.
দেশী পুঁটি-দারিকা মাছের শুঁটকি ও কচুরডাঁটা দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের ভর্তা খাবারের নাম সিঁদল। এটি দেশের উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। নতুন প্রজন্মের কাছেও সিঁদল ভর্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে । সিঁদল তৈরিতে গ্রামীণ বধূরা বাপ-দাদার আমল থেকে অনেক পারদর্শী।
বর্ষাকালে গ্রামের ছোট ছোট নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, ডোবায় বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছে ভরপুর থাকে। জাল ফেললেই উঠে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ। অনেক সময় বর্ষার শেষে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ডোবা ও পুকুর ছেঁকে অনেক বেশি মাছ পাওয়া পায়। এর মধ্যে পুঁটি-দারিকা মাছগুলো শুকিয়ে শুঁটকি করা হতো। অনেকেই কম দামে বাজার থেকে কিনেও শুঁটকি বানাতেন। এসব শুঁটকি দিয়ে গ্রামের নারীরা তৈরি করেন দীর্ঘস্থায়ী খাবার সিঁদল।
গ্রামীণ নারীর হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় ছোট মাছের শুঁটকি, কচুর কুচি ডাঁটা, রসুন-আদা ও কাঁচামরিচ, লবণ সংমিশ্রণে শিলপাটা কিংবা উরুন গাউনে পিষে হলুদের গুঁড়া, খাঁটি সরিষার তেলে তৈরি করা খাবারের নাম সিঁদল। এ সিঁদল দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য হাঁড়ি-পাতিলের মধ্যে ভর্তি করে ছাইয়ের মাঝে রাখা হয়। এতে পোকার আক্রমণ কম হয় এবং দিন যতই গড়ায় ততই মজাদার হয়ে ওঠে। গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে গৃহবধূরা সময়ের ফাঁকে অমৃত স্বাদের খাবারটি দুপুরে খাওয়ার সময় তৈরি করেন। কিন্তু শহরকেন্দ্রিক মানুষজন এখনো খুঁজে ফেরেন সিঁদল। অনেকে বলেন, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির এ ঐতিহ্যবাহী খাবারের সুঘ্রাণই হলো সিঁদল।
নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পশ্চিমপাড়া গ্রামের রহিমা বেগম জানান, কচু বাটার সঙ্গে খলিশা, দারিকা বা পুঁটি মাছের আধা ভাঙা গুঁড়া, প্রয়োজন মতো কাঁচামরিচ, লবণ, রসুন, আদা বাটা একই সঙ্গে মেশাতে হয়। তারপর হাতে মুষ্টিতে চেপে চেপে তৈরি করা হয় সিঁদল। মাছ ও শাক-সবজিসহ বিভিন্নভাবে সিঁদল রান্না করা যায়। গ্রামাঞ্চলে এই সিঁদলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা কোনো দিনই হারিয়ে যাবে না।