ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞান বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জানাচ্ছে, প্রতিটি মানুষ তাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে পারে! কিছু দক্ষতাপূর্ণ কাজ শেখার মাধ্যমে এবং সেই সকল কাজ প্রতিনিয়ত চর্চা ও রপ্ত করার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে খুব চমকপ্রদভাবে।
যেকোন ধরনের বই পরার ফলে মস্তিষ্কের উপরে বেশ ভালোমতো ইতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে। আপনি যদি ‘দ্যা লর্ড অফ দ্যা রিংস’ পড়েন অথবা ‘কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’পড়েন- উভয় ক্ষেত্রেই আপনার মস্তিষ্কের উপরে একই ধরনের ইতিবাচক প্রভাব এর সৃষ্টি হবে। বই পড়ার ফলে তিন ধরনের ধরনের বুদ্ধিবৃত্তি একই সাথে যোগ হয়। এর ফলে তথ্য, সমস্যার সমাধান, নেতিবাচক সমস্যার উপযুক্ত সমাধান, সঠিক ধরণ চিহ্নিতকরণ, মানুষের সাথে ভালো বোঝাপড়া তৈরি করার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে থাকে।
যে ১০ টি বই আপনার আইকিউ বাড়াতে সাহায্য করবে-
থিংকিং, ফাস্ট অ্যান্ড স্লো (ড্যান কানমান)
ব্যবসায় সফলতার জন্য সঠিক মানসিকতা জরুরি। এই বই লেখা হয়েছে সে মানসিকতা উন্নয়নের উদ্দেশ্যে। বইটি পড়লে জানা যাবে কৌশলগত দিক ঠিক রেখে কীভাবে দ্রুত এবং ধীরগতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কখনো খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। আবার কখনো ধীরে, অনেক ভাবনা-চিন্তা করে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তে আসতে হয়। ড্যান কানমান বইটির পাঠকদের জন্য দ্রুতগতি এবং ধীরগতি দুটি পথই খোলা রেখেছেন।
স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে লেখাগুলো পড়তে থাকা আপনি একজন মানুষ, আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে আপনি একজন হোমো স্যাপিয়েন্স (Homo sapiens), অথচ এক লক্ষ বছর আগে এই পৃথিবীতে বিচরণ করেছে হোমো (Homo) গণভুক্ত (Genus) আরো অন্তত ছয়টি মানব জাতিগোষ্ঠী, আর আজ সর্বত্র জয়জয়কার আপনার প্রজাতিটিরই। কিন্তু কেন?
মানবজাতির আজকের পৃথিবীব্যাপী আধিপত্যের শুরু থেকে বর্তমানের যাত্রার বিভিন্ন ঐতিহাসিক ধাপকে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরা হয়েছে ‘স্যাপিয়েন্স: আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব হিউম্যানকাইন্ড’ বইটির পাতায় পাতায়। শুধু তুলে ধরা হয়েছে বললে ভুল হবে, বইটির লেখক গল্পের মতো করে উপস্থাপন করেছেন আমাদের পূর্বপুরুষদের বর্তমান অবস্থায় আসার বিভিন্ন ঘটনাকে, যা অন্যান্য বিবর্তনবাদের বই থেকে আলাদা। বইটির মাধ্যমে প্রচলিত বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন জাগিয়ে তোলার সার্বক্ষণিক চেষ্টা করেছেন জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড. ইউভাল নোয়া হারারি।
দি আর্ট অব থিংকিং ক্লিয়ারলি:
এটি হলো সুইস লেখক রল্ফ ডবেলি রচিত ২০১৩ সালে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার একটি বই, যেখানে লেখক ছোট ছোট ৯৯টি অধ্যায়ে চেতনাগত প্রবণতা (কগনিটিভ বায়াস) থেকে শুরু করে ঈর্ষা ও সামাজিক বিকৃতি প্রভৃতি থেকে মানবিক চিন্তাভাবনার দুর্বলতা খুঁজে বের করেছেন। বইটি জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় কলাম আকারে ও পরবর্তীতে জার্মানিতে দুইটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। বইটি টানা ৮০ সপ্তাহ জার্মানির দেঅ শ্পিগলের বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় শীর্ষ দশে ছিল। এই সময়ে বইটি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের বাইরে বইটি যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ইরানে বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় শীর্ষ দশে ছিল। লেখক নাসিম নিকোলাস তালিব এই বইয়ের অংশবিশেষ তার লিখিত অ্যান্টিফ্র্যাজাইল-এর পাণ্ডুলিপি থেকে চুরি করে লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
মুনওয়াকিং উইথ আইনস্টাইন: দ্য আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স অফ রিমেম্বারিং এভরিথিং একটি নন - ফিকশন বই ,যা 2011 সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ।
এই বইয়ের বিষয়ে বিল গেটস জানিয়েছেন, এই বইটির কারণে অনুভব করেন যে তিনি এখনো তার স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটাতে পারেন। বইটিতে মার্কিন মেমরি চ্যাম্পিয়নশিপের বিবরণ এবং লেখক কোন কৌশল ব্যবহার করে প্রতিযোগিতাটি জিতেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন
আত্মউন্নয়নমূলক বই দ্য পাওয়ার অব নাউ। বইটি এ পর্যন্ত দশ মিলিয়ন কপির বেশি বিক্রি। হয়েছে। অসংখ্য মানুষ এ বইটির প্রশংসা করেছেন। বইটি মানুষের মন নিয়ে। আর জোর দেয়া হয়েছে বর্তমান সময়কে। বর্তমান সময় অর্থাৎ এখন। বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে এখনএর অগাধ শক্তিকে। বলা হয়েছে বর্তমানের সঙ্গে থাকুন। অতীত বা ভবিষ্যত নয়, একমাত্র। বর্তমানই পারে আপনাকে আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে দিতে।। দ্য পাওয়ার অব নাউ গতানুগতিক আত্মউন্নয়নমূলক বই নয়। এ বইতে আধ্যাত্মিক বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
চিরকাল স্থায়িত্ব ছাড়াও কখনও কখনও একটি বই মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে পারে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করার এমন একটি বই নিয়ে এই আয়োজন। পৃথিবীব্যাপী ব্যাপকভাবে সমাদৃত স্টিভেন আর. কোভের ‘সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি ইফেক্টিভ পিপল’ বইটিতে খুব সুন্দর করে বোঝানো হয়েছে আসলেই জীবনকে অর্থবহ করে তোলার জন্য কীভাবে আমরা তৈরি করব নিজেদের। বইয়ে সবগুলো অভ্যাসের সাথে সফল ব্যক্তিদের জীবনদর্শনের মিল দেখানো হয়েছে নানা ধরনের গল্পের মাধ্যমে। যখন গেটস প্রথম ওয়ারেন বাফেটের সাথে একটি ডিনারে দেখা করেছিলেন, তখন হোস্ট টেবিলে থাকা সকলকে জিজ্ঞাসা করেন যে- তারা জীবনকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক কারণ হিসেবে কী দেখেছেন।
ম্যানস সার্চ ফর মিনিং:
এই বই এটা বলে না যে জীবনের উদ্দেশ্য কি! একেকজন মানুষ একেভাবে জীবনের উদ্দেশ্য বের করে। বইয়ে বলা হয়েছে যদি আপনার জীবনে উদ্দেশ্য থাকে তাহলে তা আপনাকে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যায়।
টিপিং পয়েন্ট:
এই বইটি মূলত সামাজিক পরিবর্তনের কথা বলে। টিপিং পয়েন্ট এর ধারণা মূলত মানুষের ধারণা বা আচরণের মাধ্যমে সমাজে বিস্তৃতি লাভ করে।
আউটলাইয়ারস:
ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েলের লেখা ‘আউটলায়ার্স’ বইটি কিছু প্রচণ্ড সাফল্যের পেছনের গল্প তুলে ধরে। আমরা বেশিরভাগ সময়েই সাফল্যের সাথে ব্যক্তির গুণাবলীকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ভেবে থাকি। আমাদের ধারণা এমন যে, সফল ব্যক্তিরা শূন্য থেকে শুরু করে শুধুমাত্র নিজের যোগ্যতাবলে প্রচন্ড জায়ান্ট হয়ে ওঠেন। কিন্তু লেখক ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল মনে করেন এটা সাফল্যের অনেক বেশি ভাবপ্রবণ একটা ধারণা। তিনি কিছু কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, সবচেয়ে সফল ব্যক্তিরা ভাগ্য বা অন্য কিছুর সাহায্য পেয়েছিলেন যেটা তাদেরকে সফল হওয়ার পথ চিনে নিতে, কাজ করতে এবং পৃথিবীটা এমনভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে যেটা অন্য সাধারণ মানুষদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে সবসময়।
কুআইট:
এই বইটি সমাজের তথাকথিত ধারণাকে ভেঙে দেয়। এটি ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিদের অবদানকে দেখায় আবার একই সাথে এক্সট্রোভার্ট ব্যক্তিরাও সফল এটাও দেখায়
ইসরাত