ছবি: সংগৃহীত
মানুষ জন্মাবে ও মরে যাবে। সৃষ্টির শুরু থেকে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন কয়েকটি আজব শহর আছে, যেখানে শান্তিতে মরার অনুমতি নেই। মরলে রীতিমতো পেতে হয় শাস্তি। ভাবুন তো কি অবস্থা!
এ খবর কিন্তু মজার জন্য নয়। একেবারে বাস্তব সত্য। নরওয়ে, ইটালি, জাপান, ফ্রান্সের কিছু শহর আছে, যেখানে মৃত্যুতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। চলুন জেনে আসি তেমনই আজব পাঁচটি শহরের কথা। যেসব জায়গায় বহু বছর ধরে মরলে পেতে হয় শাস্তি!
লংইয়ারবাইন (নরওয়ে)
নিশিথ সূর্যের দেশ নরওয়ের লংইয়ারবাইন শহরে মরে যাওয়া নিষিদ্ধ। তাহলে প্রশ্ন আসবে এখানে কি কোনো কবরস্থান নেই। আছে বৈকি। কিন্তু ঐ কবরস্থানে প্রায় ৭০ বছর ধরে শহরের কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবর দেওয়া হয়নি। আসলে এই শহরটি সদা তুষারময়। সে কারণে বরফে কবর দিলে মৃতদেহ পচে না বা নষ্ট হয় না।
এর ফলে মৃতদেহগুলোতে ‘পারমাফ্রস্ট’ নামে একটি ভাইরাস উৎপন্ন হয়। সেই ভাইরাসের প্রভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই এই শহরে যখনই কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হন বা কেউ মারা যাওয়ার উপক্রম হয়, তাকে অন্য শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। যাতে তিনি তার জীবনের শেষ সময়টা ভালোভাবে কাটাতে পারেন।
সার্পোরেক্স (ফ্রান্স)
সার্পোরেক্স ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি গ্রাম। ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন মেয়র জেরার্ড লালান একটি পৌর আদেশ জারি করেন, যেখানে বলা হয়েছিল যে, এই এলাকায় কারও মরে যাওয়া বারণ, মৃত্যুর আগে তাদের অন্যস্থানে নিয়ে যেতে হবে। কবরস্থানে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এই আদেশ জারি হয়েছিল। কেউ এই আদেশ অমান্য করলে তার জন্য কঠোর শাস্তির বিধানও রয়েছে।
ফ্যালসিয়ানো দেল মেক্সিকো (ইটালি)
২০১২ সালের মার্চ মাসে ইটালির ফ্যালসিয়ানো দেল মেক্সিকো শহরে এক আইন প্রণয়ন করেছিলেন তৎকালীন মেয়র গিউলিও সিজারে ফাভা। সেই আইন অনুযায়ী, ‘ফ্যালসিয়ানো দেল মাসিকো’র পৌরসভায় বসবাসকারী এবং পৌরসভা এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী কোনো ব্যক্তির মৃত্যু বেআইনি। কারণ এই পৌরসভা এলাকার কবরস্থান সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে কাউকে কবর দেওয়ার এতটুকু জায়গা নেই। এ কারণে প্রৌঢ় মানুষদের অধিকাংশেরই পৌর এলাকার বাইরে বসবাস করতে হয়। এখানকার মানুষদের মোটা টাকার বিনিময়ে কবর দেওয়া হয় কাছেরই ‘মন্দারাগোনে’ নামে এক শহরে।
ইতসুকুশিমা (জাপান)
ইতসুকুশিমা জাপানের একটি পবিত্র স্থান। তাই সে দেশের সরকার এই স্থানটির পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে। এই পবিত্র স্থানে ১৮৭৮ সাল থেকে মৃত্যু এবং জন্ম নিষিদ্ধের নিদান দিয়েছেন পুরোহিতরা। গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের এই স্থানে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গেলেই পেতে হয় বড় ধরনের শাস্তি।
সেলিয়া (ইটালি)
দক্ষিণ ইটালিতে অবস্থিত সেলিয়া শহরের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৫৩৭ জন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের বয়সই ৬৫ বছরের বেশি। শহরের জনসংখ্যা এতটাই কম যে তা রুখতে শহরের মেয়র আদেশ দিয়েছিলেন যে, এই শহরে কেউ অসুস্থ হতে বা মারা যেতে পারবেন না।
আসলে এই আদেশের প্রধান উদ্দেশ্য, নাগরিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। তদন্ত করে যদি জানা যায় যে, এখানকার বাসিন্দাদের কেউ একজন স্বাস্থ্য সচেতন নন, তাহলে তাকে জরিমানা দিতে হয়। ফলে শহরের সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে জীবনযাপন করেন। যাতে সহজে কেউ রোগে আক্রান্ত বা দুর্ঘটনার শিকার না হন।
নাহিদা