ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১

তিমির বমির দাম কোটি টাকা! কিন্তু কেন এত দাম?

প্রকাশিত: ১৮:৪১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

তিমির বমির দাম কোটি টাকা! কিন্তু কেন এত দাম?

ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে বিশাল ঢেউয়ের গর্জন শুনছেন আর নোনা জলে পা ভেজাচ্ছেন। এমন সময় পায়ের কাছে ভেসে এলো দলাকৃতির বস্তু। কিন্তু জানলেন এগুলো তিমির বমি। আর এর দাম কোটি টাকার বেশি! 

 

শুনতে অবাক লাগলেও সমুদ্রের বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির বমির দাম কোটি টাকার বেশি। দামের কারণে তিমির বমিকে ফ্লোটিং গোল্ড বা ভাসমান সোনাও বলা হয়।  

তবে আন্তর্জাতিকভাবে তিমির বমির নাম অ্যাম্বারগ্রিস। স্পার্ম তিমির পেটে তৈরি হয় এই অ্যাম্বারগ্রিস। কালোবাজারে অ্যাম্বারগ্রিসের চাহিদা প্রচুর। যে কারণে অ্যম্বারগ্রিস পাচারে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত।  

 

স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, তিমির বমির এতো দাম কেন? এতে কী এমন থাকে? বা তিমির বমি বা অ্যাম্বারগ্রিস কী কাজে লাগে যে তার মূল্য কোটি কোটি টাকা? 

আমেরিকান ওশান ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মূলত, সুগন্ধি আর ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় অ্যাম্বারগ্রিস। বিশ্বের দামি দামি সুগন্ধির সতেজতার নেপথ্যে রয়েছে এটি। দুষ্প্রাপ্য পদার্থটি সুগন্ধির সুবাস বৃদ্ধি করে এবং সংরক্ষণ করে। সুগন্ধিতে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতেও এই অ্যাম্বারগ্রিস কার্যকরী। প্রচলিত চীনা ওষুধে ব্যবহৃত এটি। যে কারণে বিশ্ববাজারে এর চাহিদা আকাশচুম্বী।  

স্পার্ম তিমি বিরল প্রজাতির, হত্যা নিষিদ্ধ। দামি বস্তু, সহজে মেলেও না। তাই এটি নিয়ে জোরদার কালোবাজারি চলে। বিশেষ করে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ওঁত পেতে থাকে চোরাকারবারিরা। স্পার্ম তিমি শিকারীদের হাতে প্রাণও দেয়।

 

অ্যাম্বারগ্রিস অবশ্য খাবারের কোনো উপকরণ নয়। এরপরও একে খাদ্য মশলা হিসেবে ব্যবহারের কথা শোনা যায়। তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যেহেতু এটি তিমির পাচনতন্ত্রে সৃষ্টি হয়, এতে  বিপজ্জনক অণুজীব থাকে। তাই এটি মানুষের খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়।  

 

মূলত স্পার্ম তিমির পাকস্থলিতে মহামূল্যবান অ্যাম্বারগ্রিস তৈরি হয়। এটি তৈরি হতে অনেক সময় লেগে যায়। এ সময়টা বছরের বেশিও হতে পারে। স্পার্ম তিমি হাজার হাজার স্কুইড খায়। এসব স্কুইডগুলোর মধ্যে অনেকগুলো হজম হয় না। এগুলো পাকস্থলি ও অন্ত্রের মাঝখানের জায়গায় গিয়ে জমা হতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে জমা পড়ে থাকতে থাকতে আর তিমির অন্ত্রের বিভিন্ন রাসায়নিকে এসব স্কুইড অ্যাম্বারগ্রিসে পরিণত হয়। স্পার্ম তিমি পরে তা মুখ দিয়ে বের করে দেয়।  

যদিও অ্যাম্বারগ্রিস হাজার বছর ধরে সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর ব্যবহার কমে গেছে।  এর অন্যতম কারণ দুষ্প্রাপ্যতা, ব্যয়বহুল। তার ওপর রয়েছে আইনি প্রতিবন্ধকতা। অনেক দেশে স্পার্ম তিমি শিকার নিষিদ্ধ, এবং তাদের থেকে তৈরি পণ্যের ব্যবসায় কঠোর বিধান রয়েছে।

 

তাই অ্যাম্বারগ্রিস বর্তমানে মূল্যবান এবং বিরল উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়। 

তাবিব

×