ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

সারাদেশে ভ্যাট সপ্তাহ শুরু

এনবিআরের কর ছাড় দেওয়ার ব্যাপক সমালোচনা করলেন অর্থ উপদেষ্টা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:১৯, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

এনবিআরের কর ছাড় দেওয়ার ব্যাপক সমালোচনা করলেন অর্থ উপদেষ্টা

.

এনবিআরের কর ছাড় দেওয়ার ব্যাপক সমালোচনা করে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের এই সুবিধা নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, বিগত ৫০ বছর ধরে আমরা কর ছাড় দিয়ে শিশু লালনপালন করছি, আর কতকাল লালন করব? আমি উদাহরণ দিলাম। আপনারা অনেকেই বুঝতে পারবেন। 
মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। আগারগাঁও এনবিআর ভবনে এ অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে শিশুদের এতদিন ধরে লালনপালন করা হয়েছে, তারা এখন শারীরিকভাবে বড় হয়ে গেছে। তারা এখনো বলে, আমাদের সুরক্ষা দিন, কিন্তু সুরক্ষার দিন তো চলে গেছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত  দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বেরিয়ে আসবে, যাকে বলে এলডিসি উত্তরণ হবে। তাই কর ছাড়ের এসব সুবিধা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থ উপদেষ্টা কর কর্মকর্তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জোর করে কর আদায় করবেন, তা নয়।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, যেখানে কর প্রতিপালন হবে না, সেখানে কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, করদাতাদের  যেন কর কার্যালয়ে আসতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত না বাড়লে এত সম্পদের জোগান কোথা থেকে আসবে। আমাদের কর জিডিপি অনেক কম। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের থেকে অনেক কম। এ নিয়ে বিভিন্ন দাতাসংস্থা থেকে সব সময়ই কথা শুনতে হয়। আশা করি, এ বিষয়ে এনবিআর ব্যাপক কাজ করবে। বাজেট ডেফিসিট আমরা পূরণ করি ঋণ নিয়ে। রেভিনিউ কমে গেলে ঋণ বেড়ে যাবে। আমরা ঋণে জর্জরিত হয়ে যাব। এ জন্য অনেক সময় আয় দেখে ব্যয় কমাই। কিন্তু এতে উন্নয়ন কাজ কমে যায়। আমাদের গ্রোথ ধরে রাখতে রেভিনিউ বাড়াতে হবে।
এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট সংগ্রহের কাজটি যতটা সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে করবে, রাজস্ব আদায় তত গতিশীল হবে। আমরা যারা কেনাকাটা করি, তাদের মধ্যে ভ্যাট দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। ইপিজেড বা অন্যান্য জায়গায় যারা ব্যবসা শুরু করে, স্টার্টআপ আছে তাদের জন্য দুই-তিন বছর ভ্যাটেও অব্যাহতি দেওয়া যায় কি না তাও এনবিআর দেখতে পারে বলে মন্তব্য করেন হাফিজুর রহমান। উল্লেখ্য, পৃথিবীতে যেসব দেশের কর-জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কম, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশে এখন কর-জিডিপির অনুপাত আট শতাংশের নিচে। এই কর জিডিপির অনুপাত কম হওয়ার অন্যতম কারণ হলো বছরের পর বছর ধরে দিয়ে যাওয়া করছাড় বা অব্যাহতি। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাট অবকাশ বন্ধ করা ও সব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করাসহ নিয়মনীতি পরিপালন করা গেলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করা যেত। কিন্তু ওই বছর আদায় হয়েছিল ৮৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, সম্ভাবনা ও আদায়ের মধ্যে ঘাটতি ছিল প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। 

জোবায়ের আহমেদ

×