ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

বন্যা ও সরবরাহ কমের অজুহাত বিক্রেতাদের

শীতকালীন সবজিতেও দাম কমেনি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:২১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

শীতকালীন সবজিতেও দাম কমেনি

.

শীত সেভাবে পড়তে শুরু করেনি। বাজার ভরে উঠেছে শীতকালীন শাক-সবজিতে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর আর লাউয়ে হাঁক-ডাকও কম নয় বিক্রেতাদের। কিন্তু তাতে ক্রেতাদের সাড়া কম। তাদের অভিযোগ গড়ে প্রতি সবজির কেজি ৮০ টাকার বেশি। কিছু সবজি শতক ছাড়িয়েছে। পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা। এত দামে সবজির ব্যাগ ভরা এখন দায়। তাই নেহাত যেটুকু না নিলে নয় সেটিই কেনা হচ্ছে। কিন্তু বিক্রেতাদের ভাষ্য, বন্যার কারণে উৎপাদন কমেছে। পণ্য সরবরাহ কম। যে কারণে এখনো সবজির বাজারের আগুন থামেনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো মূল্য বাড়িয়ে চলেছেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাজার সিন্ডিকেটের থাবা। এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের হাতে। সবজি, মাছ, মাংস, চাল, ডিম, পেঁয়াজ এসব জিনিস কিনতে এখন সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন আলু ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো ১০ টাকা কমে ১৩০-১৪০ টাকা, কাঁচা টমেটো ১০০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা, শিম কেজিতে ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকা, শসা ৬০-১২০ টাকা, উচ্ছে ও করলা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁকরোল ১২০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০-১০০ টাকা, পটোল ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, ধনেপাতার দাম ৫০ টাকা কমে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা, ফুলকপি মাঝারি সাইজ ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, লেবু বিক্রি হচ্ছে হালিপ্রতি ৩০-৫০ টাকা করে।
ক্রেতারা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজিতে লম্বা বেগুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, কাঁকরোলের দাম ২০ টাকা, দেশী শসার দাম ২০ টাকা, করলার দাম ২০ টাকা, ঢ্যাঁড়শের দাম ২০ টাকা, দেশি পটোলের দাম ২০ টাকা, চিচিঙ্গার দাম ২০ টাকা এবং বাঁধাকপির (প্রতি পিস) দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে। এ ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। শীতকালীন সবজির দামও কেন কমছে না জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, বন্যার কারণে উৎপাদন ঠিকমতো হয়নি বলে এখনো সবজি ঠিকমতো ওঠেনি। তাই এখনো দাম কিছুটা বেশি। নতুন সবজি ঠিকঠাক আসা শুরু করলেই আরও দাম কমে যাবে।
গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে। চায়না আদার দাম কমেছে ২০ টাকা। অপরদিকে ভারতীয় আদার দাম ২০ টাকা কমেছে। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। বাজারে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ও বড় সাইজের পেঁয়াজ একই দামে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা করে। এ ছাড়া লাল আলু ৭০ টাকা, সাদা আলু ৭০ টাকা, বগুড়ার আলু ৮০ টাকা, দেশী রসুন ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২৬০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে লাল শাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, কলমি  শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাটা শাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।  
আলু-পেঁয়াজের দাম কেন কমছে না জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, নতুন আলু-পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত এগুলোর দাম কমার সম্ভাবনা নেই। নতুনগুলো এলেই এগুলোর দাম অনেকটা কমে যাবে। তিনি বলেন, যদিও এখন বাজারে ভারতীয় নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে, তবে সেগুলোর দাম এখন অনেক বেশি।
এ ছাড়া শুক্রবার বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০৫ টাকা, কক মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮৫-৩০০ টাকা, দেশী মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৪-১৪৫ টাকা, সাদা ডিম ১৪০-১৪৫ টাকা। বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি দাম বেড়েছে ৭ টাকা, কক মুরগির দাম কমেছে ২ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৩-১০ টাকা এবং দেশী মুরগির দাম বেড়েছে ৫০ টাকা করে। আর প্রতি ডজনে ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা।
সবজির তুলনায় মাছের বাজারে স্বস্তি ॥ মিরপুর ১ নম্বরে আনসার ক্যাম্পের সামনে সকাল থেকেই সড়কে বসে অস্থায়ী বাজার। সেই বাজারে টাটকা মাছ-সবজি পাওয়া যায়। যে কারণে স্থানীয় এলাকাবাসী এখন বাজার ছেড়ে অস্থায়ী বাজারে প্রতিদিন বাজার করতে আসেন। এক্ষেত্রে ক্রেতারা জানান, এখানে তুলনামূলক কম দামে ভালো মানের মাছ পাওয়া যায়। সরেজমিন দেখা যায়, ছোট শোল মাছ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। দেশী কৈ মাছের কেজি ছোট সাইজ ৪০০, বড় সাইজ ৫০০-৬০০ টাকা। ইলিশ মাছ সাইজ অনুযায়ী ৮০০-১৭০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০-৫০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০-১২০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৮০০ টাকা, টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৪০০-১০০০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, শীতকাল হওয়ায় জলাশয়ের পানি শুকিয়ে গেছে। যেকারণে এখন মাছের যোগান বেশি। ফলে দাম বেশ কম। তবে এখন বড় মাছের চেয়ে ক্রেতাদের ছোট দেশি মাছের চাহিদা বেশি। এর ফলে দেশি মাছ সংগ্রহে তাদের বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে। এদিকে বাজারে ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাষকালাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটারে খোলা সরিষার তেলের দাম কমেছে ১০ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ার দল। ফড়িয়ারা একেবারে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনে এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন।

×