.
বনের এক কোণে ছিল একটি বিশাল পিঁপড়ের রাজ্য। সেই রাজ্যের ছিল এক বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ রাজা। রাজার একটি দারুণ রত্নভাণ্ডার ছিল। রত্নভাণ্ডারটি তার রাজ্যবাসীর কাছে ছিল গর্বের প্রতীক এবং তা শুধু রাজকোষে জমা হওয়া একত্রে বহু বছর ধরে সঞ্চিত ধনসম্পদ। কিন্তু রাজার এই রত্নভাণ্ডারের মূল আকর্ষণ ছিল সোনালি গমের দানা, নানা রঙের চিনি এবং ফলের সুগন্ধি টুকরাÑ যা তার রাজ্যে সকল পিঁপড়ার জন্য ছিল আকর্ষণের কেন্দ্র।
এই রাজ্যের নিয়ম ছিল, কেউ কিছু চুরি করলে তাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে। পিঁপড়ের রাজা তার প্রজাদের মধ্যে সততা ও ঐক্যের মূল্য শেখাতে চেষ্টা করতেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় রাজা নিজের রত্নভাণ্ডারে গিয়ে কিছু সময় কাটাতেন। তিনি নিজের হাতে সবকিছু গুছিয়ে রাখতেন। রাজ্যবাসীরা জানত, রত্নভাণ্ডারে কিছু স্পর্শ করলে রাজা তা সঙ্গে সঙ্গে বুঝে ফেলবেন।
একদিন এক ছোট্ট পিঁপড়ে, নাম তার চিমচিম, ভাবল সে একটু মজা করবে। গমের দানা আর চিনির টুকরো থেকে ছোট্ট একটু খাবে, রাজা বুঝতেই পারবেন না। গোপনে সে রত্নভাণ্ডারে ঢুকে কিছু গম আর চিনির টুকরো খেয়ে ফেলে। পরের দিন সকালে রাজা দেখতে পেলেন, কিছু গম আর চিনি উধাও। তিনি তার মন্ত্রীদের ডেকে বললেন, ‘আমাদের রাজ্যে কি কোনো পিঁপড়ে চুরি করেছে?’ মন্ত্রীরা অবাক হয়ে তাকালো। কেউ রাজ্যের নিয়ম ভাঙবে, তা ভাবাই যায় না! রাজা তখন একটি চতুর পরিকল্পনা করলেন।
সন্ধ্যার পর, রাজা রাজ্যবাসীকে ডেকে বললেন, ‘আমার রত্নভাণ্ডার থেকে কিছু গম ও চিনি হারিয়েছে। যে সত্যি কথা বলবে, তাকে আমি পুরস্কার দেব। আর যদি কেউ মিথ্যা বলে ধরা পড়ে, তার জন্য আছে শাস্তি।’ সব পিঁপড়ারা স্তব্ধ হয়ে গেল। সবাই চিন্তিত, এমনটি কীভাবে হলো। চিমচিম ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। কিন্তু সে ভয় পেয়ে সত্যি কথা বলল না।
পরের দিন, রাজা এক নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করলেন। তিনি সবাইকে একজায়গায় এনে বললেন, ‘আমি সবাইকে একটি করে ছোট্ট বস্তা দিচ্ছি। এগুলোর মধ্যে এক বিশেষ মন্ত্র আছে। যিনি চোর, তার বস্তা ক্রমেই ভারী হতে থাকবে।’ পিঁপড়ারা সব মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে নিজেদের বস্তা নিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর চিমচিম দেখলো তার বস্তা ভারী হতে শুরু করেছে। চিমচিম আর ভয় ধরে রাখতে পারল না। সে দৌড়ে রাজার কাছে গিয়ে কেঁদে ফেলল। ‘রাজামশাই, ক্ষমা করবেন! আমি ভুল করেছি। লোভ সামলাতে পারিনি।’
রাজা মুচকি হেসে বললেন, ‘তুমি সৎ পথে ফিরে এসেছো, এটাই বড় ব্যাপার। যে নিজের ভুল স্বীকার করে, তার জন্য আমার হৃদয় সবসময়ই খোলা থাকে।’ এরপর রাজা চিমচিমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলেন। তিনি তাকে রত্নভাণ্ডারের প্রহরী নিযুক্ত করলেন এবং সততার পাঠ শেখালেন। চিমচিম আনন্দে কাজ করতে লাগল এবং সবাইকে সততার গুরুত্ব শেখাতে শুরু করল। সেই দিন থেকে পিঁপড়ের রাজ্যে কেউ আর চুরি করেনি, এবং রাজ্যের সবাই রাজা ও চিমচিমের সততার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হলো।