ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষই নির্যাতনের শিকার : বিএমআরএফ

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষই নির্যাতনের শিকার : বিএমআরএফ

প্রতীকি ছবি

নারী নির্যাতনের ঘটনা সচরাচর শোনা গেলেও পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা আমাদের সমাজে গুরুত্ব পায় না। লোকলজ্জা ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়াসহ নানা কারণে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। তবে এই সমস্যা ক্রমেই বিরাট আকার ধারণ করছে। পুরুষরা শারীরিকের তুলনায় মানসিক নির্যাতনের শিকার বেশি হন। তবে নির্দিষ্টসংখ্যক নির্যাতিত পুরুষ বাধ্য হয়ে নির্যাতনের কথা তুলে ধরছেন। বাংলাদেশ ম্যান’স রাইটস ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা পুরুষ নির্যাতন নিয়ে জরিপ চালিয়েছে।


স্ত্রী কর্তৃক মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সরকারি চাকরিজীবী আবদুল্লাহ আল আরেফিন (ছদ্মনাম)।তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার আমলাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তিনি ভালোবেসে বিয়ে করে পরিবারের সদস্যদের ত্যাগ করে অন্যত্র বসবাস করছেন। আক্ষেপের সুরে তিনি জানান, স্ত্রীর কথা না শোনায় তিন বছরের কন্যাসন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে পাড়ি জমান তার স্ত্রী। এমনকি স্ত্রীর কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে উল্টো রোষানলে পড়তে হয়, নারী নির্যাতনের মামলা ঠুকে দেওয়ার ভয় দেখান স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে গিয়েও কোনো সহযোগিতা পাননি। উল্টো তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা হলে সরকারি চাকরি হারানোর কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাছাড়া সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার লজ্জায় এ বিষয়ে কাউকে বলতেও পারেন না।
ফলে স্ত্রীর মানসিক নির্যাতন সহ্য করে নীরবে চোখের জল ফেলে চলেছেন এই কর্মকর্তা। 


পুরুষরা শারীরিকের তুলনায় মানসিক নির্যাতনের শিকার বেশি হন। তবে নির্দিষ্টসংখ্যক নির্যাতিত পুরুষ বাধ্য হয়ে নির্যাতনের কথা তুলে ধরছেন। বাংলাদেশ ম্যান’স রাইটস ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা পুরুষ নির্যাতন নিয়ে সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছে।

সমাজের প্রায় ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির পরিসংখ্যার অনুযায়ী, বিগত ৯ বছরে সারা দেশে ৪ হাজার ২৬৮ জন ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২ হাজার ৩২৮ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে প্রকৃত পুরুষ নির্যাতনের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএমআরএফ) চেয়ারম্যান শেখ খায়রুল আলম সোহেল এ তথ্য জানান।


২০১৬ সালে বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। 


বাংলাদেশ ম্যানস রাইটস ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, সমগ্র বাংলাদেশে চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১ হাজার ৬৭ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে, ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৩৯৭ এবং সারা দেশে ৭৯২টি পুরুষ নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালে ১০৪৯ জন, ২০২২ সালে ৭৯২ জন, ২০২১ সালে ৪৫০ জন, ২০২০ সালে ৩৩০ জন, ২০১৯ সালে ২৪০ জন, ২০১৮ সালে ১৭০ জন, ২০১৭ সালে ১২০ জন ও ২০১৬ সালে ৫০ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ হিসেবে গত নয় বছরে ৪ হাজার ২৬৮ জন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।

নারীদের পক্ষে থাকা একটি আইনের ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারায় আছে, একজনের স্ত্রী আরেক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় আসক্ত হলে, ওই নারী দায়মুক্ত আর পুরুষ ব্যক্তিটির ৫ বছরের জেল জরিমানা হবে। অথচ এখানে দুজনই সমান অপরাধী কিন্তু শাস্তি পাচ্ছে পুরুষ। এটা কেন? এ কারণে আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে চাই ধারাটি সংশোধন হোক।


তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন বাড়ছে গাণিতিক হারে। আর পুরুষ নির্যাতন বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। সমাজে পুরুষ নির্যাতন বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিয়েতে মোটা অঙ্কের দেনমোহর দেওয়া। দেনমোহরের এই টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সমাজের একদল নারী মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালায়। আবার অনেক নারী দেনমোহরের মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে।

 

পুরুষদের হাতের পুতুল বানাতে না পারলে অনেক নারী উল্টো নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা ঠুঁকে দেওয়ার ভয় দেখায়, এমনকি মামলা করে দেয়। এ ছাড়াও পরকীয়া ও স্যাটেলাইট চ্যানেলের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে পুরুষ নির্যাতন বাড়ছে।

ইসরাত

×