রভাব থেকে মেলাকে মুক্ত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে একাডেমির জন্য। সরকার পরিবর্তনের পর নানাবিধ পরিবর্তন আমরা দেখেছি। এখনো দেখছি। অনুমান করা যায়, বইমেলার বেলায়ও কিছু না কিছু পরিবর্তন আসবে। আসাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু পরিবর্তন হতে হবে ইতিবাচক। তা কি হচ্ছে? উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি কথা বলেছি দীর্ঘকাল ধরে প্রকাশনায় অবদান রাখা কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের সঙ্গে।
তারা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গুটিকয়েক সুযোগসন্ধানী মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। খ্যাতিমান প্রগতিবাদী লেখক চিন্তকদের বই, মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা আকরগ্রন্থগুলোকে তারা সামনে আসতে দিতে চায় না। এ কারণে প্রসিদ্ধ সৃজনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বাংলা একাডেমিকে। অথচ টার্গেট করা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্যাভিলিয়ন বা স্টলেই পাঠককে সব সময়ই হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যায়।
তাহলে এবার কেন পাঠকদের বঞ্চিত করতে হবে? পছন্দের বই না পেলে পাঠক কি মেলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না? নানা হুমকি-ধমকির মধ্যে কাটছে এমন অভিযোগ করে প্রকাশকদের এই অংশটি বলছে, বিগত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে তাদেরকে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ যারা দেখাচ্ছেন তারাও একই সরকারের সময় অভিন্ন বিষয়ের ওপর বই প্রকাশ করেছেন। সেসব বই সরকারিভাবে কেনাও হয়েছে। এখন তারা সুযোগ বুঝে রূপ বদলে নিয়েছেন।
কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়াই ১৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তালিকাটি বাংলা একাডেমিকে দিয়ে বলা হচ্ছে, এদের স্টল প্যাভিলিয়ন বরাদ্ধ বাতিল করতে হবে। এই ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আগে কোনোদিন হয়নি বলেও মন্তব্য করেন ভুক্তভোগী একাধিক প্রকাশক। এদিকে, মেলা পরিচালনা কমিটির একটি সূত্র মতে, আলোচনা সমালোচনা তর্ক বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ‘কালো তালিকায়’ থাকা একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নের বরাদ্দ পুরোপুরি বাতিল করেছে একাডেমি।
জার্নিম্যান বুকস নামের এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কবি তারিক সুজাত। প্রতিষ্ঠানটি থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বহু বই প্রকাশিত হয়েছে। বাকি ৩টি প্যাভিলিয়নের আয়তন কমিয়ে ২৪ ফুট বাই ২৪ ফুট থেকে ২০ বাই ২০ ফুট করা হয়েছে। ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন বাতিল করা হয়েছে। তাদের দেওয়া হয়েছে ৩ থেকে ৪ ইউনিটের স্টল। আয়তন কমে যাওয়া প্যাভিলিয়নগুলোর মধ্যে আগামী, পাঠক সমাবেশ, সময়, কাকলী, অন্যপ্রকাশ, তা¤্রলিপি এবং স্টুডেন্টওয়েজের মতো ষাটের দশকের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
বাংলা একাডেমি নিজ থেকে এইসব তথ্য নিশ্চিত না করলেও, মেলা পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য তা স্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সদস্য বলছিলেন, যেসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নিয়ে তর্ক বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে সেগুলো আসলে অহেতুক। কালো তালিকায় ফেলা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই প্রকাশনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। যেন তেন যুক্তি দিয়ে তাদের আটকে রাখার মানে হয় না। তা ছাড়া পাঠককে সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে।
বিষয়গুলো বিবেচনা করেই একাডেমি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি। সে যাই হোক, এখন দেখতে হবে সামনে আর কী অপেক্ষা করছে। প্রাণের মেলা তার চরিত্র ধরে রাখতে পারবে তো? উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছাড়াই মেলায় যেতে পারবেন তো লেখক পাঠক প্রকাশকরা? দেখার বিষয়। আরও দেখার বিষয়, একাডেমি চাপ সামলে কতটা সামনে এগিয়ে যেতে পারে। না পারলে বড় ক্ষতি, বলার অপেক্ষা রাখে না।
বায়ু দূষণের কী হবে ॥ শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বায়ু দূষণ। ঢাকার বায়ু ভীষণ ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে এখন। বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বুধবার তারা জানিয়েছে, ঢাকার বায়ুর মান ২০৪। সে হিসেবে বিশ্বের ১২৫ নগরীর মধ্যে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা। বায়ুর এই মানকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ঢাকা ও আশপাশের পাঁচ সর্বোচ্চ দূষিত এলাকার মধ্যে ছিল ইস্টার্ন হাউজিং-২ (২৫৩), মহাখালীর আইসিডিডিআরবির ভবন (২৫০), কল্যাণপুর (২৩৮) ও ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এলাকা (২৩৮) এবং গ্রেস ইন্টার্যাশনাল স্কুল (২৩৫)। জানা গেছে, ঢাকার বায়ু দূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। বুধবার ঢাকার বাতাসের উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান মাত্রার চেয়ে ২৫গুণ বেশি ছিল। তার আগে গত রবিবার সকালে ঢাকার বায়ু মান ছিল ৪৫২।
বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি হলেই তাকে দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করা হয়। রবিবার ঢাকার দূষিত ১০টি স্থানের প্রতিটির মানই ছিল দুর্যোগপূর্ণ। এরমধ্যে গুলশানের দুটি স্থানের স্কোর ছিল ৭০০-এর ওপর। সংস্থাটি বলছে, এ অবস্থায় ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এখন। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। ঘরের জানালাও বন্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ, পরিস্থিতি ভয়াবহ। ফলে একদমই অবহেলা করা যাবে না। সচেতন হোন। সুস্থ থাকুন। এবং তা নিজ দায়িত্বেই।