ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

 তারেজমিনপার

সাইফ আদনান

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৪ অক্টোবর ২০২৪

 তারেজমিনপার

.

২০০৭ সালের ২১ ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত একটি হিন্দি চলচ্চিত্র তারে জমিন পার। চলচ্চিত্রের শিরোনাম সরাসরি হিন্দি থেকে ‘তারার উপরত তারা’ থেকে অনুবাদ করে। আমির খানের প্রথম পরিচালিত সিনেমা এটি। ‘তারে জমিন পার’ পুরোপুরি শিশুদের ছবি। অন্তত প্রযোজক-পরিচালক শিশুদের কথা মাথায় রেখেই ছবিটি বানিয়েছেন। শিশুদের সেই রঙিন জগৎ- যেখানে মাছ, প্রাণী, ফুল, পাখি আর আনন্দ কোলাহলে ভরা। যেখানে সকল বস্তুই নেচে-গেয়ে আনন্দে মত্ত থাকে। শিশুদের স্বপ্নময় এই জগৎটিই স্বার্থকভাবে চিত্রায়িত করেছেন পরিচালক আমির খান। প্রযোজকের খাতায় নামটি আগেই লিখিয়েছিলেন তিনি। এবার সফল পরিচালকের খাতায় নাম লেখালেন তারে জমিন পার-এর মাধ্যমে।
ছবির গল্পটা কিছুটা অন্যরকম। এমন একটি মানসিক সমস্যাকে পরিচালক তার মুভির মাধ্যমে তুলে এনেছেন যা সকল বাবা-মাকেই নতুন করে ভাবতে শেখাবে। মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্র ইশান নন্দী কিশোর আওয়াস্তি আট-নয় বছর বয়সি দুরন্ত বালক। আকর্ষণীয় এই বালকটি ডিসলেক্সিয়া নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত। বানান ভুল করা আর পড়াশোনায় গোলমাল এ রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। ইশান ক্লাসে কিছুই পারে না, পরীক্ষাতেও তার নম্বর সবার শেষে। অথচ তার বড় ভাই ইয়োহান সবদিক থেকেই শীর্ষে। পড়াশোনায় তো বটেই, খেলাধুলাতেও সে খুব ভালো। ইশানের দুরন্তপনা আর অ্যাকাডেমিক রিপোর্টে চরম ব্যর্থতাকে ডিসিপ্লিনের আওতায় আনতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বোর্ডিং স্কুলে। সেখানেও অবস্থা তথৈবচ।
প্রিয় মা আর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইশান পাল্টে যায়। ক্লাসের সবচেয়ে চুপচাপ ছেলেটি হয়ে যায়। হঠাৎ করেই একরাশ শীতল হাওয়ার মতো স্কুলে আসলেন নতুন পার্টটাইম ড্রয়িং শিক্ষক নিকুম্ভ স্যার (আমির খান), যিনি নিজেও ইশানের মতো এক দুঃসহ শৈশব কাটিয়েছেন ডিসলেক্সিয়া রোগের রোগী হয়ে। মুহূর্তেই পাল্টে যায় সবকিছু। সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে পাঠদানের মাধ্যমে নিকুম্ভ স্যার সকলের প্রিয় হয়ে ওঠেন। কিন্তু ইশানই একমাত্র ব্যতিক্রম। তার এই চুপচাপ মনমরা ভাব নিকুম্ভ স্যারের মনোযোগ কেড়ে নেয়। আস্তে আস্তে সব কিছু জেনে নেন তিনি। যোগাযোগ করেন ইশানের বাবা-মার সঙ্গে।

চেষ্টা করেন ছেলের সমস্যাটি বোঝাতে, কিন্তু ব্যর্থ হন। মুভি শুরু হওয়ার আধাঘণ্টা বাদেই দর্শক হয়তো আঁচ করতে পারবেন শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে। কিন্তু তারপরেও ছবির সামনে থেকে উঠতে মন চাইবে না। শুরুর দৃশ্যে ইশানের ড্রেন থেকে মাছ ধরে বোতলে করে বাড়ি নিয়ে আসা কিংবা রাস্তা থেকে চকচকে বস্তুটি তুলে নিয়ে পকেটে ভরার দৃশ্য মার্ক টোয়েনের সৃষ্টি হাকলবেরি ফিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু একটু পরেই বোঝা যায়, মুভির গল্প এগোচ্ছে নিজ গতিতে। সব মিলিয়ে বলতে হয়, তারে জমিন পার একটি অসাধারণ ছবি। পরিচালক আমির খান এ ধরনের ভিন্ন কাহিনীচিত্র নির্মাণ করে সকলের প্রশংসা কুড়ানোর যোগ্য কাজটিই করেছেন। পুরো ছবিটিই যেন তার ট্যাগলাইন এভরি চাইল্ড ইজ স্পেশালকেই প্রতিফলিত করেছে। সুতরাং প্রত্যেকের জন্যই আলাদা ট্রিটমেন্ট, আলাদা যত্ন প্রয়োজন।

×