.
রাহিদের ছাদবাগানে ডাসা পেয়ারাসহ নানান রকমের ফল ও ফুলের গাছ আছে। সেখানে বিভিন্ন ফুলের সঙ্গে অনেক সাদা ও লাল রঙের জবাফুল ফুটেছে। ছাদে থাকে অনেক পাখির আনাগোনা। মায়ের সঙ্গে ছাদে যাওয়ার সময় রাহি পাখিদের জন্য খাবার নিয়ে যায়। পাখিরা যখন দানা খুটে খুটে খায়- রাহি একমনে তাকিয়ে থাকে এবং খুব আনন্দ পায়। সেদিন লাল জবাফুল গাছের কাছে যেতেই রাহি দেখতে পেলো কয়েকটি পাতা দিয়ে একটি ঠোঙ্গার মতো তৈরি করা। রাহি কৌতূহলবশত তাকালো এবং সে অবাক হয়ে দেখলো- ঠোঙ্গার মধ্যে কতগুলো ছোটছোট ডিম। অমনি সে মা মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
‘এগুলো কিসের ডিম মা?’
‘ওগুলো টুনটুনি পাখির ডিম, ধরিস না।’
‘এতো ছোট ডিম কোন পাখিটায় পারলো মা?’
‘ঐ যে দেখো না ছোট্ট পাখিটি সারাক্ষণ ডালেডালে নেচে বেড়ায় ওর নাম টুনটুনি। আকারে ছোট্ট এই পাখিটি বড়ই চঞ্চল প্রকৃতির।’
‘জানালার কাছে দাঁড়ালেও তো আমি এই পাখি দেখি। কোনো না কোনো গাছে নাচছে। এতো ছোট একটা পাখি কি সুন্দর একটা বাসা বানালো, দেখেছো মা?’ রাহি বলল।
‘হ্যাঁ, দেখবো না কেন? বড় বিচিত্র এই পাখির জীবন প্রণালী। টুনটুনির মুগ্ধকর নির্মাণশৈলি সকলের মন কেড়ে নেয়। তাই এই পাখিকে দর্জি পাখিও বলা হয়। অস্থির ও চঞ্চল প্রকৃতির হওয়ায় এক জায়গায় টুনটুনি কখনো বসে থাকে না। এই আছে তো, এই নেই।’
‘কত মিষ্ট গান গায় তাই না মা?’ রাহি আবার মাকে বলে।
‘টুনটুনির কণ্ঠ ভারি মিষ্টি। দূর থেকেও শোনা যায় তার টুইট টুইট চিপ চিপ টুন টুন ডাক। একসময় সব জায়গায় দেখা মিলতো দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট পাখি টুনটুনির। এদের ডাকাডাকিতে মুখর থাকতো গ্রামীণ পরিবেশ।’
এবার রাহি একা একা বলছে- টুনটুনির বুক এবং পেট সাদাটে, মাথা ও ডানার উপরিভাগ জলপাই-লালচে এবং চোখের মনি পাকা মরিচের মতো। বুক সাদা পালকে ঢাকা। লেজ খাড়া, তাতে আবার কালচে দাগ আছে।
‘ওরা কিন্তু ঋতুভেদে পিঠ ও ডানার রঙ কিছুটা বদলায়।’ বললেন মা।
‘তাই নাকি!’ রাহি অবাক হয়ে যায়। বলে, ‘কত চালাক এই ছোট্ট পাখিটা দেখেছো মা?’
‘এদের যত চালাক পাখি ভাবা হয়, তারা আসলে তেমন নয়। এরা যেমন চালাক তেমন বোকাও। টুনটুনি বিপদ দেখলেই চেঁচামেচি করে। ফলে সহজেই শত্রুর কবলে পড়ে।’
‘এতো ছোট আকারের একটি পাখি। ওরা খায় কী, মা?’
‘টুনটুনি বিভিন্ন রকম খাবার খেয়ে থাকে। এরা অনেক অপকারী পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ খাদ্য হিসেবে খায়। তাছাড়াও ছোট কেঁচো, মৌমাছি, ফুলের মধু ও রেশম মথ ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ধান-পাট-গম পাতার পোকা, শুয়োপোকা ও তার ডিম, আম পাতার বিছা পোকা তাদের খাদ্য তালিকায় আছে।’
‘ওরা ছোট বলে কি গাছের পাতায় বাসা বানায় মা?’
‘টুনটুনির বাসা খুব বেশি উঁচুতে হয় না। সাধারণত এরা ৬-১০ সেমি উচ্চতায় বাসা বাঁধে। ছোট গুল্ম জাতীয় গাছ অথবা ঝোপঝাড় এদের প্রধান পছন্দ। শিম, লাউ, কাঠবাদাম, সূর্যমূখী, ডুমুর, লেবু এগুলোর গাছে এরা বেশি বাসা বাঁধে। জবা, রঙ্গন, কুডুরা ইত্যাদি বড় পাতার গাছের ২-৩টি পাতা একত্রে সেলাই করে টুনটুনি ঠোঙার মতো বাসা বাঁধে। মাকড়সার জালের সুতা দিয়ে এরা পাতা জোড়া লাগায়। এরপর যেসব গাছের তুলা জাতীয় জিনিস জন্মে সেসব গাছ থেকে তুলা এনে বাসার মধ্যে নরম পরিবেশ তৈরি করে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি মিলে বাসা তৈরি করে।’
‘দেখ মা, কি সুন্দর চারটা ডিম পেড়েছে। বাচ্চা কবে ফুটবে?’
‘টুনটুনি সাধারণত ২-৪টি ডিমই পাড়ে। ১৪-১৫ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। মা পাখি পরম যত্নে ছানাকে খাওয়ায়। এবং বড় করে তোলে। বড় হলে আবার তারা উড়ে বনে চলে যায়। আর টুইট টুইট সুরে মাতিয়ে রাখে সারা বন।’
‘ওদের ছানারা আমাদের ছাদেই থাকবে তাই না মা?’
‘হ্যাঁ, ওদের মা-বাবা তো এখানেই থাকে ওরাও থাকবে।’
এবার রাহি মনের আনন্দে বলতে লাগলো, ‘তাহলে আমাদের ছাদে আরও টুনটুনি পাখি বাড়বে। দেখে নিও একদিন আমাদের ছাদ টুনটুনি পাখিতে ভরে যাবে। আর সারাদিন শুধু টুইট টুইট গান করবে।’
এই আশায় রাহির মন খুশিতে নেচে উঠল।