‘সেটা ১৯৬৩ সাল। আমি এসেছিলাম কলকাতায় দিন পনেরর জন্য। উঠেছি সুবিমলের আস্তানায়। জানালা-পাখাহীন স্যাকরার দোকানে মেঝেতে মাদুর পেতে শুই দুজনে। প্রাতঃকৃত্য সারার জন্য যেতে হয় শেয়ালদা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনগুলোয়। ভাঁড়ে চা আর মুড়ি। রাস্তার কলে গামছা পরে চান। কলগুলো এত নিচু যে তার তলায় হামাগুড়ি দিয়ে বসতে হয়। তারপর গামছা শুকোতে শুকোতে শেয়ালদা থেকে বৌবাজারের ভেতর দিয়ে সুবিমলের আপিস। সুবিমল নিচের ডিপার্টমেন্টে চলে যায় আর আমি ওর আপিসের ছাদে গিয়ে গামছা পেতে বসি। দুপুরে সরাসরি ছাদে চলে আসে বরানগর থেকে ফাল্গুনী রায়, রাইটার্স থেকে ত্রিদিব মিত্র। খোলা আকাশের তলায় কবিতা পাঠ, গাঁজা সিগারেটে পুরে ভাগাভাগি করা চারমিনার, খিদে পেলে সুবিমলকে নিয়ে আপিস ক্যান্টিনে।’
॥ দুই ॥
‘ত্রিদিব মিত্র থাকতো হাওড়ায়। তখনো চাকরি খুঁজছে। যে মেয়েটির সঙ্গে প্রেম সে ছিল একটা সরকারি ব্যাঙ্কে আপিসার। ওর প্রেমিকার দেওয়া হাত খরচে আমাদের দিশি মদ খাওয়াতো ত্রিদিব খালাসীটোলায়। আধাছোলা আলুর দম আর দিশি মদ। খালি পেটে খিদের মুখে চোঁ- চোঁ করে খাওয়া হয়ে যেত। সকলে মিলে দেখতুম টোটাল কতো পয়সা আছে। পঞ্চাশ টাকার মতন জড়ো হলে হাঁটতে হাঁটতে হাড়কাটা গলিতে কারুর ঘরে। অনেক সময় কারুর পকেটে বা ডায়েরিতে কবিতা থাকলে চেঁচিয়ে পড়া। এক টাকা দিয়ে গোড়ের মালা ভাড়া করে তাকে পরিয়ে আবার মালাটা ফেরত দিয়ে দিতুম মালাওয়ালাকে। তারপর লটারি।
যার নাম উঠতো সে ঢুকে যেত ঘরে। আমরা বাকি সবাই রাস্তায় তার অপেক্ষায়।
ওপরে উদ্ধৃত গদ্যাংশ দুটি ‘মিজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা’য় প্রকাশিত মলয় রায় চৌধুরীর ‘হাংরি কিংবদন্তি’ থেকে নেয়া হয়েছে। ওই রকম লাইফ স্টাইলে অভ্যস্ত হাংরি জেনারেশনের কবি পুরোহিত মলয় রায় চৌধুরী (১১ কার্তিক, ১৩৪৬; পাটনা) একদা বস্তি এলাকায় বসবাসের সময় উপলব্ধি করেছিলেন তার চারপাশের বাস্তবতার সঙ্গে বাংলা কবিতার কোনও মিল নেই। তাই সচেতনভাবেই তিনি বাংলা কাব্যের ললিত গীতময় চেতনায় যোগ করতে চাইলেন ক্রোধ, যৌনতা, রিরংসা, উন্মাদনার মতো বিপ্রতীপ অনুভূতিমালা। ব্যক্তি মানুষের খুব আড়ালে সুপ্ত রক্তাক্ত নিষ্ঠুরতাকে নীলিমা-নিসর্গ বিচ্ছিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে বিবিধ প্রাসঙ্গিকতায় উপস্থাপিত করে নতুন মাত্রা দিতে তৎপর হয়ে ওঠেন মলয়। বস্তত, বাংলা কবিতা তার আবহমানকালের সুললিত ছন্দ-রূপ-সুষমা নিয়ে প্রথমবারের মতো একটা বড় রকমের ধাক্কা খায়। তরতর করে এগিয়ে চলা কাব্যতরণী চড়ায় লেগে হঠাৎ তীব্র হোঁচটে কেঁপে ওঠে।
বহু-বিচিত্র ঘটনায় আকীর্ণ ষাটদশী বোহেমিয়ান জীবন যাপন করার পর মলয় রায় চৌধুরী কবিতা থেকে স্বেচ্ছানির্বাচন নেন। দীর্ঘ দুই দশক পর কাব্যগ্রন্থ ‘মেধার বাতানুকূল ঘুঙুর’ (১৯৮৭) এর মাধ্যমে আবার লেখালেখিতে ফিরে আসেন। তার ওই প্রস্থান ও পুনঃপ্রবেশের অন্তর্বর্তীকালীন রহস্যনাটক বিষয়ে আমরা পুরোপুরি অজ্ঞ। কেননা ওই নতুন বইয়ে এ ব্যাপারে তিনি পাঠককে কিছুই জানাননি।
মলয় রায় চৌধুরীর কবিতার জগৎ খুন-খারাবি, যৌন পীড়নসহ নানা রকম উন্মত্ততা ও উৎপীড়নে ঠাসা।
আপত্তিকর শব্দ ও ভাবনার ঐ আপাত-অশ্লীল পথেই এ কবি উপার্জন করে নিয়েছেন ঝুঁকিপূর্ণ ভিন্নতা। হাংরি আন্দোলনের মতিচঞ্চল দিনগুলোতে তার লেখার স্বাতন্ত্র্য ধরা পড়েছে এভাবেÑ ক. ‘ছিটকে আসে চূর্ণ খুলি কঙ্কালের উৎক্ষিপ্ত সাঁড়াশি/অবিশ্রান্ত ভস্মপাত নারীর বিচ্ছিন্ন যোনি শ্রোণী হ্রেষারব/থ্যাতলানো শিশুদেহ নাড়িভুঁড়ি অঙ্গপ্রত্যঙ্গহীন দুর্বিনীত ধড়/ঝুরিনামা বিস্ফোরণ চকিতে ঝলসে ওঠে ছোরা’ (তৃতীয় ঘোটক, ১৯৬১/কবিতা সংকলন)
খ. মদের গেলাস ছুড়ে মারবো কবিতার এলোকেশ ধরে/হিঁচড়ে টেনে আনবো কাছে/বাধ্য করবো কাচের টুকরোগুলো মাড়িয়ে হেঁটে যেতে (স্যাটিরিয়াসিস, ১৯৬৩/কবিতা সংকলন)
গ. পায়রার বুকে টাইমবোমা বেঁধে শান্তির জন্য ওড়ানো হচ্ছে/একজন উটকো বুড়ো না খেতে পেয়ে/হুমড়ি খেয়ে পড়ে রয়েছে বালতিতে মুখ গুঁজে। তার শিড়িংগে দাবনার পোড় খাওয়া হাড় দেখে মনে হয়/ফড়িং-এর আধভাঙ্গা ঠ্যাঙের কাতরানি দেখিনি কতোকাল। (ফুলিয়ার হাতটান, ১৯৬৬/ঐ)
লক্ষণীয় এ পর্যায়ের শেষের দিককার কবিতায় মলয় দুর্বোধ্যতার খোলস ছাড়ছেন ধীরে ধীরে। মন খারাপ করে দেয়া এবং গা-শিউরানো প্রসঙ্গ অনুষঙ্গ অপরিবর্তিত রেখেও লেখক এখানে অনেকটা সহজ ও সাবলীল। ফলে কবিতা পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে অনায়াসে। পরন্ত সমাজমনস্কতা এবং তা থেকে জাত একধরনের অঙ্গীকার ফুটে উঠেছে এখনকার কবিতায়। কোথাও কোথাও ভাষিক সহজতার সমান্তরালে তিনি ব্যঙ্গপ্রবণ হয়ে উঠেছেনÑ ‘এল এস ডি খাবেন নাকি?
দুজনে/চিত হয়ে রোদ পোয়াবো নিমতলায়/ভারতবর্ষ, এই নিন রুমাল, চশমার কাচ মুছুন/এবারের নির্বাচনে আমায় জিতিয়ে দেবেন, প্লিজ/দাঁড়াবো চিলকা হ্রদ থেকে।’
‘মেধার বাতানুকূল ঘুঙুর’-এ এসে তার ঐ পরিবর্তন সাবালক হলো। ব্যাপারটা মাথায় রেখেই মলয় কবিতা সংকলন (১৯৮৬)-এর ব্যাককভারে লিখেছেন, ‘অদল-বদল তেমন করিনি। এই জন্যে যে, এখন বেশ পালটেছি।’ ‘ইশতেহার সংকলন’ নামের বইয়ের উদ্বোধনী নিবন্ধ ‘কবিতা’য় তিনি বলছেন, ‘কবিতা এখন জীবনের বৈপরীত্যে আত্মস্থ। সে আর জীবনের সামঞ্জস্যকারক নয়, অতিপ্রজ অন্ধ বল্মীক নয়, নিরলস যুক্তিগ্রহণ নয়। এখন, এই সময়ে, অনিবার্য গভীরতায় সন্ত্রস্তদৃক ক্ষুধায় মানবিক প্রয়োজন এমনভাবে আবির্ভূত যে জীবনের কোনো অর্থ বের করার প্রয়োজন শেষ। এখন প্রয়োজন অনর্থ বের করা, প্রয়োজন মেরু বিপর্যয়, প্রয়োজন নৈরাত্মসিদ্ধি।’
‘মেধার বাতানুকূল ঘুঙুর’-এর ২নং কবিতা ‘প্রস্তুতি’-তে মলয় লিখেছেন ‘কে বললে বিধ্বস্ত হয়েছি? দাঁত নখ/নেই বলে? এগুলো খুবই জরুরি?/আবাঁট চাকুর মেধা তলপেট লক্ষ্য করে বিদ্ধ করে দিয়েছি সেসব.../চাকুর লাবণ্য আমি আরেকবার এ তল্লাটে দেখাতে এসেছি।’ এখানে প্রযুক্ত ‘চাকুর মেধা’ এবং ‘চাকুর লাবণ্য’ ফ্রেজ দুটির যে কোনো একটিকে আমরা মলয় রায়ের নতুন পর্যায়ের কাব্যস্বভাবের কবু-ড়িৎফ বা চাবি শব্দ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। চাকু এবং লাবণ্য, এই পরস্পরবিরোধী শব্দ দুটিকে একত্রে প্রয়োগ করে মলয় নতুন ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছেন।
এর পরের কবিতাগুলোতে লক্ষ্য করা যায় চাকুসুলভ তীক্ষèতা এবং খুন-জখম ছাপিয়ে ওঠা কবিসুলভ মমতার অভিনতুন সহাবস্থান। অতএব জাহাজ ঘাটের প্রমোদবালাকে নিয়ে তার দয়ার্দ্র পঙ্ক্তিমালা নতুন ভঙ্গিতে কলবলে ওঠেÑ ‘একি কুলনারী, তুমি জাহাজঘাটায় দেহ বেচতে এসেছ/লুঙ্গিপরা পানখোর দালাল রাখোনি/শাদা পোশাকের কবি শরীর ঝাঝরা করে দেবে/... আমি তো স্ট্রেচারবাহী কিছুই করতে পারবো না। (দালাল) আবার আত্মহত্যাকারিণী যুবতীকে নিয়ে অন্যত্র তার উচ্চারণ, ‘কী গভীর মায়ায় পৃথিবীর ধরাছোঁয়া ছাড়িয়ে যেখানে/বহু পুরুষের ঠোঁটে আদর খেয়েছো সে শরীর ছুঁতে ভয় পায় তারা আজ/ফেলো লাশ নামাবার জন্য আছি আমি’ (বিজ্ঞানচেতনা)।
কিন্তু এই মনোতোষ মানবিকতা মলয়রায় চৌধুরীর নতুন গ্রন্থের একটি দিক মাত্র। বরং বিষয়টি তার কবিতার পনের আনা দখল করে আছে তা হচ্ছে, অমার্জিত ক্রোধ, ঘৃণা ও সন্ত্রাসের যুগল ছবি। অবক্ষয় আক্রান্ত নাজুক সময়ের নৈরাজ্য ও নারকীয় নির্মমতাকে মলয় এমন এক ধারালো, ঋজু স্টাইলে তুলে আনেন যে, আমরাও ভয়ের অনুভূতি দ্বারা আক্রান্ত হই। মনে হয় অদৃশ্য আততায়ী আমাদেরও পেছনে পেছনে ঘুরছে।
ক. আক্রান্ত হওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছি এসো মারমুখী/চামচিকে/জামা গেঞ্জী ছিঁড়ে দাও বাড়ির দেওয়ালে বোমা মারো/রগে রিভলভার চেপে ভয় দেখাও, হাজতে ঠেঙ্গিয়ে জেরা করো।/ধাবমান ট্রেন থেকে ফেলে দাও আমাকে, আটকাও, মেরে ফেলো/আমি ভূকম্পন যন্ত্র আণবিক যুদ্ধ দেখবো বলে বেঁচে আছি/নীল গর্ধভেরÑ লিঙ্গমানবের শুক্রজাত কাফ্রী খচ্চর। (মনুষ্যতন্ত্র)
খ. আবলুশ অন্ধকারে তলপেটে লাথি খেয়ে ছিটকে পড়ি/পিছমোড়া করে বাঁধা হাত কড়া স্যাঁতসেঁতে ধুলোভরা মেঝে। আচমকা কড়া আলো জ¦লে ওঠে চোখ ধাঁধায়/এক্ষুনি নিভে গেলে মুখে বুট জুতো পড়ে দুতিন বার/কষ বেয়ে রক্ত গড়াতে থাকে টের পাই। (আলো।
একরোখা, লড়াকুস্বভাবী মলয় শত অপমান ও লাঞ্ছনার পরও পরাজয় মেনে নিতে নারাজ। তাই নতুন সাহসে উদ্যমে অকুতোভয় এ কবি উচ্চারণ করেন, ‘দেখে নিস তোরা/মাটিতে গোড়ালি ঠুকে পৃথিবীর চারিধারে জ্যোতির্বলয় গড়ে যাবো।’ এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তার ঐ প্রতিজ্ঞা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? সত্যিই কি তিনি মেধার জ্যোতির্বলয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন? সাহিত্যের পথ চিরস্বায়ত্তশাসিত। কিন্তু এ পথে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে লেখককে সবার আগে তার নিজের বিশ^াস ও উপলব্ধির কাছে সৎ থাকতে হবে।
হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কবিতাকর্মীদের অধিকাংশেরই চিন্তায় ও উপলব্ধিতে আন্তরিকতার শোচনীয় অভাব ছিল। সেজন্য কবিকৃতির বিচারে শেষ পর্যন্ত তারা দাঁড়াতে পারেননি। সুস্পষ্ট ব্যতিক্রম শক্তি চট্টোপাধ্যায়। এবং তিনি ঐ আন্দোলন থেকে এ কটা পর্যায়ে সরেও এসেছিলেন। প্রাচীন ইংরেজ কবি চসারের একটি লাইন থেকে নেয়া (ওহ ঃযব ংড়ৎিব যঁহমৎু ঃুসব) ‘হাংরি’র আইডিয়া থেকে শুরু করে আন্দোলনের প্রাথমিক রূপরেখা, যার পেছনে স্পেংলারকথিত সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের পশ্চাৎ প্রেরণা ছিল খুবই জোরালো, প্রথম দানা বাধে মলয়ের মাথাতেই। কাজেই ভেতর থেকে উৎসাহী ও উদ্দীপ্ত হওয়ার বিষয়টি তার বেলায়ই সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। আর তাই অনেক দুর্বলতা সত্ত্বেও মলয়রায় চৌধুরী ডামাডোলের কেন্দ্রে থেকেও মোটামুটি সৃজনপ্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন। এখানে দলপতি মলয়ের স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক হবে মনে করি। লেখার চেয়ে জীবন যাপনের ঢং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো। বয়স অনুযায়ী অভিজ্ঞতার ওজন বেশি হয়ে পড়ায় আন্দোলনকারীদের ব্যক্তিগত জীবন এ সময় (১৯৬৪) ভয়াবহ, দুঃসহ, গ্লানিময়, দুঃখজনক, ছন্নছাড়া, রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ল। ফলে আঙ্গিকের চেয়ে বিষয়বস্তু, শৈলীর চেয়ে বক্তব্য, রীতির চেয়ে স্বাতন্ত্র্য, বাচ্যার্থ-ব্যঞ্জনা-অলংকারের চেয়ে মনস্তত্ত্ব অনিবার্যতায় পর্যবসিত হয়...’ (হাংরি আন্দোলন : পেছন ফিরে দেখা/‘জিজ্ঞাসা’ সংকলন)।
১৯৬২ সালের গোড়ার দিকে হাংরি জেনারেশন তাদের আন্দোলন শুরু করে। ততোদিনে আমেরিকায় ও ইউরোপে অ্যাংরি, বীট প্রভৃতি শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক মুভমেন্ট চালু হয়ে গেছে। ১৯৬২-রই কোনো এক সময় মার্কিন বিট কবি অ্যালেন গীন্সবার্গ ও তার বন্ধু কবি পিটার অরলভস্কি কলকাতায় আসেন। ঐ সময় তারা কবি যশোপ্রার্থী কতিপয় যুবকের সঙ্গে যথেচ্ছ মেলামেশাও করেছিলেন। এসব কারণে হাংরি আন্দোলনকে অনেকেই ‘বীট প্রভাবিত’, ‘বাংরিজি’ প্রভৃতি বলে নিন্দামন্দ করেছেন সে সময়। অথচ মজার ব্যাপার, ‘হাংরি’ নামে পরিচিত যুবকদের (শৈলেশ্বর ঘোষ, ত্রিদিব মিত্র, ফাল্গুনি রায়, সুবো আচার্য, বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুবাস ঘোষ, দেবী রায়...) কারও সঙ্গে গীন্সবার্গের পরিচয় হয়নি। এমনকি অনেকেই অ্যালেন এবং অরলভস্কিকে দেখেনওনি। আমার ধারণা ‘হাংরি’দের আন্দোলন এবং বীট কবিদের আগমন কাকতালীয়ভাবে একই সময়ে ঘটেছে। নিন্দুকেরা সেই সুযোগটি হাতছাড়া করেনি। তবে এর মধ্যে কথা আছে। গীন্সবার্গ-অরলভস্কিরা যে অবিবেকী, বিমানবিক সত্যের উপলব্ধি তাদের অধ্যাত্মশূন্য দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সূত্রে অর্জন করেছিলেন, মলয় রায় চৌধুরীর এবং তার সতীর্থ বন্ধুদের কবিতায় ঐ বিপরীতধর্মী অভিব্যক্তিসমূহ অনেক ক্ষেত্রেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসেনি। আরোপিত জীবনাচরণ এবং কাব্যে প্রযুক্ত বিষয়-আশয়, অতএব, প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে খুব কম ক্ষেত্রেই। আর কে না জানেন, উপলব্ধির ও প্রকাশরীতির সেতুবন্ধ হৃদয়গ্রাহী হয়ে না উঠলে কবিতা যে ভঙ্গিতেই লেখা হোক শেষ পর্যন্ত টেকসই হয় না।
‘হাংরি’ পুরোহিত
মলয়রায় চৌধুরী ও তার কবিতা
শীর্ষ সংবাদ: