ক্ষুদ্র এই প্রাণীটির নাম দেওয়া হয়েছে প্যারাপারত্রেচিনা নীলা। ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি অত্যন্ত বিরল নীল রঙের পিঁপড়া আবিষ্কার করেছেন। এই প্রজাতির খোঁজ পাওয়া গেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের হিমালয়ের পাদদেশে। অরুণাচল প্রদেশের এই হিমালয় অঞ্চলটি দীর্ঘকাল ধরে জীববৈচিত্র্যের একটি উৎস হিসেবে পরিচিত। এই নতুন নীল পিঁপড়ার আবিষ্কার আরও একবার প্রমাণ করেছে, এই অঞ্চলে এখনো অনেক অজানা প্রাণী রয়েছে, যা খুঁজে বের করতে কাজ করছেন জীববিজ্ঞানীরা।
ক্ষুদ্র এই প্রাণীটির নাম দেওয়া হয়েছে প্যারাপারত্রেচিনা নীলা (Paraparatrechina neela)। এই পিঁপড়ার দৈর্ঘ্য ২ মিলিমিটারের কম। এদের মাথা ত্রিভুজাকৃতির। সাধারণত পিঁপড়ার মাথা গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। কিন্তু এই নতুন প্রজাতির পিঁপড়া এ ক্ষেত্রেও অনন্য। এর মাথার দুই পাশে অবস্থিত দুটি বড় চোখ স্পষ্ট দৃশ্যমান। এই বড় চোখগুলো পিঁপড়াকে এর চারপাশের পরিবেশকে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে। এই পিঁপড়ার মাথার নিচের অংশে পাঁচটি তীক্ষ্ণ দাঁত রয়েছে। এই দাঁতগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। এদের এই শক্তিশালী চোয়াল ও দাঁত শিকার ধরতে এবং খাবার কাটতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই বিশেষ ধরনের দাঁতের কারণেই এই পিঁপড়া অন্যান্য পিঁপড়ার তুলনায় খাদ্য সংগ্রহে আরও দক্ষ।
এই পিঁপড়ার সম্পূর্ণ শরীর ধাতব নীল রঙের, যা পিঁপড়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিরল। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন যে এদের নীল রঙের কারণ কী? প্রাণিজগতে নীল রং তুলনামূলকভাবে বিরল। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের বিভিন্ন মধ্যে যেমন মাছ, ব্যাঙ ও পাখি এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন মাকড়সা, মাছি ও ভিমরুল এদের মধ্যে কিছুটা নীল রং দেখা যায়।
পোকামাকড়ের মধ্যে নীল রং প্রায়ই জৈবিক ফোটনিক ন্যানো গঠনের বিন্যাসের ফলে দেহের কাঠামোগত রং তৈরি করে। যদিও প্রজাপতি, বিটল, মৌমাছির মতো কিছু পোকামাকড়ের মধ্যে নীল রং সাধারণ। কিন্তু পিঁপড়ার ক্ষেত্রে এটি বিরল। বিশ্বব্যাপী পরিচিত ১৬ হাজার ৭২৪টি পিঁপড়া প্রজাতি ও উপপ্রজাতির মধ্যে মাত্র কয়েকটি নীল রং বা অনুরূপ রং দেখা যায়। কিন্তু সম্পূর্ণ শরীর ধাতব নীল বর্ণ অত্যন্ত বিরল।
পাথরের ফাটল এদের শিকারিদের থেকে রক্ষা করে এবং একটি নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে। এমন জায়গা আর্দ্র হয় এবং তাপমাত্রা স্থির থাকে, যা এদের জন্য একটি আদর্শ বাসস্থান। নীল পিঁপড়ার বাসার কাঠামো প্রজাতি ও বাসস্থানের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
এই আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কীটতত্ত্ববিদ ড. প্রিয়দর্শন ধর্মরাজন, বেঙ্গালুরুর অশোকা ট্রাস্ট ফর রিসার্চ ইন ইকোলজি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্টের (এটিআরইই) সাহানাশ্রী আর, ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অশ্বজ পুন্নাথ। তাঁরা সবাই মিলে ভারতের পশ্চিম ঘাটের ঘন জঙ্গলে এই নতুন পিঁপড়ার প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। তাঁদের গবেষণাপত্রটি জুকিস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: সায়েন্স ডেইলি, আইএফএল সায়েন্স
আর কে