.
আসলাম সানীর কবিতা
মানুষেরই জন্য
ওই যে আকাশ নীরব-নিথর
ধ্যানমগ্ন দেখো
সৃষ্টিধন্য মহাশূন্য
অবাক মনে রেখো
তার আঙিনায় মেঘের ভেলা
চাঁদ-সূর্যের কতো খেলা
দিন-রাত্রি সারাবেলা
মনের কাব্য লেখো
জ্ঞানগর্বে সেই দর্শন
মহৎ ছবি এঁকো।
এই তো মাটি পাহাড়-সাগর
আলোয়-ভালোয় জগৎ ভাস্বর
বন-বনানী আর চরাচর
মানুষেরই জন্য
কর্ম-কীর্তি-ত্যাগ-সাধনায়
মানুষই অনন্য-
মানুষেরই জন্য
ধন্য জগৎ ধন্য।
*
জোনাকি
শারমিন নাহার ঝর্ণা
ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকিরা
মাগো, কোথায় যায়?
ওদের দেখে আমার কেন
উড়তে মনে চায়?
ঝিকিমিকি আলো দেখে
কী যে লাগে ভালো,
আমার যদি থাকতো মাগো
ওদের মতো আলো
ওই আলোটা বিলিয়ে যেতাম
আঁধার যাদের ঘর,
জোনাক পোকা! একটু আলো
আমাকে দান কর।
খোকন সোনা ছুটে চলে
জোনাক পোকার পিছু,
হতাশ হয়ে ফিরে খোকন
মাথা করে নিচু।
*
শিশির ভেজা শারদ সকাল
সুব্রত চৌধুরী
শিশির ভেজা শারদ সকাল মায়ের নোলক ঘাসে
রোদের জরি গায়ে মেখে ফড়িং ছানা হাসে।
দীঘির জলে টপ-টপা-টপ ঝরে পাকা তাল
মিষ্টি রসে খোকা-খুকু রঙিন করে গাল।
নদীর পাড়ে চামড় নাড়ে সাদা কাশের ফুল
খুকুর দুপুর আলতা নূপুর এলোকেশি চুল।
খোকা মাতে লাটাই হাতে মন মেলেছে ডানা
রঙিন ঘুড়ি মেঘের বাড়ি দেয় লুকিয়ে হানা।
সন্ধ্যা নামে আবির খামে সূর্য ডোবে টুপ
সন্ধ্যারতি আজান সুরে রাত্রি নামে ঝুপ।
মেঘের আড়ে উঁকি মারে চরকা কাটা বুড়ি
বাঁশ বাগানের ফাঁকে ফাঁকে জুনির ওড়াউড়ি।
রূপোর সিকি ঝিকিমিকি দুগ্ধ ধবল রাত
সুজন মাঝি ভাটির সুরে করে বাজিমাত।
মায়ের কোলে খোকা দোলে ভালোবাসার ঊমে
চাঁদের মামা খোকার কপাল দেয় ভরিয়ে চুমে।
থেকে থেকে ডেকে ওঠে রাত্রি জাগা পাখি
হুতুম হুতুম ডাকে ভুতুম জোসনা গায়ে মাখি।
*
আমায় ভালোবেসো
আজিজ বিন নূর
রোদের ছানা রোদের ছানা
মোদের বাড়ি যাবে?
নাজ বুবুদের বাজনা দেবো
মেঘ তাড়ানো গাবে।
বাদলা মেঘে পাল তুলেছে
উঠান গেছে ভেসে
কৎলা মাছের ঝাঁক উঠেছে
ছাদ বাগানের শেষে।
ব্যাঙগুলোতে ভরছে হাঁড়ি
ল্যাঙ মেরেছে কাদা
ভাসছে নগর ভাসছে বাড়ি
ভাসছে বাঁদর হাঁদা।
রোদের ছানা রোদের ছানা
মোদের বাড়ি এসো
মেঘকে না হয় করো ঘৃণা
আমায় ভালোবেসো।
*
বৃষ্টি
কোমল দাস
বৃষ্টির-
ফোঁটা তুমি
এক্ষুণি থামো,
কেন তুমি
ঝমাঝম নামো?
‘থামব না-
থামব না
আমি যে স্বাধীন,
ভুলেছ কি
খোকা, এটা
বৃষ্টির দিন?’
থামো না, গো-
কাজ আছে
যাব ইশকুলে,
এ সময়ে
ফের তুমি
এসো না গো ভুলে।
বৃষ্টিতে-
ভেজাটা যে
খুব ভালো লাগে,
অসময়ে
আসলেই
শুধু রাগ জাগে।
অসময়ে
এসো না গো
রেখো এটা মনে,
দুপুরেই
এসো তুমি
‘গোসলের ক্ষণে।