আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে মঞ্চস্থ অদৃশ্য গল্প শীর্ষক পাপেট থিয়েটারের একটি দৃশ্য
দিনের অধিকাংশ সময় ঝরেছে বারিধারা। সেই সুবাদে শহরের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে জলজট। তাই বলে কি রুদ্ধ হয়েছে শিল্পচর্চা? থেমে গেছে সঙ্গীতাসর কি নাটকের প্রদর্শনী? না তেমনটা ঘটেনি। বরং বিকেলের পর বৃষ্টির দাপট কমলে শিল্পপ্রেমীরা মনের খোরাক মেটাতে ছুটেছেন কাক্সিক্ষত গন্তব্যে। তাই সন্ধ্যার অবকাশে তাদের কেউবা ছুটে গেছেন বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে।
অনেকেই আবার পাপেট শো দেখতে হাজির হয়েছেন ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে । শনিবার বৃষ্টি¯œাত সন্ধ্যায় মহিলা সমিতিতে মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে দৃশ্যপট নাট্যদলের নাটক সক্রেটিসের জবানবন্দি। অন্যদিকে অদশ্য গল্প শিরোনামের পাপেট শো প্রদর্শিত হয়েছে আলিয়ঁস ফ্রসেজের লা গ্যালারিতে।
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসবের অংশ হিসেবে পরিবেশিত হয়েছে ইনভিসিবল স্টোরিজ বা অদৃশ্য গল্প শিরোনামের বডি পাপেট থিয়েটার। পুতুলের সঙ্গে অভিনয়শিল্পীর সম্মিলন ঘটিয়ে সজ্জিত হয়েছে প্রযোজনাটি। ইনভিজিবল স্টোরিজ বা অদৃশ্য গল্প শিরোনামের বডি পাপেট থিয়েটার। ল্যারি ক্যানাক নির্দেশিত দুই চরিত্রে সাজানো প্রযোজনাটির দুই অভিনয়শিল্পী হলেন ডায়ানা মেরিলিন ও মো. ফরহাদ আহমেদ।
ভিন্নধর্মী এক কাহিনী উঠে এসেছে এই পাপেট থিয়েটারে। যে গল্পে ঢাকার নিত্যদিনের জীবনে ভূতের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন দুই বিজ্ঞানী। গবেষণার একপর্যায়ে বিষয়টিকে তারা ভালোভাবে আয়ত্ত করেন। আর এই বিষয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে গিয়ে তারা একটি দুর্দান্ত পরিভ্রমণের পথে ধাবিত হয়। এই ভ্রমণ বিজ্ঞানীদ্বয়ের উপলব্ধির জগৎকে আলোড়িত করে। তারা একইসঙ্গে সুন্দরবনের বন্যতা ও প্রাজ্ঞতা সম্পকে জানতে পারে। এভাবেই মাল্টি ডিসিপ্লিনারি প্রোডাকশনটি মানুষের মুখে প্রচলিত গল্পের সঙ্গে আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক, ভূতের গল্প এবং অন্যান্য অতিপ্রাকৃত উপাদানকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। নাচ-গান ও অভিনয়ের সমন্বেয়ে পরিণতির পথে এগিয়ে যায় শিল্পের বহুমাত্রিকতাকে আলিঙ্গন করা প্রযোজনাটি।
এদিকে বৃষ্টিঝরা শরতের সন্ধ্যায় মঞ্চনাটকের টানে অনেকেই ঢুঁ মেরেছেন মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে। এখানে মঞ্চস্থ হয়ে নাট্যদল দৃশ্যপটের নাটক ‘সক্রেটিসের জবানবন্দি’। সক্রেটিসকে নিয়ে প্লেটোর লেখা ‘আপোলোগিয়া সোক্রাতুস’ অবলম্বনে শিশির কুমার দাশ নতুন আঙ্গিকে রচনা করেছেন নাটকটি। নির্দেশনা দিয়েছেন আলী মাহমুদ। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৪০০ বছর পূর্বের এক ঘটনাপ্রবাহকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে কাহিনী। পেলোপনেসিয় যুদ্ধে এথেন্স পরাজিত হলে রাজ্যের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়। ফলে এথেন্সের শাসন ও রাজ্য পরিচালনার ভার নেয় তিরিশজন লোক। এই তিরিশজন লোক নিয়ে গড়া হয় স্বৈরতন্ত্র।
তার থেকে এগারো জনকে নিয়ে গঠন করা হয় একাদশ পরিষদ। যাদের কাজ ছিল গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরা আর গণতন্ত্র সমর্থকদের শাস্তি দেওয়া। স্বৈরশাসকেরা তাদের সমর্থক হিসেবে সক্রেটিসকে চাইলে তিনি তাদের সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানান। শাসকগোষ্ঠী শুরু করে অত্যাচার নিপীড়ন। প্রহরীরা সক্রেটিস ভেবে বিভিন্নজনকে ধরে আনতে শুরু করলে একদিন সক্রেটিস নিজেই এসে উপস্থিত হন এই একাদশ চক্রের সামনে। বিচারকার্যের পর সক্রেটিসের মৃত্যদ- ঘোষণা করা হয়।
সক্রেটিস দ- মেনে নিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করেন এবং শেষ পর্যন্ত হেমলক বিষপান করেন। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনন্ত, রনদা, জাফর, পারভেজ আখতার, আহসান হাবিব, রাকিব চৌধুরী, যশ জায়েদী, রাহাদ, আলী মাহমুদ, রবিন চৌধুরী প্রমুখ।