বড়দিন আসছে। ঢাকার পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে চলছে উৎসব প্রস্তুতি।রেডিসন হোটেলের লবি থেকে তোলা
বিজয় দিবস উদ্যাপিত হলো গত সোমবার। দিবসটি ঘিরে যথারীতি রাষ্ট্রীয় নানা কর্মসূচি ছিল ঢাকায়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা করা হয়। বিকেলে বঙ্গভবনে ছিল রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা। সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও আলোচনা গান নাচ ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকতার বাইরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গভীরভাবে জানা বা উপলব্ধি করার বিষয়টি এবারও উপেক্ষিত ছিল।
পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে বাঙালি কেমন ছিল, কী ধরনের বঞ্চনা বৈষম্যের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে, কতবার কতভাবে পাকিস্তানিরা বাঙালির টুঁটি চেপে ধরেছেÑ আজকের প্রজন্ম এসব বিষয়ে সামান্যই অবগত। পাকিস্তানিদের অর্থনৈতিক শোষণ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সম্পর্কে তারা তেমন কিছু জানে না। ১৯৪৭ সালে বাঙালির সামনে কোন মুলাটি ঝোলানো হয়েছিল? কী স্বপ্ন দেখিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোতে? তার পর কী হলো?
কেন মায়ের ভাষা বাংলা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ? ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কেন গুলি চালিয়ে শফিক রফিক বরকত সালাম জব্বারদের হত্যা করেছিল? কেন অনিবার্য করে তুলেছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে? কেন ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল বর্বর পাকিস্তান সেনা বাহিনী? তাদের এ দেশীয় দোসরদের ভূমিকা কী ছিল তখন? ওরা নিজ দেশের বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছিল। নিজের প্রতিবেশীর মাকে বোনকে স্ত্রীকে ধরে নিয়ে তুলে দিয়েছিল পাকিস্তানিদের হাতে।
কজন আজ সেই নির্মম নিষ্ঠুর ইতিহাসের গভীরে যেতে পারছে? বীর মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে জীবনকে তুচ্ছ করেছিল? শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়েছিল কোন শক্তিতে? আজকের স্বাধীন সার্বভৌম দেশটি যারা এনে দিয়েছেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা কি যথাযথ সম্মান জানাতে পেরেছি? প্রশ্নগুলোর উত্তর মেলেনি। বিজয় দিবস আসে। যায়। কিন্তু উত্তর জানা হয় না।
হয় না বলেই এই প্রজন্মকে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। কবে শেষ হবে এই বিভ্রান্তি? কবে আনুষ্ঠানিকতার বাইরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে আমরা সবাই উপলব্ধি করতে পারব? আদৗ কি পারব কোনোদিন? এভাবে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যেতে হবে। তা না হলে বিজয়ের প্রকৃত আনন্দ আসবে না।
আসছে সান্তাক্লজ ॥ সান্তাক্লজের আসার সময় হয়ে গেছে। পৌরাণিক এ চরিত্র বড়দিনের উৎসবের, বলা চলে, প্রাণ। প্রাণের উপস্থিতি উৎসব শুরুর আগাম বার্তা দিচ্ছে। মাত্র কদিন পর পর ২৫ ডিসেম্বর। এ দিনটি সাধারণ দিনের তুলনায় ঠিক বড় নয়। তবে আনন্দ উৎসবের বিরাট উপলক্ষ নিয়ে আসে বলেই ‘বড়দিন’ নামে পরিচিত। গোটা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও এখন চলছে বড়দিন বা ক্রিসমাস উদ্যাপনের প্রস্তুতি।
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের অনেকেরই ঘরের কোণে পৌঁছে গেছে ক্রিসমাস ট্রি। চলছে অন্য সাজ-সজ্জার কাজ। তবে বড়দিনের বাড়তি আকর্ষণ ঢাকার পাঁচতারকা হোটেলগুলোর আয়োজন। যত দিন যাচ্ছে ততই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এসব আয়োজন। দেশী-বিদেশী অতিথিদের কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিবছরই আকর্ষণীয় পরিকল্পনা সাজায় হোটেলগুলো। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। বরং প্রস্তুতি পর্বটাই উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
হোটেলের লবিতে পা ফেলতেই চোখে পড়ছে মরিচ বাতি দিয়ে চমৎকার সাজানো ক্রিসমাস ট্রি। মেঝেতে গিফটবক্স। হোটেলের বিভন্ন স্থানে বড়দিনের আকর্ষণীয় ডিসপ্লে। সান্তাক্লজ, তার বলগা হরিণ, কেক কুকিজ আরও কত কী! সব মিলিয়ে উৎসবের বার্তা। বার্তাটি পাচ্ছেন তো?