ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বাড়ির কাছে আরশিনগর

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২৯ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৮:১৪, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

বাড়ির কাছে আরশিনগর

পূণ্যসেবা গ্রহণের পর নিজ আশ্রমে ফিরে যাচ্ছেন সাধুরা

‘বাড়ির পাশে আরশীনগর সেথা একঘর পড়শী বসত করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তাঁরে’Ñ ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়, ধরতে পারলে মনোবেড়ি দিতাম পাখির পায়’ কিংবা ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি’ এমন অসংখ্য মরমী গানের স্রষ্টা বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ। বাংলার বাউল সঙ্গীতের ক্ষেত্রে লালনের নাম আজ অবিস্মরণীয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে তাঁর নাম আজ বহির্বিশ্বেও প্রচারিত। লালনের গানে কেবল অধ্যাত্ম দর্শনই নয়, বাংলার সমাজ, প্রকৃতি ও মানুষের কথাও প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর গান পল্লীবাংলার হাজার হাজার মানুষকে করেছে মুগ্ধ। লালন আজ লৌকিক বাংলার কিংবদন্তির সংগীত নায়ক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি। যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তাঁকে ভাবজগতের রাজা ও বাংলার বাউলের শিরোমণিও বলা হয়।
বাউল গানের বিপুল লোক-প্রিয়তার মূলে তাঁর অবদান সর্বাধিক ও সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রায় দুই শতাব্দীকাল লালনের গান বাঙালির মরমী-মানসের অধ্যাত্ম-ক্ষুধা ও রস-তৃষ্ণা মিটিয়ে আসছে। লালন একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক পুরুষ, সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক ও মানবতাবাদী সাধক। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সকল প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে দিয়েছেন সর্বোচ্চ স্থান। অসাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকেই তিনি তাঁর গান রচনা করে গেছেন। অসংখ্য মরমী গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক তিনি।
লালনের জীবন-কাহিনী অনেকাংশেই রহস্যাবৃত। তাঁর জীবনের ধারাবাহিক ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে গবেষক ও ইতিহাসবিদদের বিভিন্ন তথ্য, জনশ্রুতি বা অনুমানের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তাই লালনের জন্ম, জাত ও ধর্ম নিয়ে গবেষকদের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট মতভেদ। লালন নিজেও তাঁর জাত-ধর্ম সম্পর্কে নিস্পৃহ ও উদাসীন ছিলেন। জাত ও ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে তিনি নিজেই জবাব দিয়েছেন, ‘সব লোকে কয়  লালন কি জাত সংসারে, লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলাম না এই নজরে। সুন্নত দিলে হয় মুসলমান, নারীলোকের কি হয় বিধান? বামন চিনি পৈতে প্রমাণ, বামণী চিনি কি করে? কেউ মালা কেউ তসবিহ গলে, তাইতে কি জাত ভিন্ন বলে’? লালন কোনো ধর্মের অনুসারী ছিলেন না। কিন্তু সকল ধর্মের মানুষের সঙ্গেই তার ছিল নিবিড় সম্পর্ক।


লালনের মৃত্যুর ১৫ দিন পর অমর কথাশিল্পী ঔপন্যাসিক মীর মশাররফ হোসেন সম্পাদিত ও কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত ‘হিতকরী’ পত্রিকা ১৮৯০ সালের ৩১ অক্টোবর সংখ্যার তথ্য মতে, ‘লালন নিজে কোনো সাম্প্রদায়িক ধর্মালম্বী ছিলেন না। অথচ সকল ধর্মের লোকেই তাঁকে আপন বলে জানতো। লালন ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর (বাংলা ১২৯৭ সালের ১ কার্তিক) শুক্রবার ভোর ৫ টায় ১১৬ বছর বয়সে কুষ্টিয়া শহরের পূর্ব প্রান্তে বিলুপ্ত কালীগঙ্গা নদীর তীরে ছেঁউড়িয়ার নিজ আখড়ায় দেহত্যাগ করেন। তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী সেখানেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়’। ‘হিতকরী’ পত্রিকা থেকে জানা যায়, ‘লালনের শিষ্য-সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল এবং তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বাংলাদেশে। এক-অর্থে লালন তাঁর জীবৎকালেই কিংবদন্তির নায়ক হয়ে উঠেছিলেন’। ওই পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, ‘ইহার জীবনী লিখিবার কোনো উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছু বলিতেন না। শিষ্যরা তাঁহার নিষেধক্রমে বা অজ্ঞতাবশতঃ কিছুই বলিতে পারে না।’ লালনের জন্ম কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাঁর সবচেয়ে অবিকৃত তথ্যসূত্র তাঁর নিজের রচিত ২৮৮টি গান। কিন্তু লালনের কোনো গানে তার জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য রেখে যাননি। তবে কয়েকটি গানে তিনি নিজেকে ‘লালন ফকির’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিছু সূত্র ও কোনো কোনো গবেষকের মতে, লালন শাহ ১৭৭৪ সালে তৎকালীন অবিভক্ত নদীয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া) জেলার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত গড়াই নদীর তীরবর্তী ভাড়ারা গ্রামের (চাপড়া গ্রাম সংলগ্ন) এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কুল উপাধি ‘কর’। তাঁর পিতার নাম মাধব কর ও মাতা পদ্মাবতী। মতান্তরে, লালন যাশোর জেলার হরিনামুন্ড থানার (বর্তমান ঝিনাইদহ) হরিশপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে ১৭৭৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দরিবুল্লাহ দেওয়ান ও মাতার নাম আমিনা খাতুন। লালন ছিলেন পিতা মাতার একমাত্র সন্তান। আর্থিক সংকটের কারণে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করতে পারেননি। শৈশবে পিতৃ বিয়োগ হওয়ায় অল্প বয়সেই তাঁর ওপর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে। ইতোমধ্যেই তাঁর বিয়ে হয়। সাংসারিক চিন্তা ও আত্মীয়বর্গের বৈরিতা তাকে বিশেষভাবে পীড়িত করে তোলে। আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় লালন তাঁর মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়ারা গ্রামের অভ্যন্তরেই দাসপাড়ায় স্বতন্ত্রভাবে বসবাস শুরু করেন।
হিতকরী পত্রিকার নিবন্ধে বলা হয়, একবার লালন অন্যান্য সঙ্গীসহ মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে গঙ্গাস্নান বা তীর্থভ্রমণে যান। মতান্তরে, নবদ্বীপে গঙ্গাস্নান বা তীর্থভ্রমণে যান। এই গঙ্গাস্নান বা তীর্থভ্রমণ শেষে নৌকাযোগে গৃহে ফেরার পথে লালন গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। এক পর্যায়ে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন। তখন সঙ্গীরা মৃত ভেবে লালনকে পরিত্যাগ করে ভাড়ারা গ্রামে ফিরে গিয়ে তাঁর মা ও স্ত্রীর কাছে লালনের মৃত্যুর সংবাদ পরিবেশন করেন। এদিকে কালিগঙ্গা নদীতে ভেসে আসা মুমূর্ষু লালনকে উদ্ধার করেন মলম শাহ। মলম শাহ ও তার স্ত্রী মতিজান তাকে বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রƒষা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এরপর লালন তার কাছে দীক্ষিত হন এবং ছেঁউড়িয়ায় স্ত্রী ও শিষ্যসহ বসবাস শুরু করেন। গুটিবসন্তে লালন একটি চোখ হারান। ছেঁউড়িয়াতে তিনি দার্শনিক গায়ক সিরাজ সাঁইয়ের সাক্ষাতে আসেন এবং তার দ্বারা প্রভাবিত হন। এরপর সুস্থ হয়ে লালন ভাড়ারায় নিজ গৃহে ফিরে গেলে ঘটনার আকস্মিকতায় তার মা ও স্ত্রী আনন্দ বেদনা এবং বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েন। কিন্তু গ্রামের সমাজপতি ও আত্মীয় স্বজনরা মুসলমানের গৃহে অন্নজল গ্রহণের অপরাধে এবং পারলৌকিক অনুষ্ঠানাদি সম্পন্নের পর তাকে সমাজে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। সমাজ ও স্বজনের প্রত্যাখ্যাত লালন ব্যথিত ও অভিমানে ক্ষুব্ধ হয়ে চিরতরে গৃহত্যাগ করেন। এই ঘটনায় সমাজ সংসার, শাস্ত্র-আচার ও জাত ধর্ম সম্পর্কে লালন বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। এখান থেকেই তার মনে বৈরাগ্য ভাবের উদয় হয়। গৃহত্যাগের সময় লালনের স্ত্রী তাঁর অনুগামিনী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সমাজ সংসার অনুকূল না হওয়ায় তার সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। এর কয়েক বছর পরে লালনের স্ত্রী ইহলোক ত্যাগ করেন।


বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও লোকসাহিত্য বিশারদ ড. আবুল আহসান চৌধুরী তাঁর লিখা ‘লালন শাহ’ বইয়ে উল্লেখ করেন, সমাজ-সংসার বিচ্যুত লালন যৌবনের মধ্যভাগে গৃহত্যাগ করে সিরাজ সাঁই নামের এক তত্ত্বজ্ঞসিদ্ধ বাউল গুরুর সান্নিধ্যে এসে বাউল মতবাদে দীক্ষা গ্রহণ করেন। লালন গুরু সিরাজ সাঁইয়ের পরিচয় নিয়েও মতভেদ রয়েছে। বাউল মতবাদে দীক্ষা গ্রহণের পর গুরুর নির্দেশে লালন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামে এসে বাংলা ১৮২৩ সাল মতান্তরে ১৮৩০ সাল নাগাদ আখড়া স্থাপন করেন। অল্প দিনের মধ্যেই লালনের প্রভাব ও পরিচিতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময়ে বহু লোক তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দীক্ষালাভের পর লালন ‘ফকির’ নাম গ্রহণ করে ছেঁউড়িয়া গ্রামের গভীর বনের ভেতর একটি আম গাছের নিচে বসে সাধনায় নিযুক্ত হন। তিনি বন হতে তেমন বের হতেন না। এ সময় স্থানীয় কারিকর সম্প্রদায় লোকজনের উদার সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন তিনি। তাদের দানে-অনুদানেই সেখানে আখড়াবাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়। কিছুকাল পরে লালন একজন বিধবা বয়নকারিনী মুসলমানকে নেকাহ করেন এবং পানের বরোজ করে তার ব্যবসা করতে থাকেন। এ সময় ফকির নির্জ্জন স্থানে বসে নিজতত্ত্বে মগ্ন থাকতেন এবং গান রচনা করতেন। লালন তার শিষ্যদের সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন ও তাঁর মতবাদ প্রচার করতেন। ছেঁউড়িয়ায় আখড়া স্থাপনের পর সেখানে তিনি তার শিষ্যদের নীতি ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতেন। তাঁর শিষ্যরা লালনকে ‘সাঁই’ বলে সম্বোধন করতেন। তিনি প্রতি শীতকালে আখড়ায় একটি মহোৎসব আয়োজন করতেন। এই উৎসবে সহস্রাধিক শিষ্য ও সম্প্রদায়ের লোক একত্রিত হতেন এবং সেখানে সংগীত ও আলোচনা হতো।
চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর এবং পশ্চিমে বিভিন্ন স্থানের বহুসংখ্যক লোক লালন ফকিরের শিষ্য ছিলেন। তখন তাঁর শিষ্যের সংখ্যা দশ হাজারের বেশি ছিল। গবেষক ড. আবুল আহসান চৌধুরীর বইয়ের তথ্য মতে, লালন সাঁই সঙ্গীত রচনার অন্তর প্রেরণা তিনি যেভাবে লাভ করতেন, ‘তাঁহার অন্তঃকরণের ভাবরাশি যখন দুকূল প্লাবিনী তটিনীর ন্যায় আকুল উচ্ছ্বাসে উথলিয়া উঠিত, তখন তিনি আর আত্মসংবরণ করিতে পারিতেন না, শিষ্যগণকে ডাকিয়া বলিতেন, ‘ওরে আমার পুনা মাছের ঝাঁক এসেছে’ শুনিবামাত্র শিষ্যগণ যে যেখানে থাকিত ছুটিয়া আসিত। তখন সাঁইজী তাঁহার ভাবের আবেশে গান ধরিতেন। শিষ্যেরাও যন্ত্রাদির তান লয়ে সঙ্গে সঙ্গে গাহিয়া চলিত। ইহাতে আর সময় অসময় ছিল না। সর্বদাই এই ‘পুনা মাছের ঝাঁক’ আসিত। লালন মুখে মুুখে গান রচনা করতেন। আর শিষ্যরা সেগুলো খাতায় লিখে রাখতেন। লিপিকারের কাজ করতেন মানিক শাহ ওরফে মানিক পন্ডিত ও মনিরুদ্দীন শাহসহ লিখাপড়া জানা শিষ্য-ভক্তরা। লালনের দীর্ঘ জীবন সাধনা সঙ্গীতেই নিবেদিত ও সমর্পিত ছিল। তাই অন্তিম মুহুর্তেও পরম পুুরুষের উপলব্ধিতে তাঁর কণ্ঠে জেগেছিল গান লোকান্তরের পাথেয় প্রার্থনায়ঃ ‘পার কর হে দয়াল চাঁদ আমারে, ক্ষম হে অপরাধ ভবকারাগারে’। সাধক লালনের মর্ম পরিচয় তার গানেই প্রতিফলিত। তাকে জানতে বা চিনতে হলে তাঁর গানই একমাত্র অবলম্বন ও সহায়ক।
ছেঁউড়িয়া গ্রামে আখড়া স্থাপনের পর জীবনের অন্তিমপর্ব পর্যন্ত লালন ফকির সেখানেই সার্বক্ষণিক শিষ্যভক্ত পরিবৃত থাকতেন। কেবল শিষ্য ভক্তই নয়, অনুরাগী শিক্ষিত-সুধীজনের আগমনও ঘটতো সেখানে। বার্ধক্যজনিত শারীরিক অসুবিধা ব্যতীত লালন জীবন সায়াহ্নে পৌঁছেও বেশ শক্ত সমর্থ ছিলেন। মৃত্যুর কিছু পূর্বে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত্যুর পূর্ব রাতেও প্রায় সমস্ত সময় গান করে তিনি ভোর ৫টার সময় শিষ্যগণকে বলেন, ‘আমি চলিলাম’। লালনের অন্তিম মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে ‘মহাত্মা লালন ফকির’ এর লেখক শ্রীবসন্ত কুমার পাল লিখেছেন, ‘বঙ্গীয় ১২৯৭ অব্দের কার্ত্তিকের প্রথম প্রত্যুষা, শর্ব্বরীর তিমিরাবগুণ্ঠন এখনও উম্মোচন হয় নাই, তাই বাড়িঘর, পথঘাট, উদ্যান প্রান্তর গার্শির আলোক মালায় উজ্জ্বোরিত; কোথাও হরিসঙ্কীর্তন, কোথায় বা শঙ্খধ্বনি, গার্শির মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে জড়তা পরিহার করিয়া গ্রামবাসীগণ সকলেই এখন জাগ্রত। এই সময় লালন স্বগৃহে রুগ্ন শয্যায় শায়িত কিন্তু নিষ্ক্রিয় বা নীরব নহেন-শিষ্যগণসহ তন্ময় চিত্তে অন্তিম সংগীত ‘পার কর হে দয়াল চাঁদ আমারে, ক্ষম হে অপরাধ আমার ভবকারাগারে’ গাহিয়া চলিতেছেন। প্রভাত রশ্নি পূর্বশার অন্তর ফুটিয়া লোকলোচনে দর্শন দিল, সাঁইজীর সংগীতত্ত্ব শেষ হইল, স্বরলহরী থামিয়া গেল, সমস্ত গৃহতল নীরব নিস্তব্ধ, ইহার পর শিষ্যগণকে সম্বোধন করিয়া ‘আমি চলিলাম’ বলিয়া তাঁহার কণ্ঠ হইতে শেষ স্বর উচ্চারিত হইল, নেত্রদ্বয় নিমীলিত করিলেন, সমাজ পরিত্যক্ত দীন ফরিরের জীবন নাট্যের যবনিকাপাত হইল।’ তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিবরণ দিয়ে সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ‘হিতকরী’ পত্রিকা লিখেছে, ‘মৃত্যুকালে কোন সম্প্রদায়ী মতানুসারে তাঁহার অন্তিমকার্য্য সম্পন্ন হওয়া তাঁহার অভিপ্রায় ও উপদেশ ছিল না। তজ্জন্য মোল্লা বা পুরোহিত কিছুই লাগে নাই। গঙ্গাজল হরেনামও দরকার হয় নাই। তাঁহারই উপদেশ অনুসারে আঁখড়ার মধ্যে একটি ঘরের ভিতর তাঁহার সমাধি হইয়াছে।’ মৃত্যুকালে নিঃসন্তান লালন বিশোখা নামে তার স্ত্রী বা সাধন সঙ্গিনী বা সেবাদাসী ও পিয়ারী নামে এক ধর্মকন্যা এবং অসংখ্য শিষ্য ও ভক্ত রেখে যান। লালনের খ্যাতিমান ও প্রধান শিষ্যদের মধ্যে ছিলেন, শীতল শাহ, ভোলাই শাহ, পাঁচু শাহ, পন্ডিত মানিক শাহ, মনিরুদ্দীন শাহ, কুধু শাহ, মহরাম শাহ, জাগো শাহ, আরমান শাহ, দুদু শাহ, বলাই শাহ, কদম শাহ, কানাই শাহ, দয়াল শাহ, মতিজান ফকিরানী, ভঙ্গুড়ী ফকিরানীত, কামিনী ফকিরানী ও শান্তি ফকিরানীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের অনেকের সঙ্গে লালনের পরিচয় ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া যায়। তখন বিরাহিমপুর পরগনায় ঠাকুর পরিবারের জমিদারিতে ছিল লালনের বসবাস এবং ঠাকুর-জমিদারদের প্রজা ছিলেন তিনি। উনিশ শতকের শিক্ষিত সমাজে তাঁর প্রচার ও গ্রহণযোগ্যতার পেছনে ঠাকুর পরিবার বড় ভূমিকা রাখেন। কিন্তু এই ঠাকুরদের সঙ্গে লালনের একবার সংঘর্ষ ঘটে। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কুষ্টিয়ার কুমারখালির কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন। এরই একটি সংখ্যায় ঠাকুর-জমিদারদের প্রজাপীড়নের সংবাদ ও তথ্য প্রকাশের সূত্র ধরে উচ্চপদস্থ ইংরেজ কর্মকর্তারা বিষয়টির তদন্তে প্রত্যক্ষ অনুসন্ধানে আসেন। এতে করে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ঠাকুর-জমিদারেরা। তাঁকে শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে লাঠিয়াল পাঠালে শিষ্যদের নিয়ে লালন সশস্ত্রভাবে জমিদারের লাঠিয়ালদের মোকাবিলা করেন এবং লাঠিয়াল বাহিনী পালিয়ে যায়। এরপর থেকে কাঙাল হরিনাথকে বিভিন্নভাবে রক্ষা করেন লালন।

বাউল সমাবেশে লাখো মানুষ

সাঁইজীর পুণ্যভূমি কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় বছরে দু’বার বসে সাধুরহাট। একটি লালনের ‘দোল পূর্ণিমা’ বা ‘স্মরণোৎসব’ এবং অপরটি ‘তিরোধান’ বা ‘উফাত দিবস’। বাউল সমাবেশ দুটিকে ঘিরে পুরো ছেঁউড়িয়া গ্রাম হয়ে ওঠে উৎসবের পল্লী। বসে সাধু-গুরু-শিষ্য, লালনভক্ত-অনুসারী ও সেবাদাসীদের মিলনমেলা। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা এবং লালন একাডেমির আয়োজনে তিন থেকে পাঁচদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকে লালনের জীবনাদর্শন ও স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা এবং বসে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা। রাতভর চলে জমজমাট গানের আসর। এসব আয়োজনকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশ থেকে আগমন ঘটে লালন ভক্ত-অনুরাগী ও সুধীজনসহ লক্ষাধিক মানুষের। সন্ধ্যালগ্নে ‘রাখল সেবা’ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাধুদের দেড় দিনের মূল উৎসব এবং শেষ হয় পরদিন বিকেলে ২৪ ঘণ্টার ‘অষ্টপ্রহর সাধুসংঘ’ বা ‘পুণ্যসেবা’ গ্রহণের মধ্য দিয়ে। পুণ্যসেবায় সাধুদের খেতে দেওয়া হয় ভাত, মাছ, সবজি বা ঘন্ট, ডাল আর দই। ‘স্মরণোৎসব’ ও ‘উফাত দিবস’ উপলক্ষে সাঁইজীর টানে দলে দলে মানুষ ছুটে আসে ছেঁউড়িয়ার ‘লালনধামে’। এ সময় এখানে মিলন ঘটে নানাধর্ম ও বর্ণের মানুষের। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে সাঁইজীর অমরবাণী-মরমী সংগীত, ‘বড় সংকটে পড়িয়া দয়াল, বারে বারে ডাকি তোমায়, ক্ষম ক্ষম অপরাধ। দাসের পানে একবার চাও হে দয়াময়, ক্ষম ক্ষম অপরাধ’ আধ্যাত্মিক সব গান। জানা যায়, লালন শাহ জীবিতকালে প্রতিবছর ‘দোল পূর্ণিমা’ রাতে নিজেই ভক্ত-শিষ্যদের নিয়ে এই উৎসবটি করতেন। সেই থেকে লালনের ভক্ত-অনুসারীরা আজও দিনটিকে ‘স্মরণোৎসব’ হিসেবে উদযাপন করে আসছে। অপরদিকে প্রতিবছর ১ কার্তিক লালনের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। দিনটিকে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন ‘প্রয়াণদিবস’ কিংবা ‘তিরোধান দিবস’ হিসেবে পালন করে। কিন্তু সাধুরা লালনের মৃত্যুবার্ষিকীকে ‘উফাত দিবস’ হিসেবে পালন করে। সাধুসঙ্গের নিয়ম সম্পর্কে বাউল ফকির বলাই শাহ বলেন, ‘শ্রদ্ধাভরে দিনটি স্মরণ করতে সাধু-গুরু (খেলাফতধারী) তাদের সেবাদাসী এবং ভক্ত ও অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে ‘দোল পূর্ণিমা’ রাতে লালন ‘স্মরণোৎসব’ কিংবা ১ কার্তিক মৃত্যুবার্ষিকীর প্রথমদিন বিকেলের মধ্যেই আখড়াবাড়িতে নিজ নিজ পাটে (আসনে) বসবেন। একমাত্র খেলাফতধারী সাধু-গুরু ছাড়া ভক্ত ও অনুসারীরা কেউ ‘আসনে’ বসার যোগ্যতা রাখে না। ভক্ত-অনুসারীরা বসবে সাধু-গুরুর আশপাশে। এই আসনে বসা সাধু-গুরুদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ভক্তি-শ্রদ্ধার বিষয়। আসনে বা পাটে বসার সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। যার যেমন সামর্থ্য অনুযায়ী কেউ সাদা বা রঙিন কাপড়ের টুকরোর ওপর, কিংবা শিতল পাতার মাদুর, এমন কি গামছা বিছিয়েও বসতে পারেন। সাধুসংঘের নিয়ম অনুযায়ী লগ্ন আসে সন্ধ্যার পর। পাটে বসে ‘রাখাল সেবা’ গ্রহণের পর থেকে ২৪ ঘণ্টার অষ্টপ্রহর সাধুসঙ্গের আগ পর্যন্ত সাধু-গুরু তাদের ভক্ত ও শিষ্যদের নিয়ে ধ্যানে বসে তবজব করেন। তবে লালন একাডেমির অনুষ্ঠান ৩ থেকে ৫ দিন হলেও সাধুদের মূল আচার অনুষ্ঠান দেড় দিনেই শেষ হয়ে যায়। সন্ধ্যালগ্নে রাখাল সেবায় সাধুদের খেতে দেওয়া হয় শুকনা খাবার যেমন, খাগড়াই মিশ্রিত মুড়ি ও চিড়া। রাখাল সেবা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে পরদিন বিকেলে ‘অষ্টপ্রহর সাধুসংঘ’ বা ‘পুণ্যসেবা’ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় বাউলদের আনুষ্ঠানিকতা। পুণ্যসেবায় সাধুদের খেতে দেওয়া হয় মাছ, ভাত, সবজি বা ঘণ্ট, ডাল আর দই। এই সেবা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাউলদের ‘অষ্টপ্রহরের সাধুসংঘ’ এবং ভেঙ্গে যায় সাধুরহাট। তখন সেবাদাসীদের সঙ্গে নিয়ে সাঁইজীর পুণ্যভূমি ছেড়ে নিজ নিজ আশ্রমের দিকে চলে যেতে শুরু করেন সাধুরা। ফকির বলাই শাহ বলেন, ‘সাধু-গুরুদের নিয়ম অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় সেবা ৪টি। এগুলো হচ্ছে, রাখাল সেবা, অধিবাসর সেবা, বাল্যসেবা এবং পুণ্যসেবা। প্রথম দিন সন্ধ্যালগ্নে ‘রাখাল সেবা’য় সাধুদের খেতে দেওয়া হয় খাগড়াই মিশ্রিত শুকনা খাবার মুড়ি ও চিড়া। এটা দেওয়া হয় প্রত্যেক সাধুর গামছায় গামছায়। রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ‘অধিবাসর সেবা’য় দেওয়া হয় পদ্ম পাতা অথবা কলা পাতায় জুগল অন্ন অর্থাৎ ডালে-চালে খিচুড়ি। অধিবাসর সেবার মধ্য দিয়ে শেষ হয় সাধুদের প্রথম দিনের আচার অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় দিন চলে বাউলদের অষ্টপ্রহরের সাধুসংঘ। এদিন ভোরে গোষ্ঠ গানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়। এদিন ভোরে গোষ্ঠ গানের পর সকাল ৮টার মধ্যে নাস্তা হিসেবে ‘বাল্যসেবা’য় খেতে দেওয়া হয় দই, চিড়া, মুড়ি, পায়েস ও পাঁচ রকমের ফল এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে সাধুদের দেওয়া হয় ‘পুণ্যসেবা’। পাটে (আসনে) বসে সন্ধ্যালগ্নে রাখাল সেবা গ্রহণের পর থেকে ২৪ ঘণ্টার অষ্টপ্রহর সাধুসঙ্গের আগ পর্যন্ত সাধু-গুরু তাদের ভক্ত-শিষ্যদের নিয়ে ধ্যানে বসে তবজব করেন। রাতদিন ২৪ ঘণ্টায় ৮টি প্রহর। এই ৮ প্রহরে তারা একই স্থানে বসে উপাসনা, সাধনা-আরাধনা করেন। যার যার গুরুর উপাসনা সেই সেই করেন। যার যার গুরু তাদের ভক্ত-শিষ্যকে যে যে উপাসনা দেন, ধ্যানে রেখে সেই তবজনই তারা করেন। শিল্পীরা গান গাইছেন, সাধুরা বসে ধ্যান-তবজব করছেন, পান খাচ্ছেন, আরাম করছেন, এরই মধ্য দিয়ে তাদের ধর্মীয় আচার চলতে থাকে। সন্ধ্যালগ্নে ‘রাখাল সেবা’ দেওয়া হয় সাধুদের গামছায় গামছায়। এই অন্ন গ্রহণ সাধুদের কাছে অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। কোনো কারণে কেউ যদি এই অন্ন গ্রহণ থেকে বাদ পড়েন। তবে সে নিজেকে দুর্ভাগা মনে করেন। রাখাল সেবার পর সাধুদের আবার খেতে দেওয়া হয় রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে। এটিকে বলে অধিবাসর সেবা। অধিবাসর সেবা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সাধুদের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। পরের দিন ভোরে গোষ্ঠ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের আচার অনুষ্ঠান। দিনটিকে স্বাগত জানানোই গোষ্ঠ গানের মূল উদ্দেশ্য। এরপর একে একে চলতে থাকে তাদের কার্যকরণ। এদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে অষ্টপ্রহরের সাধুসংঘে ‘পুণ্যসেবা’ দেওয়া হয়। এই সেবায় সাধুদের খেতে দেওয়া হয় মাছ, ভাত, সবজি বা ঘণ্ট, ডাল ও দই। এসব খাবার পরিবেশন করা হয় কলা পাতায়। পুণ্যসেবা গ্রহণের মধ্য দিয়ে ছেঁউড়িয়ায় লালনধামে ভেঙে যায় সাধুরহাট। তখন সেবাদাসীদের সঙ্গে নিয়ে সাঁইজীর পুণ্যভূমি ছেড়ে নিজ নিজ আশ্রমের দিকে চলে যেতে শুরু করেন সাধুরা।

দৃষ্টিনন্দন একতারা

‘একতারা’। তারের  মধ্যে মনের আকুতি, হৃদয়ের অভিব্যক্তি। তারের মধ্যে সুর ঝঙ্কারে বিলাপ অনুভূতি। মনের আকুতিতে সমাজের জঞ্জাল দূর করার চেষ্টা। যা মানবতা ও নৈতিকতার চেষ্টা হিসেবে আদি সময় হতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন ফকির লালন শাহ। সেই থেকেই বাউল গানের অপরিহার্য বাদ্যযন্ত্র হয়ে রয়েছে এই ‘একতারা’। বাউল ছাড়া যেন বাদ্যযন্ত্রটি অন্য কোনো শিল্পীর হাতে একেবারেই বেমানান। তিনি যতো গুণী শিল্পীই হোন না কেন। দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্র্থীদের নজর কাড়ে ছেঁউড়িয়ায় স্থাপিত ভাস্কর্য এই একতারা। অনেক দর্শনার্থী একতারা’টির পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে করেন ক্যামেরাবন্দি। তুলেন বিভিন্ন ভঙ্গিতে ‘সেলফি’। একতারা আজ বাংলার লোকজ এক বাদ্যযন্ত্র। একটি তার বিশিষ্ট বলেই এটি একতারা নামে অভিহিত। তবে একতারা আবিষ্কারের ইতিহাস সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হয় অন্তত এক হাজার বছর ধরে এই বাদ্যযন্ত্রটি ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে অনেক বাউল শিল্পীই মনে করেন, লালন শাহের কালেই জন্ম একতারার। তারা মনে করেন ফকির লালন শাহ তার মনের ভেতর উদয় হওয়া কথাগুলো ভক্তদের মধ্যে প্রচারের সময় কথাগুলো আরও মধুময় করে তোলার জন্য কথার ভাঁজে ভাঁজে তালের অনুভব থেকেই একতারার জন্ম। তবে জন্ম যখনই হোক না কেন, আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির স্বকীয়তা আর ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এই বাদ্যযন্ত্রটি অকৃত্রিমভাবে বহমান রয়েছে একতারা নামে। যন্ত্রটির বাদন ভঙ্গি আর সুরের মূর্ছনায় আজও খুঁজে পাওয়া যায় মাটির ঘ্রান।
এমএ রকিব, কুষ্টিয়া

×