ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

হেমন্তের প্রকৃতিতে পরিবর্তনের হাওয়া

শীতের পরশ থেকে থেকে যায় বুঝি ওই ডেকে ডেকে

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

শীতের পরশ থেকে থেকে যায় বুঝি ওই ডেকে ডেকে

‘হিম পারাবার পারায়ে’ শীত আসছে। ফিকে হচ্ছে রোদ। স্নিগ্ধরূপে ধরা দিচ্ছে প্রকৃতি

ডাক শুনতে পাচ্ছেন তো? ওই যে, কবিগুরু যেমনটি লিখেছিলেন, ‘শীতের পরশ থেকে থেকে, যায় বুঝি ওই ডেকে ডেকে।’ ডাকতে শুরু করেছে শীত। প্রিয় ঋতুর আগমনী বার্তা দিচ্ছে প্রকৃতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিশির ঝরছে এখন। কুয়াশার জাল বিস্তৃত হচ্ছে। এই সব পরিবর্তনের পথ ধরেই আসবে শীত। প্রিয় ঋতুর জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে বাঙালি। 
ষড়ঋতুর বাংলাদেশ বলা হলেও, এখন অনেক কিছুই উলট পালট হয়ে গেছে। একসময় ছয় ঋতু ছয়টি আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হতো। দুই মাস পর পর বদলে যেত প্রকৃতি। ফলে একঘেয়ে লাগত না। এখন বেশিরভাগ সময় গরম। গ্রীষ্মের দাবদাহে জীবন একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে যায়। বর্ষায় বৃষ্টি হলে গরম কিছু সময়ের জন্য কমে বটে। বাকি সময় ঠিকই ভুগতে হয়। শরৎকালে, মানে, ভাদ্র আশ্বিন মাসে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয়।

আর শীতের পরশ পাওয়া শুরু হয় হেমন্ত থেকে। হ্যাঁ, এখন সেই হেমন্তের কাল। প্রথম মাস কার্তিক চলছে। ফলে কমতে শুরু করেছে উষ্ণতা। রোদের তেজ আগের মতো নেই। বিকেল বেলায় বা সন্ধ্যা নামতেই শীতের একটা আবহ। এখন থেকে যত দিন যাবে আবহটা তত জোরালো হবে।   
গ্রামীণ জনপদে ইতোমধ্যে ঢুকে পড়েছে শীত। বিশেষ করে  দেশের উত্তরাঞ্চলে মৌসুমের প্রথম শীত অনুভূত হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি রাতেই শিশির ঝরছে। ভোরে কুয়াশা। সন্ধ্যার পর হালকা জামা গয়ে দিয়ে কেউ বের হচ্ছেন না। শীতের আগে ‘শীত শীত’ ব্যাপারটা উপভোগ করছেন বলেও জানিয়েছেন অনেকে। 
অবশ্য ঢাকা যন্ত্রনগরী। এখানে গাছপালা কম। কলকারখানা বেশি। যানবাহন আরও বেশি। ঘন অট্টালিকার কারণে স্বাভাবিক বাতাস বইতে পারে না। তার পরও এখন শেষরাতে হালকা ঠান্ডা পড়ছে। 
ঘুম থেকে ওঠে পাখা বন্ধ করতে হচ্ছে। কেউ কেউ হালকা কাঁথা জড়িয়ে নিচ্ছেন গায়ে। ঘুমটাও তাই ভালো হচ্ছে। নির্বিঘœ হচ্ছে। খুব ভোরে উঠতে পারলে দেখা যাচ্ছে শিশিরও। এভাবে ধীরে ধীরে হেমন্তের হাত ধরে শীত নামবে। শীতকালের আনুষ্ঠানিক শুরু হবে পৌষে। মাঘে অনুভূত হবে সবচেয়ে বেশি শীত। 
বর্তমানে শীতের আগমনী বার্তা পেয়ে চারপাশে চলছে নানা প্রস্তুতি। ঢাকার রাস্তার ধারে বসে গেছে পিঠার দোকান। ফুটপাতে দিব্যি চুলো জ্বালিয়ে বসে গেছেন মৌসুমি দোকানিরা। চিতই ভাঁপা তেলের পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত তারা। ক্রেতা আপাতত কম। তবে  বাড়তে সময় লাগবে না বলেই মনে করছেন দোকানিরা। 
গরম কমতে থাকায় জনজীবনেও পরিবর্তন আসছে। বন্ধু স্বজনরা পরস্পরের আরও কাছে এসে বসতে পারছেন এখন। এখানে ওখানে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে চলছে গল্প আড্ডা। শীতবস্ত্রও ওঠে গেছে রাজধানীর শপিংমলে। ফুটপাতে শীতবস্ত্র বেচা কেনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে শীতের ডাক, পরিবর্তনের হাওয়া স্পষ্ট।

×