ছবি: সংগৃহীত
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বিভিন্ন ভাষণ ও বিবৃতিতে বারবার সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
১৯২৮ সালে কুষ্টিয়ার এক সমাবেশে তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, 'হিন্দু-মুসলমান ঐক্য ছাড়া স্বাধীনতা অসম্ভব। কোনো সমস্যায় মতের অমিল হলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।'
তিনি বলেছিলেন, ‘‘হিন্দু ও মুসলমানের স্বার্থ অভিন্ন, আর এই বিভেদের প্রচারে যাঁরা ব্যস্ত তাঁরা ভুল করছেন। খাদ্যাভাব, বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব - এ সমস্ত সমস্যা সকলেরই।’’
১৯২৮ সালের ২৬ মার্চ কুষ্টিয়ায় আরও একটি ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন, ‘হিন্দু-মুসলমানের সংঘর্ষে লাভবান হয় কেবল সরকার। কারাগারে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একই সঙ্গে দণ্ড ভোগ করেন। এই দ্বন্দ্ব দূর করতে হবে নিজেদের উদ্যোগেই।’
১৯৩৮ সালের ১৪ জুন কুমিল্লার এক সমাবেশে নেতাজী বলেন, ‘হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে ‘হিন্দুরাজের’ কথা বলা অলস চিন্তা ছাড়া কিছুই নয়। সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি বেকারত্ব, দারিদ্র্য বা শিক্ষার অভাবের মতো সমস্যার সমাধানে কোনো পথ দেখাতে পারবে না।’
তিনি হিন্দু মহাসভার সমালোচনা করে বলেন, ‘ত্রিশূল হাতে ধর্মকে কলুষিত করে ভোট চাইছে তারা। হিন্দুদের উচিত এর নিন্দা করা।’
নেতাজী আরও বলেন, ‘হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লিগের মতো সংগঠনগুলি চরম সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসে এমন সদস্যদের জায়গা নেই।’
তাঁর মতে, 'সাম্প্রদায়িক বিভাজন রুখতে প্রয়োজন ধর্মনিরপেক্ষ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা।'
আজাদ হিন্দ ফৌজের গঠনেও নেতাজীর অসাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রতিফলিত হয়। আইএনএ’র সংগীত রচনা করেছিলেন একজন মুসলমান এবং তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গীরা ছিলেন শাহনওয়াজ খান, এমজেড কিয়ানি ও আবিদ হোসেনের মতো মুসলমান সেনানায়ক।
তিনি সব ধর্মের ঐতিহ্যকে সম্মান দিয়ে, পারস্পরিক সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন। ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য বিবেকানন্দের আদর্শ থেকে তিনি গভীর প্রেরণা পেয়েছিলেন।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর জীবন ও কাজের মাধ্যমে বারবার প্রমাণ করেছেন যে ভারতীয় সমাজে সাম্প্রদায়িকতা ও বিভাজনের কোনো স্থান নেই।
মেহেদী কাউসার