ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

দেবাশিস চক্রবর্তীর প্রদর্শনী ‘পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

দেবাশিস চক্রবর্তীর প্রদর্শনী ‘পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান’

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৫ নম্বর গ্যালারিতে পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা

এদেশে আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে শিল্প-সংস্কৃতির সংযোগটা বেশ পুরনো। সেই সুবাদে ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ নানা আন্দোলন-সংগ্রামে রচিত হয়েছে শিল্পকর্ম থেকে সাহিত্য। সময়ের প্রয়োজনেই সোচ্চার হয়েছেন সচেতন শিল্পী-সাহিত্যিকরা। সৃষ্টির নির্যাসে জানিয়েছেন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তেমনই এক শিল্পী দেবাশিস  চক্রবর্তী।

চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আলোড়িত হয়েছেন দেবাশিস। অভ্যুত্থানের নানা ঘটনাকে উপজীব্য করে এঁকেছিলেন প্রতিবাদী পোস্টার।  সেই উত্তাল সময়ের সাক্ষ্যবহ পোস্টারগুলো প্রকাশ করেছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। রং-তুলির আঁচড়মাখা শিল্পিত সেই পোস্টারসমূহ বর্তমানে ঠাঁই নিয়েছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৫নং গ্যালারিতে। একাডেমির প্রযোজনা বিভাগ আয়োজিত প্রদর্শনীটির শিরোনাম পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান।

প্রদর্শনালয়ে প্রবেশ করতেই চোখ আটকে যায় লাল জমিনের বিশাল ক্যানভাসে। বোর্ডের ওপর রং লেপে তৈরি করা হয়েছে চিত্রপটটি। সেই চিত্রপটজুড়ে বইছে রক্তের ¯্রাোতধারা।  সে রক্ত¯্রােতের মাঝে চার হাত-পা ছড়ানো অবস্থায় পড়ে আছে অভ্যুত্থানে নিহত এক শিক্ষার্থীর শবদেহ। আন্দোলন দমনে নির্মমতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় পোস্টারটি।

এরপর নজর পড়ে পাশের দেয়ালে ঝুলে থাকা অগ্নিগর্ভ সময়ের সাক্ষ্যবহ আরেক ছবিতে। হলদে জমিনে আবৃত মেরুন চিত্রপটের উপরের অংশে উড়ছে প্রাণঘাতী বুলেট। মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে  রাজপথে  সোচ্চার অবস্থানে দেখা যায় দুই শিক্ষার্থীকে। তাদের পেছনে উঁচিয়ে আছে অনেকগুলো মুষ্টিবদ্ধ হাত। সেই যুথবদ্ধতার শক্তিতে আঙুল তুলে স্লোগান দিচ্ছে দুই তরুণ-তরুণী। তাদের কণ্ঠ নিঃসৃত উত্তাপময় বাক্যগুলো হলো ‘কথা বলতে হবে বাংলাদেশ, নামতে হবে রাস্তায়’।

রক্তাক্ত জুলাই শিরোনামের পোস্টারে সহপাঠীর লাশ দুই হাতে নিয়ে  নির্ভয় চিত্তে হেঁটে যেতে দেখা যায় এক যুবককে। আরেক পোস্টারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শামিল হওয়া দুই অভিভাবকের প্রতিবাদী রূপ দেখা যায়। ওই ছবির নিচে লেখা ‘চব্বিশের জনযুদ্ধ’ এবং উপরে ‘পদত্যাগ না করলে পতন’। নিষ্ঠুরতার বিপরীতে স্যাটয়ারধর্মী একটি পোস্টারে ভাসছে কয়েক তরুণের ছুড়ে দেওয়া ‘এত্ত লাশ লইয়া কোথায় যামু আম্মাজান?’ এভাবেই অভ্যুত্থানসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়কে ধারণ করেছে এই প্রদর্শনী। 
লাল ও কালোর সঙ্গে হলদে রঙের মিশেলে শিল্পভাষা সৃজন করেছেন দেবাশিস চক্রবর্তী। তার আঁকা পোস্টার অভ্যুত্থানের সমান্তরালে রাষ্ট্রযন্ত্রের দুঃশাসন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে উচ্চকিত হয়েছে। প্রশ্ন জাগিয়েছে অন্যায় ও অপশাসনের বিরুদ্ধে। বিগত কয়েক বছর ধরেই শিল্পী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন।

গুরত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে পোস্টারের মধ্যে নিজের রাজনৈতিক ভাষ্য হাজির করেছেন। তাই গণমানুষের আকাক্সক্ষা যেমনÑ তার পোস্টারে জেগে উঠেছে তেমনি, শিল্পের শৈলীগত দিক থেকেও তা অনন্য হয়ে উঠেছে দেশের শিল্পের ইতিহাসে।
গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব বিবেচনায় দেবাশিস চক্রবর্তীর জুলাই অভ্যুত্থানে করা শতাধিক পোস্টার থেকে বাছাইকৃত ২০টি পোস্টার নিয়ে এই লাইভ এবং এআর-ভিআর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমির ভিআর গ্যালারিতে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় এই ভিআর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।

পোস্টারের বিষয়ের নানা পরিপ্রেক্ষিত ও কন্টেক্সট এআর-ভিআরের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে। যেখানে নির্দিষ্ট পোস্টারের কন্টেক্স ও পরিপ্রেক্ষিতের নানা ঘটনা, তথ্যচিত্র, অডিও-ভিডিও ভিআর কন্ট্রোলারের মাধ্যেমে দর্শক ইন্টারেক্টিভ পদ্ধতিতে দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 
আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চিত্রশালায় চলবে প্রতিদিন। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা  পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

×