ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে পর্যটকরা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন এবং সেসব দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। তবে কিছু দেশ রয়েছে যেগুলো নিরাপত্তা, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা পর্যটন খাতের অভাবে পর্যটকদের জন্য বিপজ্জনক বা অনাগ্রহী। এই প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের পাসপোর্ট ইনডেক্স অনুযায়ী বিশ্বের ১০টি দেশ দেশ তুলে ধরা হলো যেগুলো পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
১. আফগানিস্তান
আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের মধ্যে আছে। তালেবান শাসনের পর পর্যটকদের জন্য দেশের পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চলে নিরাপত্তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ, এবং পর্যটন পরিকাঠামো নেই বললেই চলে। আফগানিস্তানে ভ্রমণ করতে গেলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ আফগানিস্তানে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
২. উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়া অত্যন্ত বন্ধুত্বহীন দেশ এবং সেখানে ভ্রমণ একেবারেই সীমাবদ্ধ। পর্যটকদের শুধু সরকার অনুমোদিত ট্যুর গাইডের সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি থাকে এবং তারা স্বাধীনভাবে দেশের কোন জায়গা পরিদর্শন করতে পারে না। এছাড়া, সরকারের কঠোর নজরদারির কারণে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং মুক্ত মতপ্রকাশ অত্যন্ত সীমিত। এজন্য পর্যটকদের জন্য উত্তর কোরিয়া এক বিপজ্জনক গন্তব্য।
৩. তুর্কমেনিস্তান
তুর্কমেনিস্তান মধ্য এশিয়ার একটি গোপনীয় দেশ। এটি একটি অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন দেশ, যেখানে বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশ এবং ভ্রমণ করা কঠিন। দেশটির বেশিরভাগ সড়ক ও শহর খুব কম পর্যটকের দ্বারা পরিদর্শিত হয় এবং স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। তুর্কমেনিস্তানে সরকারি অনুমোদন ছাড়া দেশটির কোথাও ভ্রমণ নিষিদ্ধ।
৪. লিবিয়া
লিবিয়া দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গৃহযুদ্ধের কবলে রয়েছে। যদিও দেশটির অনেক ঐতিহাসিক স্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে, তবে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে এটি একটি বিপজ্জনক গন্তব্য। লিবিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত অনিশ্চিত, এবং এখানে পর্যটকরা হত্যাকাণ্ড, অপহরণ বা আক্রমণের শিকার হতে পারেন।
৫. ইয়েমেন
ইয়েমেনের চলমান গৃহযুদ্ধ এবং সন্ত্রাসী হামলা দেশটিকে পর্যটকদের জন্য একটি বিপজ্জনক গন্তব্যে পরিণত করেছে। অনেক পশ্চিমা দেশ ইয়েমেনে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। দেশটি ব্যাপক মানবিক সংকটে রয়েছে, যেখানে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে সাধারণ নাগরিকদের জীবন যাপনও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
৬. সোমালিয়া
সোমালিয়া অনেক বছর ধরে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। সন্ত্রাসী সংগঠন আল-শাবাবের কার্যক্রমের কারণে এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক দেশ হিসেবে পরিচিত। সোমালিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ, যার ফলে এখানে ভ্রমণ করা একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ।
৭. সিরিয়া
সিরিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধ, বোমা হামলা, অপহরণ এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেশটিকে একটি বিপজ্জনক গন্তব্যে পরিণত করেছে। এখানে বহু বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং বেশিরভাগ দেশ সিরিয়াতে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। সিরিয়া থেকে অনেক পশ্চিমি দেশ তাদের কূটনৈতিক মিশনও প্রত্যাহার করেছে।
৮. ইরিত্রিয়া
ইরিত্রিয়া একটি অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন এবং স্বৈরাচারী দেশ। এখানে পর্যটকদের জন্য প্রবেশাধিকার খুবই সীমিত এবং দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত অনিশ্চিত। ইরিত্রিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত না হলে ইরিত্রিয়ায় বাস করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
৯. সুদান
সুদান গত কয়েক দশক ধরে গৃহযুদ্ধ এবং সন্ত্রাসী হামলার শিকার। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অপরাধের কারণে এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির সক্রিয়তা এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি পর্যটকদের জন্য বিপজ্জনক।
১০. ভেনেজুয়েলা
ভেনেজুয়েলা এক সময় পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল, তবে বর্তমানে এটি রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং অপরাধের কারণে একটি বিপজ্জনক গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ধ্বংসের পথে, এবং অপরাধের হার খুবই উচ্চ। ভেনেজুয়েলায় অপরাধের ঘটনা যেমন ডাকাতি ও অপহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি সেখানকার পর্যটন পরিকাঠামোও একেবারে ভেঙে পড়েছে।
এই দেশগুলির নিরাপত্তা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ পর্যটকদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে। এসব দেশে ভ্রমণের আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বের এই বিপজ্জনক দেশগুলির মধ্যে ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো পরামর্শ হলো, সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে এবং সবসময় সরকারি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরামর্শের উপর নির্ভর করা।
নাহিদা