ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

বহ্নির বর্ণিল তুলি

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ১৯:০০, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

বহ্নির বর্ণিল তুলি

জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা- আজ শুধু নজরুলের বন্দনা নয়, বলব এক বহ্নিশিখার পথচলার গল্প। আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জের মেয়ে বহ্নিশিখা। ছোটবেলায় মামা আদর করে তাকে এই নামেই ডাকতেন। মামার ইচ্ছে ছিল তার মেয়ে হলে এই নাম রাখবেন। কিন্তু তার আগে ভাগ্নিকেই ডাকতে শুরু করেন ‘বহ্নিশিখা’। তাই মামার ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতেই প্রিয় এই নামে চলার পথ তৈরি করেছেন- ‘বহ্নির রংতুলি’। মামার আদরের বহ্নিশিখা এ নামেই পরিচিত এখন অনলাইন জগতে। প্রকৃত নাম ফাতেমাতুজ জোহরা পপি। পরিবার আর নিজ এলাকা ছাড়া বহ্নি নামেই তাকে সবাই চিনে। ব্যবসায়ী বাবার দুই ছেলেমেয়ের মাঝে বহ্নি বড়। প্রথম সন্তান হিসেবে বেশ আদরেই বড় হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের রোকন উদ্দিন পাইলট গার্লস হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও সরকারি সফরআলি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বাংলায় পড়াশোনা করেন বহ্নি। অনার্স পরীক্ষার পর বিয়ে হয়ে যায় তার। এরপর স্নাতকোত্তর করেন। বহ্নির স্বামী ঢাকায় একটি হাসপাতালে চাকরি করেন। তার সম্পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে বহ্নির এই কাজের প্রতি। কাপড় থেকে শুরু করে রং, তুলি যা লাগে সব ঢাকা থেকে এনে দেন তিনি। বিয়ের পর যৌথ পরিবারে থাকায় নতুন বউ হিসেবে কে কি ভাববে এসব সংকোচে কিছু করা হয়নি। কিছুদিন পর শ্বশুর-শাশুড়ি গ্রামে চলে যান। আর তখনি বাবার বাড়ির পাশে ইউনাইটেড স্কুল এন্ড কলেজ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জে তার চাকরি হয়ে যায়। বহ্নি তখন নারায়ণগঞ্জে বাবার বাসায় চলে যান। এরপর থেকে চাকরির পাশাপাশি আরও কিছু করার ইচ্ছে জাগে। ভাবেন ছোটবেলার শখের আঁকা নিয়ে কিছু করা যায় কিনা। নিজের স্কুল, বাচ্চা সামলে বহ্নি কিছুটা সময় বের করে তার এতদিনের লালিত স্বপ্ন ও শখ- দুটো নিয়ে কাজ শুরু করেন। বাবা-মা, ভাইও তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন। বড় ছেলেকে গত বছর স্কুলে দিয়েছেন, ছোটজনের বয়স ৬ মাস। ‘আমি গানও করি। আড়াইহাজার উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গান শিখেছিলাম। পাস করার পর ওখানেই গানের শিক্ষকতা করেছি। মাঝে অনেকদিন বন্ধ ছিল। এখন আবার শুরু করার চেষ্টা করছি’- বলছিলেন বহ্নি। একসঙ্গে বহুগুণের অধিকারী বহ্নি। চাকরি, আবার একটা বাড়তি কাজ- দুটো একসঙ্গে শুধুই শখে? নাকি সংসারের প্রয়োজনে? স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর দিলেন- ‘দুটো মিলেই। শখের বসে শুরু করা, হলে হবে না হলে নাই- এমন। কিন্তু নতুন হিসেবে একটু একটু করে ভালোই সাড়া পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। শুরুটা ওভাবে হলেও এখন একটু লোভ হয় যে, আমার কাজ সবাই দেখুক, পছন্দ করুক। নিজের সৃষ্টি বলে কথা। সঙ্গে কিছু বাড়তি অর্থও আসছে। নিজের মতো খরচ করতে পারছি, এ এক অন্যরকম ভালোলাগা।’ বহ্নির বেশিরভাগ কাজেই মানডালা ডিজাইন রাখেন। যাতে তার কাজটা অন্যদের থেকে আলাদা হয়। মানডালা রাউন্ড শ্যাপের একটা ডিজাইন। ছোটবড় সবার পোশাক নিয়েই কাজ করেন বহ্নি। স্লাব কটনে জামা, খাদি কটনে পাঞ্জাবি, ব্লাউজগুলো ভয়েল কাপড়ে আর বেবি ড্রেস যে যেমন চায়। তাছাড়া বিছানার চাদরেও পেইন্ট করেন। নিজের আঁকা পোশাক অন্যকে পড়তে দেখার মাঝে কি যে আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বহ্নিশিখা জ্বলজ্বল করে জলুক তার কাজের মাঝে।

 

×