ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

পিঠায় খেজুরের রসে উৎসবের আমেজ  

আগেভাগে দাপুটে শীত,  উষ্ণ জামাকাপড়ে  মোকাবিলার প্রস্তুতি 

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ২২:০৬, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

আগেভাগে দাপুটে শীত,  উষ্ণ জামাকাপড়ে  মোকাবিলার প্রস্তুতি 

.

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে পৌষ মাঘ দুই মাস শীতকাল। পৌষের প্রথম দিন থেকে শীতের আনুষ্ঠানিক শুরু হয়। আর মাঘের শীতে, বলাই বাহুল্য, বাঘ পালায়! তবে হুট করে শীত নামে না। ধীরে ধীরে। অগ্রহায়ণে শিশির ঝরতে থাকে। বিস্তার ঘটতে থাকে কুয়াশার। গরম কমে ক্রমশ প্রকৃতি শীতল হয়। এবারও অগ্রহায়ণের অভিন্ন চরিত্র। শীতের বাহন হিসেবে যথারীতি কাজ করছিল। আর এখন মাসের শেষ পর্যায়। আজ বুধবার ২৬ অগ্রহায়ণ। ফলে পুরোদমে নেমে পড়েছে শীত। যান্ত্রিক নগরী ঢাকায় বসেও ভালো টের পাওয়া যাচ্ছে। 
এরই মাঝে প্রকৃতিতে পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন এসেছে প্রতিদিনের জীবনেও। রাজধানীবাসী একদিকে শীত উপভোগ করছেন। অন্যদিকে ভাবতে হচ্ছে প্রতিরোধের বিষয়টিও। এখন আর শুধু শার্ট প্যান্ট বা শাড়ি জামা গায়ে জড়িয়ে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ পোশাকের ওপর উষ্ণ কাপড় পরতে হচ্ছে। সুয়েটার কোট বা চাদরের পাশাপাশি গলায় মাফলার পেঁচিয়ে নিতেও ভুল করছেন না অনেকে। আর হাত তো আপনি ঢুকে যাচ্ছে পকেটে। ত্বকের বা ঠোঁটের যতœ অন্য সময় না নিলেও এখন নিতে হচ্ছে। খাবার খেতে হচ্ছে বারবার গরম করে।  
হিমেল বাতাসের কারণেও ঠান্ডাটা বিশেষ অনুভূত হচ্ছে। তবে সামনে আছে শৈত্যপ্রবাহ। একটি দুটি নয়, আবহাওয়া অফিস বলছে, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২টি শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়বে দেশ। চারটি শৈত্যপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। আর শৈত্যপ্রবাহ মানেই হাড় কাঁপানো শীত। শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি তিন থেকে আটটি মৃদু (০৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস), মাঝারি (০৬ থেকে ০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে তিন থেকে চারটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহে (৪ থেকে ৬ ডিগ্রি  সেলসিয়াস) রূপ নিতে পারে। একই সময়ে শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা বা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। কখনো কখনো উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। 
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলছেন, এবার শীত একটু বেশি পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শৈত্যপ্রবাহগুলো শীত বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। আছে শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনাও। তাই প্রস্তুতির ব্যাপারে আর হেলাফেলা না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।  
রাজধানী ঢাকায় শীতের কেনাকাটা দেখেও বোঝা যায়, কেউ বসে নেই। সবাই উষ্ণতার খোঁজ করছেন। শীতবস্ত্র কেনার ধুম পড়েছে মার্কেট শপিংমল এবং ফুটপাতে। অনেকে ঐতিহ্য মেনে নিজের হাতে শীতবস্ত্র বুনে নেন। এ জন্য কিনতে হয় উলের সুতা। গুলিস্তানে নানা রঙের উলের সুতার পসরা বসেছে। শীত থেকে পা বাঁচাতে চাই জুতা। জুতার বিক্রিও বেশ জমজমাট। 
এ সবের বাইরে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে শীতের পীঠা তৈরি হচ্ছে। এমনকি রাজধানীর কোনো কোনো সুপারশপে গরম গরম পীঠা করে খাওয়ানো হচ্ছে। গত রবিবার গুলশানের ইউনিমার্টে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখে রীতিমতো অবাক হতে হলো। বাঙালি ক্রেতারা তো ছিলেনই, বিদেশী ক্রেতারাও শখ করে শীতের পীঠা মুখে পুরছিলেন। ঢাকার ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে পীঠা। শীত বাড়লে গাছ থেকে নামানো শুরু হয়ে যায় খেজুরের রস। এই রসও অনেকে পান করছেন। এভাবে শীত উপভোগ এবং শীত থেকে বাঁচার নানা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে ঢাকায়। 

জোবায়ের আহমেদ

×