ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

তিস্তায় পরিযায়ী পাখি

শীতে নদীর চরে বিচরণ মোহনীয় হয়ে ওঠে প্রকৃতি, পরিবেশ

তাহমিন হক ববি

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

শীতে নদীর চরে বিচরণ মোহনীয় হয়ে ওঠে প্রকৃতি, পরিবেশ

.

বর্ষায় ভরা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদী শুকিয়ে যায়। নালাকৃতির মতো নদী প্রবাহ চলছে। প্রকৃতিতে চলছে শীত-কুয়াশার ঋতু। তিস্তার চরসহ নদী সংলগ্ন আবাদি জমির আমন ধান কেটে ঘরে তুলছে কৃষক। তাই শীত পড়ে যাওয়ায় নদীর তীরে বেড়েছে পাখপাখালির পরিযায়ী আগমন। তিস্তাপাড়ের মাঝিমাল্লাসহ জেলেরা জানান, গত বছরের ন্যায় এবারও তিস্তা নদীতে  দেখা মিলছে বিভিন্ন দেশের পাখি। বিদেশী দুর্লভ পাখি উত্তুরে টিটিও দেখা গেছে। এলাকাবাসী জানান, শীতে তিস্তা নদীর সৌন্দর্য বাড়ায় দুর্লভ পরিযায়ী পাখির দল।
নীলফামারীর ডিমলার কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্টে হতে ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ হয়ে  রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৮৫ কিলোমিটার তিস্তা নদী এবং নদীর চরে এখন বিচরণ করছে পরিযায়ী পাখি, যা মোহনীয় করে তুলছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। তিস্তাপাড়ের বাইশপুকুর চর গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানালেন, শীত যত বাড়বে তত পরিযায়ী আসবে। তার মতে, সুদূর সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ চীন, লাদাখ থেকে এসব পাখি আসে তিস্তায়। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ হাঁস, ছোট কান প্যাঁচা, লম্বা পা তিসাবাজ, জিরিয়া, টিটি,  চখাচখি। তিনি জানান, গত বছরের মতো এবারও দেখা গেছে উত্তুরী টিটি পাখী। গঙ্গাচড়া, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর  সোনাখুলী, ডাউয়াবাড়ি, ফরেস্টের চর এলাকা পরিযায়ীদের জন্য নিরাপদ। এ ছাড়া চরবাসীরাও কাউকে পাখী শিকার করতে দেন না।
পাখি পর্যবেক্ষক  কাজী সানজীদ জানান, আমাদের দেশে বেশ কয়েক ধরনের টিটি দেখতে পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে সৌন্দর্যের জন্য উত্তুরে-টিটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বাংলাদেশে নিয়মিত দেখতে পাওয়া পাঁচ ধরনের টিটিগুলো হচ্ছে হট-টিটি, হলদেগাল-টিটি, নদী-টিটি, মেটেমাথা-টিটি এবং উত্তুরে-টিটি। প্রথম তিনটি আবাসিক, পরের দুটি পরিযায়ী। উত্তুরে-টিটি এদেশে শীতকালে স্বল্প সংখ্যায় দেখা যায় প্রধানত রাজশাহীর পদ্মায়, টাঙ্গুয়া হাওড় ও তিস্তা নদীতে। পানির কাছাকাছি সবুজ প্রান্তরে এরা বিচরণ করে। প্রজননভূমি ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া। শীতে পরিযায়ন করে উত্তর আফ্রিকা, উপমহাদেশ ও চীনে।  তিনি এই পাখির সর্ম্পকে বলেন, দেহের আকৃতি শালিকের মতো তবে, পা দুটি লম্বা, শরীর বাহারি রঙের। এদের শ্রেষ্ঠতম আকর্ষণীয় দিক হলো মাথার ওপর দৃষ্টিনন্দন ঝুঁটি। কেঁচো, মাটির বিভিন্ন পোকা এবং লার্ভা এদের খাদ্য।  ধারণা করা হচ্ছে, এই প্রজাতির পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এদের বিচরণভূমি কমে যাওয়াতে এই নিম্নগামী ধারা। তিস্তার চরবাসীদের মতে, নভেম্বর থেকে জানুয়ারী তিন মাস তিস্তায় কমবেশি পরিযায়ী পাখি আসে। প্রতি বছরের মতো এবারও আসছে। নদীর পরিবেশ-প্রকৃতি পাখিদের অনুকূলে থাকায় তিস্তাকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে এ পাখিগুলো। নদীর শামুক, জলজ পোকামাকড় এসব পাখির খাদ্য। তিস্তায় এসব খাদ্য পাওয়া যায় বলে এখানে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে পাখিগুলো।

×