.
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি...। সত্যি, বাংলাদেশের মতো আরেকটি দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না পৃথিবীতে। পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালিরা রুখে দাঁড়িয়েছিল। সাধারণ মানুষ সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে হায়েনাদের পরাজিত করেছিল। বিতাড়িত করেছিল। আবার নানা ছলনায় ভুলে হোঁচটও কম খায়নি। মুক্ত স্বাধীন দেশে একাত্তরের চেতনা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মার খেয়েছে। মার খাওয়া, ঘুরে দাঁড়ানো- দুটোই বাংলাদেশের বেলায় সত্য। তবে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আলাদা আবেগের। এই মাসে বাঙালি নতুন করে জেগে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিপুলভাবে উজ্জীবিত হয়। লাল সবুজের পতাকা উড়তে থাকে অলিগলি রাজপথে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা তুলে ধরা হয় বক্তৃতা সেমিনার মঞ্চ থেকে। টেলিভিশনে, পত্রিকার পাতায় পুনঃপ্রকাশিত হতে থাকে যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস। গান কবিতা নাটকের ভাষায় শিল্পীরা জনযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, রণাঙ্গনের লড়াই, আত্মত্যাগের মহিমা তুলে ধরেন। বিশেষ করে স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের গানগুলো বারবার বেজে ওঠে। শিল্পীদের কণ্ঠে গীত হয় : ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা কারো দানে পাওয়া নয়/দাম দিসি প্রাণ লক্ষ কোটি জানা আছে জগৎময়।... উনিশ শ একাত্তর সালে ষোলই ডিসেম্বর সকালে/অবশেষে দুঃখিনী এই বাংলা মা যে আমার হয়।’ একইভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গাইতে শোনা যায় : ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে/বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা/আমরা তোমাদের ভুলব না। নতুন স্বদেশ গড়ার পথে/তোমরা চিরদিন দিশারী রবে...।’ দেশমাতাকে ভরসা দিতে অভিন্ন আবেগ নিয়ে গাওয়া হয় : ‘ভেবনা গো মা তোমার ছেলেরা/হারিয়ে গিয়েছে পথে/ওরা আছে মা গো হাজার মনের বিপ্লবী চেতনাতে।’ বিপ্লবী চেতনা আঘাতপ্রাপ্ত হলে, যে কথা শুরুতে বলেছি, বাঙালি রুখে দাঁড়ায়। কণ্ঠে বেজে ওঠে : ‘তবু তরী বাইতে হবে/খেয়াপাড়ি দিতেই হবে/যতই ঝড় উঠুক সাগরে/তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিব রে।’
প্রতিবারের মতো এবারও সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে নতুন করে জেগে উঠবে বাঙালি। জেগে উঠার আহ্বানেই উদ্যাপিত হবে মহান বিজয় দিবস। তার আগে ১৪ ডিসেম্বর পালিত হবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হায়েনা এবং তাদের দোসর রাজাকার আলবদর আলশামসরা দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। ঢাকার কোন বাসাটিতে কোন বুদ্ধিজীবী বাস করেন সেই খোঁজ নিয়ে ঠিক পৌঁছে গিয়েছিল ঘাতকরা। আর তার পর বিজয়ের দিন রায়ের বাজার বধ্যভূমির ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছিল। এই সব ছবি এইসব স্মৃতি ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে পথ দেখাবে এই আশা নিশ্চয়ই আমরা করি।
কেমন আছে ঢাকার পুকুর ॥ রাজধানীতে এখনো কিছু পুকুর আছে। তবে এসব পুকুরের অবস্থা কতটা ভালো বা মন্দ তা সব সময় জানা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় সম্প্রতি কিছু তথ্য দিয়েছে বুয়েট। ঢাকা শহরের আটটি পুকুর নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উঠে এসেছে না জানা অনেক তথ্য।
বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ঢাকার আটটি পুকুরে এ গবেষণা চালান। পুকুরগুলো হলো এলেনবাড়ি পুকুর, লালমাটিয়া বিবি মসজিদ পুকুর, বংশাল পুকুর, টিকাটুলি এনটিআরএস পুকুর, সিক্কাটুলি পুকুর, আলুবাজার পুকুর, গোল তালাব পুকুর এবং কালীবাড়ি পুকুর। তিন শিক্ষার্থী আহমেদ ফারওয়া মাহরাফ সিদ্দিকী, অনিকা তাসনিম ও মিমোসা আহমেদ জানান, আলুবাজার পুকুরে বর্জ্যদূষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। বংশাল পুকুরে পাড় দখল, গাছপালা না থাকাসহ স্থানীয় লোকজনও স্বেচ্ছায় পুকুর রক্ষার কমিটিতে থাকতে চান না। গোল তালাব পুকুরের পাড়ে অবৈধ পার্কিংসহ সব সময় মানুষের ভিড় লেগে থাকে। শিক্ষার্থীরা জানান, সিক্কাটুলি পুকুরে বর্জ্যদূষণের সঙ্গে রয়েছে মালিকানা সমস্যা। টিকাটুলি পুকুরে পানিদূষণের পাশাপাশি চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। এলেনবাড়ি পুকুরের পানিও অপরিষ্কার। কালীবাড়ি পুকুরের পাড় ভেঙে যাচ্ছে, পানিও দূষিত। লালমাটিয়া বিবির মসজিদ পুকুরে দূষিত পানির সঙ্গে রয়েছে মশা ও কীটপতঙ্গ। এ প্রসঙ্গে রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলছেন, পুকুর রক্ষায় আন্দোলন-সংগ্রাম তেমন একটা নেই। ফলে বিভিন্ন সময় পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানও পুকুর ভরাট করে স্থাপনা করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরও তাদের ভবনের সামনের পুকুর ভরাট করে ফুলের বাগান করেছে। সব মিলিয়ে পুকুরগুলো ভালো নেই। ভালো রাখা উচিত। এটা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।