ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

১১৬ প্রজাতির সানবার্ড পৃথিবীতে

ক্ষুদ্র চিত্রিত শরীর, ইয়া লম্বা ঠোঁটে আছে গানও

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ক্ষুদ্র চিত্রিত শরীর, ইয়া লম্বা ঠোঁটে আছে গানও

অনিন্দ্যসুন্দর পাখি সানবার্ড

ক্ষুদ্র একটা পাখি। ক্ষুদ্র। কিন্তু দেখতে এত সুন্দর যে, চোখ আটকে যায়। দেহের পুরোটাতে রঙের ছড়াছড়ি। মনে হতে পারে কোনো শিল্পী রং তুলি দিয়ে সযতেœ এঁকেছেন! বাস্তবে প্রকৃতির খেয়াল। এইটুকুন শরীর হলেও, ইয়া লম্বা ঠোঁট! চমৎকার গান করতে পারে। রূপের পাশাপাশি গুণের জন্য প্রশংসিত পাখির নাম সানবার্ড। এটি বাংলাদেশে মৌটুসি নামে পরিচিত। 
এখন এই শীতের কালে কত শত পাখি আকাশে উড়ছে! পৃথিবীর নানা প্রান্ত হতে এসে গেছে পরিযায়ী পাখিরাও। সানবার্ড তবু দৃষ্টি কাড়বে আপনার। একটু অনুসন্ধিৎসু হলে, খোঁজাখুঁজি করতে পারলে ঠিক এর দেখা পেয়ে যাবেন। সানবার্ড ভীষণ চঞ্চল পাখি। দ্রুত বেগে উড়তে পারে। তবে জাত পাত অনেক। ১১৬টি প্রজাতি আছে গোটা দুনিয়ায়। এগুলোর অধিকাংশই আফ্রিকা অঞ্চলে বাস করে। আর বাংলাদেশে আছে ১১টি প্রজাতি। এগুলোর চারটিই পরিযায়ী পাখি। বাকিগুলো দেশেই থাকে সব সময়। পুরুষ মৌটুসির গায়ে উজ্জ্বল রং। গাঢ় হলুদ, কড়া লাল এবং কালো বা সবুজ রং বিশেষ দেখা যায়। থাকে নীলের ছোঁয়াও। স্ত্রী পাখির বেলায় রং অনেক ক্ষেত্রে ম্লান দেখায়। এরা যতœ করে বাসা বানায়। বাসাগুলো ডিম্বাকৃতির। এরা গাছের ডালে ঝুলে থাকে। 
দেশের খুব চেনা-জানা একটি প্রজাতির নাম পার্পেল-রাম্পড সানবার্ড বা বেগুনি-কোমর মৌটুসি। নামের সঙ্গে হুবহু মিলে যায় কোমরের রং। তাই বেগুনি-কোমর নাম। বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় পাখিটিকে। আছে রাজধানী শহর ঢাকায়ও। পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকের তথ্য অনুযায়ী, বেগুনি-কোমর মৌটুসির শরীর দৈর্ঘ্যে মাত্র ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ডানা ৫.২  সেন্টিমিটার। লেজ ৩.৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাখিটি ওজনেও অল্প। ৯ গ্রামের মতো। তবে ঠোঁট যথারীতি লম্বা। ১.৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গলাও বেগুনি। ডানা ও লেজের উপরের আচ্ছাদক কালচে বাদামি।

মাথার চাঁদি ও কাঁধের পট্টি ধাতব সবুজ। মাথার পাশে আবার মেরুন রং। পাখির বুক ও পেটের অংশটি বিশেষ চোখে পড়ে। কাঁচা হলুদ বেঁটে কেউ যেন মাখিয়ে দিয়েছে সেখানে! ডানা মেলে ওড়ার সময় এ অংশটি চমৎকারভাবে দৃশ্যমান হয়। পাখির দেহের পেছনের অংশ, কাঁধ-ঢাকনি গাঢ় তামাটে ও মেরুন রঙে সাজানো। 
সানবার্ডের লম্বা সরু ঠোঁটের অগ্রভাগ নিচের দিকে সামান্য ঝুঁকে থাকে। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফুল থেকে খুব সহজেই মধু সংগ্রহ করতে পারে। কণ্ঠেও মধু আছে। গান গাইতে গাইতেই এরা ফুলের কাছে যায়। মধু আহরণ করে। হ্যাঁ, অন্য অনেক পাখির কণ্ঠে গান আছে। সানবার্ড বা মৌটুসি গানের জন্য আলাদাভাবে বিখ্যাত! সুন্দর গানজানা পাখিটি তাই না দেখলেই নয়।

×