ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

এক হাতে চালের বস্তা এবং অন্য হাতে জুস

জলি রহমান

প্রকাশিত: ১৪:০২, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

এক হাতে চালের বস্তা এবং অন্য হাতে জুস

বঞ্চিত শিশু

গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) মগবাজারের পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়লো ছোট্র একটি ছেলের দিকে। বয়স হবে সর্বোচ্চ দশ বছর। এক হাতে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে জুস খাচ্ছিলো আর এক হাত দিয়ে কাঁধের ওপর চালের বস্তা ধরে রেখেছে। কৌতুহলবশত জিজ্ঞেস করলাম দোকানদারকে।কত কেজির বস্তা? বললেন, বিশ কেজি। কত বেতন? থাকা খাওয়ার পরে ২ হাজার। এই উত্তরটা এমন ভাবে দিল যেন অনেক বেশিই দিচ্ছে। হয়ত ২৫ কেজির বস্তাও ছেলেটি আপন মনে বহন করে। আর বেড়ে উঠবে শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে। মনটা খুব অশান্ত হয়েগেল। শিশুটির মুখের মধ্যে ভেসে উঠেছিলো আমার সন্তানের মুখ। তবে আমাদের সন্তানরাও প্রতিদিন ভোরে পাঁচ-দশ কেজি ওজনের বইয়ের ব্যাগ কাঁধে চাপিয়ে যায় বিদ্যা অর্জন করতে। যদিও এটা নিয়ে শিক্ষিত সমাজ বেশ উদ্বিগ্ন। প্রায়ই গনমাধ্যমে লেখালেখিও হয়। তবে ফলাফল সেই শূন্যের কোটায়ই থেকে যায়।

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি কি আদৌ সম্ভব। পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরিবর্তে যদি টাকা উপার্জনের জন্য কাজ করতে হয়, সে দায় কার? দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও পিছু ছাড়েনি দারিদ্রের কষাঘাত। তাই দরিদ্র পরিবারের অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের স্কুলে না পাঠিয়ে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে কাজে পাঠায়। এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শুধু অবৈতনিক নয় করতে হবে বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারগুলোকে রেশন কার্ড ও ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। আজকাল প্রায়ই শোনা যায়, শহরের বিভিন্ন বিত্তবানদের বাসায় গৃহকর্মীর নির্যাতনের খবর। যাদের বয়স সর্বোচ্চ বারো বছর। পুতুল খেলার বয়সে করতে হয় একটি সংসারের সব কাজ। গৃহকর্মীর বাবা-মা এতে বেশ খুশি থাকে। কেননা সন্তান মাস শেষে কাজ করে টাকা পাঠায়। কিন্তু সাময়িক এই লাভের কারনে ভবিষ্যৎ প্রায় অন্ধকার হয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও সমাজ। দেশের ভবিষ্যৎ নির্মানে আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর আবাসস্থল নির্মান করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা  সস্তা শ্রম পেতে শিশুদের কাজে লাগাই। তাই শিশুশ্রম বাড়ার অন্যতম কারণ আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। দেশের উন্নয়নে সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির উদ্যোগে শিশুশ্রম বন্ধে সদা তৎপর থাকতে হবে।  শিক্ষিত ও সু নাগরিকের মাধ্যমে একটি দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

আর কে

×