ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ১০ অক্টোবর ২০২৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

রাজধানীতে মেট্রোরেলের পিলারে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্লোগান। শিক্ষার্থীদের এই স্লোগান বাস্তব রূপ পাবে তো?

অবশেষে শুরু হলো শারদ উৎসব। ‘অবশেষে’ বলার কারণ, এবার পূজার আয়োজন ঘিরে ছিল নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সরকার পরিবর্তনের পরপরই হামলার শিকার হয়েছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের বাসা বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ গড়ে উঠতেও দেখা গেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তো বটেই, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ করেছে।

এমনকি কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীরা শহর ঢাকায় যেসব গ্রাফিতি অঙ্কন করেছেন সেখানে সবার বাংলাদেশের কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। বিভিন্ন দেয়ালে, মেট্রোরেলের পিলারে এখনো লেখা রয়েছে : ‘ধর্ম যার যার/দেশ সবার।’ আরেকটি গ্রাফিতি খুবই সাড়া ফেলেছে, যেখানে মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর উদ্ধৃতি। উদ্ধৃতিটি  এ রকম : শুনো, ‘ধর্ম আর দেশ মিলাইতে যায়ো না। পরে ফুলের নাম কি দিবা ফাতেমা চূড়া?’ অর্থাৎ কৃষ্ণচূড়াকে ফাতেমাচূড়া করার প্রয়োজন নেই। সবখানে ধর্মকে টেনে আনা নিষ্প্রয়োজন।

একই চেতনার জায়গা থেকে দেশে জনপ্রিয় হয়েছে ‘ধর্ম যার যার/উৎসব সবার’ স্লোগানটি। কিন্তু সাম্প্রদায়িক অপশক্তি উদারনৈতিক চিন্তাধারা থেকে অনেক দূরে। বড়সড় প্রতিবাদ এবং নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যেও তাই বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিমা ভাঙচুরের কিছু ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় বুধবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদ উৎসব। বৃহস্পতিবার ছিল সপ্তমী। আজ শুক্রবার পালিত হবে অষ্টমীর আনুষ্ঠানিকতা। আশার কথা যে, এই ক’দিনে নতুন করে সাম্প্রদায়িক হামলার আশঙ্কা কিছুটা কমে এসেছে।

একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে উৎসবের রং। ঢাকায় ২০৫টি ম-পে পূজা হচ্ছে এবার। ফলে শহরের প্রায় সব প্রান্তেই উদ্যাপনের ছবি দৃশ্যমান হচ্ছে। পুরান ঢাকার পূজার আছে আলাদা ঐতিহ্য। সেখানে অবস্থিত ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জাতীয়ভাবে উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। শাঁখারীবাজারও জমজমাট। তাঁতীবাজার লক্ষ্মীবাজার নারিন্দাসহ আশপাশের আরও কিছু এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত চলছে উৎসব। সরু গলিগুলো এখন আলো ঝলমলে। মরিচবাতি দিয়ে সাজানো। ম-পে প্রবেশের প্রধান সড়কে বা মোড়ে উঁচু তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানেও চমৎকার আলোকসজ্জা। নতুন ঢাকায় উৎসবের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে মাঠ বা খোলা জায়গা।

বনানী পূজাম-প ঘিরে প্রতিবারের মতোই বাড়তি কৌতূহল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অভিজাত এলাকার ব্যয়বহুল পূজা। দূর-দূরান্ত থেকে দেখতে আসছেন অনেকে। রমনা কালী মন্দির, কলাবাগান, খামারবাড়ি, উত্তরা এলাকার ম-পগুলোতেও উৎসবপ্রেমীদের ভিড়। রাতে আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে তাই উপভোগ্য। হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অন্য প্রায় সব ধর্মের মানুষ শারদ উৎসব উপভোগ করছেন। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপস্থিতি চোখে পড়ছে খুব। এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, এই সহাবস্থান, হৃদ্ধতাপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে হবে। পারব তো আমরা? আসুন শপথ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ি। এগিয়ে নিয়ে যাই।   
খুলছে শিল্পকলার দ্বার ॥ রাজধানীর শিল্প সংস্কৃতির চর্চা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তার পর লম্বা সময় কেটে গেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছিল না। যে শিল্পকলা একাডেমি ঢাকার শিল্প সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের তীর্থস্থান সেটি ছিল তালা দেয়া। তবে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়ার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার থেকে সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হচ্ছে নাট্যমঞ্চ। একাডেমির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে শিল্পকলা একাডেমিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই কিছু নির্দেশনা অনুসরণ সাপেক্ষে শুরু হচ্ছে মঞ্চায়ন।’ সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে বাংলাদেশ থিয়েটারের নাটক ‘সী মোরগ।’ পুরনো এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রযোজনা হলেও, নাটকটি দিয়ে বন্ধ্যত্ব কাটবে বলে আশা। সেই সঙ্গে আরও জরুরি চাওয়া এই যে, অতি দ্রুত অন্যান্য বিখ্যাত দল তাদের আলোচিত নাটক নিয়ে মঞ্চে ফিরতে পারবে। তাহলেই কেবল প্রাণ ফিরে পাবে নাট্যমঞ্চ তথা শিল্পকলা একাডেমি।

×