.
রাষ্ট্র পুনর্গঠনে কি কি সংস্কার হবে দেশের জনগণ সে সিদ্ধান্ত নেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সংস্কারের আগে সেগুলো জনপ্রতিনিধিরা সংসদে পাস করবে। কিন্তু জনগণকে বাইরে রেখে সংস্কারের যে বয়ান তৈরি করা হচ্ছে সে বয়ান জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ভয়েস ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ভোটার রাইটস’ আয়োজিত ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু বলেন, আওয়ামী লীগ একটা বয়ান দিয়ে ১৬ বছর দেশ শাসন করেছে। সেই বয়ানের মাধ্যমে জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। জনগণকে বাইরে রেখে তারা একটা বয়ান তৈরি করেছে। এখন আমরা আশা করি, নতুন কোনো বয়ান আমাদের আর শুনতে হবে না। একমাত্র বয়ান হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। এই বয়ানের বাইরে যারা বিভিন্ন সময় দেশ শাসন করেছে, তাদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে, বাংলাদেশ কোন পথে যাবে। তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংহতিকে ভালোভাবে ধরেছেন। তিনি কোনো দলকে চিন্তা করছেন না, পুরো দেশকে চিন্তা করছেন।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপির জন্য সংস্কার কোনো নতুন বিষয় না। ৬ বছর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন। এক বছর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা সংস্কার ঘোষণা করেছেন। এটা বিএনপি একা করেনি। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিল, তাদের সবাইকে নিয়ে করেছেন। বিএনপি একা তো বাংলাদেশ না, সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ। এটার বাইরে ছিল শুধু আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা।
খসরু বলেন, অনির্বাচিত সরকারের সেভাবে সংস্কার করার কোনো সুযোগ নেই। যেসব বিষয়ে সবার ঐক্যমত আছে, সেটা তারা সংস্কার করতে পারে। আমাদের বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সেভাবে কোনো আপত্তিও নেই। একমাত্র সংস্কার, যার মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরতে পারি জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে তা অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারে। বাকি সংস্কারের জন্য দেশের জনগণের কাছে ভোটের জন্য যেতে হবে। দলগুলো তাদের নিজস্ব প্রস্তাব নিয়ে জনগণের কাছে যাবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান উনার একটা বয়ান তৈরি করেছিলেন বাংলাদেশ কীভাবে চলবে। আবার স্বৈরাচারের একটা বয়ান ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেখ হাসিনার আরেকটা বয়ান ছিল যে, উন্নয়ন গণতন্ত্রের ঊর্ধ্বে চলে গেছে। উন্নয়ন আর গণতন্ত্র যে হাত ধরে চলে সেটা তিনি বিশ্বাস করেননি। গণতন্ত্রের মাধ্যমে উন্নয়ন হবে। উন্নয়নের মাধ্যমে গণতন্ত্র হয় না। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় উন্নয়নের কথা ব্যবহার করেছে।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. এম মুজিবুর রহমান। ভয়েস ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ভোটার রাইটসের আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাছের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, সাংবাদিক নেতা আমিরুল ইসলাম কাগজি প্রমুখ।
পরিবর্তনে খাপ খাইয়ে না চললে আওয়ামী লীগের মতো ছিটকে পড়তে হবে- মঈন খান ॥ বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেছেন, পরিবর্তনের সঙ্গে সবাইকে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। যে তাল মিলিয়ে চলতে না পারবে, তাকে ছিটকে পড়তে হবে। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘মানবিক ও গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মঈন খান বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের মূল উদ্দেশ্য কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। যে কাজগুলো আমাদের করা প্রয়োজন সে কাজগুলো আমাদের করতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য যদি সৎ হয়, আমরা যদি সত্যিকারে জনগণের মঙ্গলে কাজ করতে চাই তাহলে এ কাজ করতে কোনো বাধা আসবে না। মঈন খান বলেন, ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছেন তারা পরস্পরবিরোধী নয়। তারা একে অপরের পরিপূরক। সংঘাতের রাজনীতিতে বাংলাদেশের কোনো উন্নতি হবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় রাজনৈতিক দল দেশে নেই। কিন্তু তারা গণতন্ত্রের কথা বলে দেশকে ধ্বংস করেছে। নিজেদের স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পরে আবার গণঅভ্যুত্থানে তারা হারিয়ে গেছে।