ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির সময়ে কেঁদেছিলেন যে মার্কিন সৈন্যরা!

প্রকাশিত: ০২:১০, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির সময়ে কেঁদেছিলেন যে মার্কিন সৈন্যরা!

ছবি: সংগৃহীত।

২০০৪ সালের জুন মাসে সাদ্দাম হোসেনকে ইরাকি অন্তবর্তী সরকারের কাছে বিচারের জন্য হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন বাহিনী তাকে গ্রেফতার করেছিল। গ্রেফতার হওয়ার পর তার জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে পাহারা দেন ১২ জন মার্কিন সৈন্য।

এই ১২ জন আমেরিকান সৈন্য সাদ্দামের "বন্ধু" ছিলেন না, তবে তার মৃত্যুর সময় তারা হয়ে উঠেছিলেন তার জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। তাদের মধ্যে অন্যতম, উইল বার্ডেনওয়ার্প, যিনি বই লিখেছেন 'দা প্রিজনার ইন হিজ প্যালেস, হিজ অ্যামেরিকান গার্ডস, অ্যান্ড হোয়াট হিস্ট্রি লেফট আনসেইড' নামে। বাংলা করলে বইটির নাম হতে পারে 'নিজের প্রাসাদেই এক বন্দী, তাঁর আমেরিকান প্রহরী - ইতিহাস যে কথা বলেনি'- যেখানে সাদ্দামের শেষ সময়ের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।

বইয়ে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি কার্যকরের আগে যখন ওই ১২ জন সৈন্য তাকে জল্লাদদের কাছে পৌঁছে দেয়, তখন তাদের চোখে জল চলে এসেছিল। তারা নিজেরাই সাদ্দামের মৃত্যুর দৃশ্য দেখে শোকাহত হয়েছিলেন।

জেলখানায় তার শেষ সময়ে সাদ্দাম নিয়মিত মার্কিন গায়িকা মেরি জে ব্লাইজের গান শুনতেন, এক্সারসাইজ বাইকে চড়তে পছন্দ করতেন (যেটির নাম ছিল 'পনি') এবং মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসতেন, বিশেষ করে মাফিন।

বার্ডেনওয়ার্প তার বইয়ে লিখেছেন, সাদ্দাম তার শেষ সময়ে এমনভাবে আচরণ করতেন যেন তিনি একজন নিরীহ মানুষ, এবং তার মধ্যে সে ধরনের আচরণ ছিল না যা তার অতীত শাসকগিরি সম্পর্কে ধারণা দেয়। সাদ্দামের প্রিয় সিগার ছিল 'কোহিবা', যা কিউবার একটি বিশেষ ব্র্যান্ড, এবং সিগার খাওয়ার অভ্যাসে তিনি ফিদেল কাস্ত্রোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।

এছাড়া, সাদ্দামের একটি অন্যতম শখ ছিল বাগান করা। জেলের অযত্নে থাকা জংলী ঝোপঝাড়গুলোকেও তিনি সুন্দর ফুলের মতো দেখতেন। খাবারের ব্যাপারে সাদ্দাম খুব সংবেদনশীল ছিলেন এবং তিনি খুব বিশেষ পদ্ধতিতে নাস্তা খেতেন। উদাহরণস্বরূপ, তার অমলেট যদি ভেঙে যেত, তিনি সেটা খেতে অস্বীকার করতেন।

সাধারণত, সাদ্দাম তার প্রহরীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন, যদিও তাদের উপর কড়া নির্দেশনা ছিল যেন তারা সাদ্দামের সাথে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ না হয়। রক্ষীরা সাদ্দামকে খুশি রাখার জন্য প্রচেষ্টা করতেন, আর সাদ্দামও তাদের সঙ্গে হাস্যরস করতেন। কয়েকজন রক্ষী পরে বার্ডেনওয়ার্পকে জানিয়েছিলেন যে তারা বিশ্বাস করতেন, যদি কখনও কোনো বিপদে পড়েন, সাদ্দাম তার জীবন বাজি রেখে তাদের রক্ষা করতে প্রস্তুত ছিলেন।

২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ঈদুল আযহার দিনে, সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তার মৃত্যুর পর যখন তার মরদেহ বের করা হয়, তখন সেখানে উপস্থিত লোকজন তার মরদেহের ওপর থুতু ছিটিয়ে দেয়, যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন মার্কিন সেনারা। বিশেষ করে তারা, যারা সাদ্দামের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তারা এই অমানবিক দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন।

নুসরাত

×