মানুষের আমলসমূহ বৃহস্পতিবার রাতে আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। সারা সপ্তাহের মধ্যে সংঘটিত গুনাহগুলো আল্লাহর ইবাদতের বরকতে এই রাতে মাফ করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে করা দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার রাত আসলে জুমার (শুক্রবার) রাত; কারণ শরীয়তে রাত দিনের আগে শুরু হয়। পাপী মুসলিমের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে কবরের শাস্তি বন্ধ থাকে এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত উঠিয়ে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে বা শুক্রবার যিনি মারা যান, তিনি যদি পাপী হন, তবে তার কবরের শাস্তি সাময়িক সময়ের জন্য হয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা স্থগিত থাকে। বৃহস্পতিবার রাতে বা শুক্রবার মারা যাওয়া মুসলিমকে কবরের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় না।
কীভাবে বৃহস্পতিবার রাত কাটানো উচিত
বৃহস্পতিবার রাতকে রমজানের শেষ দশ রাত, যিলহজ্বের প্রথম দশ দিন, দুই ঈদের রাত, শাবান মাসের পনেরো তারিখের রাত এবং রজব মাসের প্রথম রাতের মতো বরকতময় রাতের মতো কাটানো উচিত। এই রাতগুলোতে নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস পাঠ ও শ্রবণ, আল্লাহর জিকির, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি দরুদ পাঠ, এবং দোয়া করার মাধ্যমে রাত কাটানো উচিত।
যতটা সম্ভব বেশি সময় ইবাদতে কাটানো উচিত। যদি পুরো রাত কাটানো সম্ভব না হয়, তবে যতটুকু সম্ভব। তবে, মসজিদে একত্রিত হয়ে শুধুমাত্র এই রাত জাগরণ এবং ইবাদতের উদ্দেশ্যে একত্রিত হওয়া শরীয়তসম্মত নয়, কারণ এটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবাদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) আমল ছিল না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইশার নামাজ জামাতে আদায় করে, সে যেন রাতের অর্ধেক ইবাদত করেছে। আর যে ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সে যেন পুরো রাত ইবাদত করেছে।” (মুসলিম, হাদিস নং ১০৪৯)। তাই এই বরকতময় রাতে অন্তত ইশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করার চেষ্টা করা উচিত।
শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার রাতে ইবাদত করা মাকরূহ তানযীহি
আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “জুমার রাত (আমাদের কথায় বৃহস্পতিবার রাত) অন্যান্য রাত থেকে আলাদা করে ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করো না।” (মুসলিম, হাদিস নং ১৯৩০)
ফুকাহারা লিখেছেন যে এই হাদিসের ভিত্তিতে শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার রাতকে ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করা মাকরূহ তানযীহি। অর্থাৎ, ইবাদত করার জন্য শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার রাত নির্ধারণ করা এবং অন্য রাতগুলোকে উপেক্ষা করা মাকরূহ তানযীহি। তবে যদি কোনো কারণবশত বৃহস্পতিবার রাতে ইবাদত করা হয়, তবে এটি মাকরূহ হবে না।
যদিও শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার রাতে ইবাদত করা মাকরূহ তানযীহি, তবুও এতে সওয়াব পাওয়া যাবে।
মুল্লা আলী কারি মাকরূহ হওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন:
শরীয়ত চায় মানুষ সব সময় ইবাদত ও সৎকর্ম করুক। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দিন বা রাতের জন্য নিজেকে সীমাবদ্ধ করা অন্যান্য সময়ে ইবাদত ও সৎকর্ম থেকে বিরত রাখবে। যদি কেউ বৃহস্পতিবার রাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ইবাদত করে, তবে ক্লান্তির কারণে শুক্রবারের ওয়াজিফা (সৎকর্ম) করতে অনীহা বোধ করবে। মুল্লা আলী কারি আরও বলেছেন, “আল্লাহর হুকুমের অন্তর্নিহিত হিকমত (তত্ত্ব) বোঝার অপারগতা স্বীকার করে তাঁর হুকুম মেনে নেওয়া এবং এ বিষয়ে গভীরে না গিয়ে তা গ্রহণ করা উত্তম, আরও মর্যাদাপূর্ণ।”
সূত্র: মসজিদুল হক
নাহিদা