ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে দুষ্প্রাপ্য মুদ্রার প্রদর্শনী দেখছেন দর্শনার্থীরা
মুদ্রা কিংবা কয়েন নিয়ে অনেকেরই রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। পাশাপাশি মুদ্রার সঙ্গে সম্পর্কিত রয়েছে সময়, কাল থেকে ইতিহাস। আর এসব কয়েনের প্রতি কৌতূহলীদের জন্য রাজধানীতে শুরু হলো দারুণ এক আয়োজন। খ্রিস্টপূর্ব ছয়শ’ বছরের পুরনো থেকে সমকালীন মুদ্রার সঙ্গে ব্যাংক নোটের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে তিন দিনের প্রদর্শনী। মুদ্রা ও ব্যাংক নোটের ভেতর দিয়ে ইতিহাস দর্শনের প্রদর্শনীটি চলছে ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহমেদ এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এতে ঠাঁই পেয়েছে বিভিন্ন আকার-আকৃতির দুষ্প্রাপ্য মুদ্রা।
বাংলাদেশ নিউমিসম্যাটিক কালেক্টরস সোসাইটি (বিএনসিএস) আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ২৯ সংগ্রাহক ও ছয়জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিএনসিএসের সভাপতি রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যমুনা ব্যাংক পিএলসির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেছেন, বিভিন্ন শতকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন আর অর্থনৈতিক উন্নতিতে মুদ্রার গঠন, বৈশিষ্ট্য আর মূল্যমান কীভাবে বদলে গেছে তার একটি চিত্র এই প্রদর্শনীতে পাওয়া যাবে।
প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছে ছয়শ’ খ্রিস্টপূর্বের মুদ্রা থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সময়কার স্বর্ণ, রৌপ্য এবং বিভিন্ন ধাতুর মুদ্রা। ‘৫ম বিএনসিএস মুদ্রা প্রদর্শনী-২০২৪’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর আরেক আকর্ষণ খ্রিস্টপূর্ব তিনশ’ বছরের বঙ্গ জনপদের মুদ্রার সংগ্রহ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলায় মুদ্রার যে ক্রমবিকাশ ঘটেছে তারও একটি ধারাবাহিক ফিরিস্তি দর্শনার্থীদের জন্য উপভোগ্য করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত সর্বপ্রথম ইসলামি মুদ্রা, প্রাচীন বাংলা অঞ্চলের বিভিন্ন রাজবংশের মুদ্রা, প্রাচীন ভারতীয় ছাপাঙ্কিত মুদ্রা জায়গা পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এ ছাড়া বাংলার সুলতানি শাসনামল, মোগল সাম্রাজ্য, ব্রিটিশ ভারতীয়, পাকিস্তান (১৯৪৭-১৯৭১) এবং বাংলাদেশের সকল প্রচলিত ও স্মারক মুদ্রার সমাহার ঘটানো হয়েছে প্রদর্শনীটিতে।
এতে আরও জায়গা পেয়েছে মধ্যযুগীয় বাংলার সোনারগাঁ টাকশালের মুদ্রা, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত ত্রিপুরা রাজ্যের উল্লেখযোগ্য মুদ্রা, ভারতীয় বিভিন্ন প্রিন্সলি স্টেট এবং স্বাধীন রাজ্যের মুদ্রা, বিশ্বের বিলুপ্ত এবং বর্তমানে বিভিন্ন দেশে প্রচলিত মুদ্রা, বিভিন্ন সময় ও দেশের অস্বাভাবিক আকারের, ছিদ্রযুক্ত, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মুদ্রা এবং মেডেল সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। মুদ্রার বাইরে বাংলাদেশের সব নকশার প্রচলিত এবং নমুনা ব্যাংকনোট, বিভিন্ন প্রকার ত্রুটিযুক্ত নোট, বিশ্বের সর্ববৃহৎ আকারের এবং সর্বক্ষুদ্র আকারের প্রচলিত ও স্মারক ব্যাংকনোট, বিখ্যাত ব্যক্তির ছবিযুক্ত, কৃষি বিষয়ক, পাহাড়ের ছবিযুক্ত, গ্রেডিংযুক্ত এবং ব্রিটিশ ভারতীয়, পাকিস্তানের ১৯৪৭-৭১ সময়কার ব্যাংকনোট ও প্রাইজবন্ড ঠাঁই পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে।
প্রদর্শনীতে ‘ব্যাংকনোট ও মুদ্রায় আরবি ক্যালিগ্রাফি’ শীর্ষক একটি গবেষণামূলক বই রয়েছে বিক্রির জন্য। লেখক শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহীম জানান, আন্তর্জাতিক ব্যাংকনোট ও মুদ্রায় ক্যালিগ্রাফির যেসব শৈলী ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোর তালিকা ও বর্ণনা এতে উপস্থাপন করা হয়েছে। একজন ক্যালিগ্রাফার হিসেবে পৃথিবীর যত দেশের ব্যাংকনোটে আরবি ক্যালিগ্রাফি আছে তার নমুনাশৈলীভিত্তিক সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছেন তিনি।
লেখকের মতে, যারা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন এবং লিগ্যাল টেন্ডার ও কমেমরেটিভ নোটে বিচিত্র আরবি ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য এটা দেখার বিশেষ সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। যারা ক্যালিগ্রাফি কলমে কাজ করেন এই প্রদর্শনী তাদের জন্য একটি চিন্তার দুয়ার খুলে দেবে। শনিবার পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।