ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১

পৌষের ডানায় বিজয় উল্লাস

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ০০:২৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

পৌষের ডানায় বিজয় উল্লাস

হিম হিম শীতের আবেশ জড়িয়ে মিষ্টি রোদের ওম মাখানো আলোকচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হলো শীত ঋতুর প্রথম মাস পৌষ। অনেক বছর পর এবার পৌষের বেশ কিছুদিন আগেই শীত জেঁকে বসেছে বাংলায়। সঙ্গে নিয়ে এসেছে বিজয়ের আনন্দ। শীত এমনিতেই আসে বিশাল উৎসব-আয়োজন নিয়ে। গ্রামের খেজুর গাছগুলোতে বাঁধা থাকে খেজুর রসের হাড়ি। শীত মানেই যেন রস আর রসের পিঠা। রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় গুড়। গ্রামের ঘরে ঘরে বাড়ে গুড় তৈরির ব্যস্ততা। সারা গ্রামে ছড়িয়ে থাকে গুড়ের মিষ্টি ঘ্রাণ। এ সময় শীত পোশাক কেনা আর ঘরে ঘরে পিঠাপুলি খাওয়ার ধূম পড়ে যায়। কোথাও আবার বসে পিঠামেলা। বেশ কয়েক বছর যাবত দেখা যাচ্ছে নতুন এক সংস্কৃতি। তা হলো শহরের বিভিন্ন বহুতল ভবনের ছাদে প্রায় প্রতিটা পরিবার থেকে যে যেমন পিঠা বানাতে পারে তা নিয়ে আয়োজন করে মিলনমেলার। এতে একদিকে যেমন ভিন্ন অঞ্চলের পিঠাপুলির সঙ্গে সবার পরিচয় হয়, তেমনি ভবনের সবার সঙ্গে আন্তরিকতা ও হৃদ্যতাও বাড়ে। এটা একটা ভালো দিক। সকালে লেপ-কম্বল এর ওম ছেড়ে বাইরে বের হওয়া কষ্টের হলেও অনেকে খুব ভালোভাবেই উপভোগ করে থাকেন। সোয়েটার, জ্যাকেট, শাল, ব্লেজার ইত্যাদি পোশাকে নিজের পরিবর্তনটা ভালোই লাগে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজগুলো ব্যস্ত হয় শীত ফ্যাশনে। মার্কেটগুলোতে পাওয়া যায় নতুন নতুন কালেকশন। এ সময় খাবারেও আসে ভিন্নতা। শীতের শাক-সবজিতে ফসলের খেত ভরে যায়। ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচা-পাকা টমেটো, শিম, বিভিন্ন রকম শাক ইত্যাদির পসরা থাকে শীতকালে। এসব খাবারে থাকে প্রচুর পুষ্টিগুণ। নতুন স্বাদের মজার তরকারি খাওয়ার অপেক্ষায়ও থাকে সবাই। বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় আর গরম না থাকায় পড়ে যায় বেড়ানোর হিড়িক। কেউ যায় নানা-দাদার বাড়ি, কেউ যায় কোনো দর্শনীয় জায়গায়। এবার পৌষ এসেছে বিজয় দিবসকে সঙ্গে নিয়ে।
আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে এক নদী রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। বিজয়ের আনন্দের সঙ্গে মন বেদনাবিধুরও হয়ে যায়। যারা আপনজন হারিয়েছেন তারা একদিকে যেমন এই দিনটিকে নিয়ে গর্ববোধ করেন, অন্যদিক থাকে তাদেরকে চিরতরে হারানোর শোক। লাল-সবুজ পোশাকে বাঙালি মেতে উঠে বিজয় উৎসবে। তবে বিজয়ের এই আনন্দে আমরা যেন ভুলে না যাই শহীদদের আত্মত্যাগের অর্থ। মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার জন্যে যারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের এই ত্যাগের মূল্যায়ন যেন শুধু এসব বিশেষ দিনেই আমরা মনে না করি। এই মূল্যায়ন সারা জীবনের। সবকিছুর আগে খেয়াল করতে হবে আমাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধ। পাশ্চাত্য সভ্যতা যেন আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে গ্রাস না করে। প্রতি বছর বিজয় দিবস এলেই বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতির চর্চা বেড়ে যায়। আমরা যত আধুনিকই হই না কেন, দেশ আর দেশীয় মূল্যবোধ যেন থাকে সবার আগে। শিশুদের জানাতে হবে আমাদের সঠিক ইতিহাস। তবেই তারা বড় হয়ে বাংলা আর বাঙালিত্বকে মনেপ্রাণে ধারণ করবে। সেতু (ছদ্মনাম) অনেক বছর পর হলে গেল সিনেমা দেখতে। সিনেমা শুরু হওয়ার আগে জাতীয় সংঙ্গীতের পতাকাটা যখন পতপত করে উড়তে শুরু করল, তার চোখে তখন পানি এসে গেল। ছোটবেলায় সে যেকয়বার সিনেমা দেখেছে ততবারই এই দৃশ্য তার চোখে পানি এনেছে। সবাই একসঙ্গে আজও দাঁড়িয়ে গেল জাতীয় সংগীত আর পতাকাকে সম্মান জানাতে। আজ এত বছর পর সে আরেকবার শিহরিত হলো। মনে মনে ভাবল- দেশের প্রতি ভালোবাসা তার সেই অবুঝ বয়সে যেমন ছিল, এখনো তেমনি আছে। এই ভালোবাসা শুধু মনে নয়, কথায়-কাজেও প্রকাশ হোক।

×