ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

সমুদ্র হক স্মরণ

লেখনীর মাধ্যমে তিনি পাঠকের হৃদয়  ছুঁয়েছিলেন 

মাহমুদুল আলম নয়ন

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

লেখনীর মাধ্যমে তিনি পাঠকের হৃদয়  ছুঁয়েছিলেন 

সমুদ্র হক

দিনক্ষণ ঠিক মনে নেই। অতি সাধারণ ধরনের মানুষটির সঙ্গে কবে পরিচয় হয়েছিল তা মুখ্য হয়ে ওঠেনি কোনো সময়েই। হাস্যোজ্জ্বল মানুষটির ভেতরে রসবোধ ছিল দারুণ। তবে পরিচয় হয়েছিল লেখার টেবিলেই এটি নিশ্চিত। দ্রুত অনায়াসে লিখে ভরিয়ে ফেলতেন সেই সময় (নিউজপ্রিন্ট কাগজের) পাতার পর পাতা। চলাফেরায় একেবারে সাধারণ ধরনের মানুষটি কি চমৎকারভাবেই না লিখতেন অসাধারণভাবে। হাতের লেখাও ছিল দর্শনীয়। কলম ছুটত অবিরাম। তুলে আনতেন সাধারণ বিষয়ের সব চমৎকার এক একটি প্রতিবেদন। ফিচার লেখনীতে অসম্ভব ধরনের পটুত্ব ছিল তার। এই বিশেষ গুণেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সমুদ্র হক। যার নামের সঙ্গে দৈনিক জনকণ্ঠের পাঠকদের ছিল এক অন্যরকম মিতালী।

একজন খবিরুল হক ফারুক থেকে ‘সমুদ্র হক’ হয়ে ওঠার পেছনে ছিল পাঠককে ছুঁয়ে যাওয়া তার লেখনী। আমাদের সেই সাধারণ ফারুক ভাই তার লেখনীর গুণেই হয়ে উঠতে পেরেছিলেন এক অসাধারণ ফিচার প্রতিবেদক। শুধু ফিচার নয়, সংবাদপত্রের সব বিভাগেই তিনি অনায়াসেই তুলে আনতে পারতেন যে কোনো বিষয়। তার এক একটি ফিচার ছিল রং-তুলিবিহীন শিল্পীর কথামালার এক অনন্য ক্যানভাস। সেখানে থাকত ভিন্ন মাত্রিকতার নান্দনিকতা। কণ্ঠের সুরের মতো তার হাতে হয়তো জড়িয়ে থাকত শব্দ কথার ছন্দ। এই অনন্য গুণের কারণেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন উত্তরের খ্যাতনামা সাংবাদিক সমুদ্র হক। বাঁশিওয়ালা না হয়েও সুর তিনি ঠিকই তুলতে পারতেন। সে সুর থাকত তার লেখার নান্দনিকতায় ফিচারের পরতে পরতে। লেখার গঠনশৈলী তাকে প্রতিদিনই নিয়ে গেছে সাধারণ মানুষের আরও কাছে। তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন পাঠকপ্রিয় সাংবাদিক। দৈনিক জনকণ্ঠের সমুদ্র হক। 
একটি ঢেউ যেমন আগেরটিকে অসীম শূন্যতায় হারিয়ে দিয়ে আরেকটির জন্য অপেক্ষার ক্ষেত্র তৈরি করে। 
মৃত্যু তো তেমনই অতি স্বাভাবিক এক প্রতিবেশীর মতো। বিশ^স্ত সঙ্গীর মতো পাশে নিয়ে ছুটে চলার আরেক নামই তো মৃত্যু। সময়ের সঙ্গে মৃত্যুর গতিও অপ্রতিরোধ্য। একটি ঢেউকে পেছনে ফেলে আরেকটি নতুন ঢেউয়ের মতো প্রতিনিয়ত চিরতরে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোও এক সময় চলে যান বিস্মৃতির অতলে। তবে মৃত্যুর সঙ্গী হলেও মানুষের অনুভূতির সৃষ্টিশীলতার দোলা ঠিকই বয়ে যায়। সময়ের পরিক্রমায় সমুদ্র হকের চলে যাওয়ার এক বছর পার হলেও মনে হয় এই তো সেদিন তিনি কথামালার সুর তুলে কি অসাধারণ লিখেছিলেন। সমুদ্র হক কি বাতাস বা নদীর মতো বহমানতায় বিশাল এক দৌড়ের অংশ হতে চেয়েছিলেন না অন্য কিছু। তবে বিশালতাকে তিনি অনুভব করতে চেয়েছিলেন বলেই সমুদ্র হক হিসেবেই নিজকে পরিচিত করে তুলতে পেরেছিলেন হয়তো। অথচ তার তো অতি সাধারণ ফারুক ভাই হয়েই থাকার কথা ছিল। 
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ॥ দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার সমুদ্র হক’র (এসএম খবিরুল হক) আজ বৃহস্পতিবার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। আজকের এই দিনে ৭১ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। বিশিষ্ট এই সাংবাদিক প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দৈনিক জনকণ্ঠে কর্মরত ছিলেন। 

×