ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

গুহার শহর পেত্রা

প্রকাশিত: ০১:২৬, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

গুহার শহর পেত্রা

গুহার শহর পেত্রা

৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এটি ছিল নাবাতাইন রাজ্যের রাজধানী। পেত্রা নগরী মূলত একটি অত্যন্ত সুরক্ষিত দুর্গ ছিল। এটি বিখ্যাত এর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভগুলোর জন্য। এটি তৈরি হয়েছে গুহার মধ্যে, যা কোথাও কোথাও মাত্র ১২ ফুট চওড়া, মাথার ওপরে পাথরের দেয়াল। গুহার পাশেই রয়েছে কঠিন পাথরের দেয়ালের গায়ে গ্রথিত সেই প্রাচীন দালানগুলো যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ‘খাজনেত ফিরাউন’ নামের মন্দিরটি। মন্দিরটি ফারাওদের ধনভান্ডার নামেও পরিচিত। আরো রয়েছে একটি অর্ধগোলাকৃতির একটি নাট্যশালা যেখানে প্রায় ৩০০০ দর্শক একসাথে বসতে পারে।
পেত্রা নগরী ছিল অত্যন্ত সুরক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। পেত্রার চার ধারে ছিল উঁচু পাহাড় আর একটি অফুরন্ত ঝরনাধারা। পশ্চিমের গাজা, উত্তরের বসরা ও দামাস্কাস, লোহিত সাগরের পাশের আকুয়াবা ও লিউস এবং মরুভূমির ওপর দিয়ে পারস্য উপসাগরে যাওয়ার প্রধান সব বাণিজ্যিক পথগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতো পেত্রা।
রোমান শাসনের সময় সমুদ্রকেন্দ্রিক বাণিজ্য পুরোদমে শুরু হলে পেত্রা দ্রুত ধ্বংস হতে থাকে। ১০৬ খ্রিষ্টাব্দে রোমানরা এটি দখল করে তাদের ‘আরব পেত্রাইয়া’ প্রদেশের অংশীভূত করে।

মুসলিমরা এটি তাদের দখলে নেয় সপ্তম শতকে এবং পরবর্তীতে দ্বাদশ শতকে আবার ক্রুসেডাররা এটিকে দখল করলে ক্রমে ক্রমে এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এ ছাড়া ৩৬৩ সালে এক ভূমিকম্পে এর দালানগুলো ধ্বংস এবং পানি সঞ্চালন ব্যবস্থা নষ্ট হয়। মধ্যযুগে পেত্রার ধ্বংসাবশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, ত্রয়োদশ শতকের দিকে পেত্রা দেখতে যান মিসরের সুলতান বাইবারস।
বহু বছর অজানা থাকার পর ১৮১২ সালে এই প্রাচীন শহরটিকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে উন্মোচন করেন সুইস পরিব্রাজক জোহান লুডিগ বুর্খার্দত। জন উইলিয়াম বার্গন তার নিউডিগেট পুরস্কার বিজয়ী বিখ্যাত এক সনেটে একে বর্ণনা করেছেন ‘পুরাতন একটি গোলাপ-লাল নগরী’ বলে। বার্গন কিন্তু পেত্রাতে যাননি। বলা যেতে পারে যেতে পারেননি। কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর্যন্ত শুধুমাত্র ইউরোপীয়রাই সেখানে যেতে পারতেন। স্থানীয় লোক আর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যেতে হতো সেখানে।

ইউনেস্কো এটিকে ‘বৈশ্বিক ঐতিহ্যবাহী স্থান’ ঘোষণা করে ১৯৮৫ সালে। ঘোষণায় পেত্রাকে বলা হয় ‘মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম সবচেয়ে মূল্যবান সাংস্কৃতিক সম্পত্তি’। পেত্রা সংস্কৃতি, সম্পদ আর ক্ষমতায় একসময় যে কত সমৃদ্ধ ছিল তা প্রমাণ করতে পেত্রার ধ্বংসাবশেষই যথেষ্ট।
এখানে খুব বড় মূর্তি স্থাপিত মন্দির, একসাথে ৩০০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নাট্যশালা, লাইব্রেরি, ১০ থেকে ১৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গ্যালারি সমৃদ্ধ স্টেডিয়াম ছিলো। রাজসভা, মন্ত্রিসভা, পরিষদবর্গের জন্য আলাদা সভাকক্ষ ছিলো। ছিলো প্রায় ১০,০০০ বর্গফুট আয়তনের একটি বিচারালয়। 

বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য  

ইউনেস্কো পেত্রাকে মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনে ‘প্লেসেস টু সি বিফোর ইউ ডাই’ প্রতিবেদনে পেত্রাকে বিশ্বের ২৮টি শ্রেষ্ঠ স্থানের একটি হিসেবে বাছাই করে।

×