মেট্রোরেলের স্টেশন সংলগ্ন নতুন এবং প্রশস্ত ফুটপাতগুলো দেখতে দেখতে হকার বা ভিক্ষুকদের দখলে চলে যাচ্ছে।
নতুন, সুন্দর বা পরিপাটি করে সাজানো গোছানো কোনো কিছুই আমাদের ভালো লাগে না। ভালো যে লাগে না, তার অজস্র প্রমাণ চারপাশে ছড়িয়ে আছে। আপাতত মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন ফুটপাতের গল্পটা করি। খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই, ফুটপাতগুলো সবার চোখের সামনে দখল হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার অন্যান্য ফুটপাত আগে থেকেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গিয়েছিল। হকার দোকানদার বা ভিক্ষুকদের দখলে চলে গিয়েছিল। কিন্তু মেট্রোরেলের স্টেশন লাগোয়া ফুটপাতগুলোর বেলায় আশা করা হচ্ছিল ভিন্ন কিছু ঘটবে।
ঢাকার সাধারণ যাত্রীদের প্রতিদিনের জীবন বদলে দিয়েছে মেট্রোরেল। ঢাকার জন্য এমন একটি অত্যাধুনিক গণপরিবহনের কথা যখন কেউ ভাবতেও পারেনি তখন শেখ হাসিনা সরকার মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছিল। এখন সরকার না থাকলেও লাখ লাখ মানুষ এর সুফল পাচ্ছেন। বহু দূরের উত্তরা মিরপুর বা মতিঝিল চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। যানজট এড়িয়ে দারুণ স্বস্তির সঙ্গে যাতায়াত করা যাচ্ছে। এই স্বস্তির কথা ভেবে স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত ফুটপাতগুলো নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছিল।
পরিকল্পিত প্রশস্ত ফুটপাত। কী ঝকঝকে তকতকে একটা চেহারা। কিন্তু ওই যে বললাম, ভালো লাগে না! তাই অচিরেই দেখা গেল, দখলবাজরা চলে এসেছে। প্রথমে একজন দুজন করে হকার বা দোকানি ফুটপাতে বসতে শুরু করেছিল। এখন ওদেরই দখলে অধিকাংশ ফুটপাত। সেদ্ধ ডিম ফলমূল কাঁচা শাক-সবজি শাপলা শালুক বুট বাদাম সনপাপড়ি রজনীগন্ধার চারা ইলিশ মাছÑ কী চাই? সবই বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতে।
কোনো কোনো স্টেশন থেকে নামার সময় মনে হবে এটি ওই এলাকার সবচেয়ে বড় বাজার! প্রতি মুহূর্তে বাজার ঠেলতে হচ্ছে মেট্রো যাত্রীদের। শত শত যাত্রী ফুটপাত দিয়ে মেট্রোতে উঠছেন। একইপথে নেমে আসছেন। ফলে বিড়ম্বনার শেষ নেই। ভিক্ষুকদেরও ভীষণ পছন্দ হয়েছে মেট্রো লাগোয়া ফুটপাত। প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকরা রাস্তার অর্ধেকটাজুড়ে শুয়ে থাকছেন।
একটু অসতর্ক হয়ে পা ফেললেই বিপদ! কোনো কারণে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে না পারলে পা পড়ে যেতে পারে আমলকীর ঝুড়ি কিংবা জুতার দোকানে! ফার্মগেট পুলিশ বক্সের পাশ দিয়ে যে ফুটপাতটি মেট্রোতে গেছে, সেখানে একটি চায়ের দোকান বসেছিল প্রথমে। এখন হাট! পুলিশের চোখের সামনেই সব হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাত খালি করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না তারা। কাওরানবাজারে একাধিক ফুটপাত দিয়ে মেট্রোতে চড়া মানে যুদ্ধ। অর্থাৎ দখলবাজরা জেনে গেছে এই ফুটপাত ব্যবহারে বাধা আসবে না। সবাই তাই হামলে পড়েছে। কিন্তু সাধারণ যাত্রীরা বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি চান। মুক্তি দেওয়ার মতো কেউ কি আছে দেশে?
নীরব এলাকা সমাচার : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা এবং উত্তরার স্কলাস্টিকা ক্যাম্পাস থেকে লা মেরিডিয়েন হোটেল পর্যন্ত প্রধান সড়কটিকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গত বুধবার থেকে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। এর ফলে অন্যান্য দিনের চেয়ে অহেতুক হর্ন বাজানো কিছুটা কমেছে। কোনো চালককে হর্ন বাজানোর জন্য জরিমানা করা হচ্ছে না বটে।
সচেতন করার চেষ্টা চোখে পড়েছে। এ ছাড়া সচিবালয় এলাকায় সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন কর্মকর্তারা। ওই এলাকায় স্টিকার ও লিফলেট বিতরণ, মৌখিক অনুরোধসহ বিভিন্নভাবে চালকদের সচেতনতার কার্যক্রম চলছে। সরকারি তথ্য মতে, কয়েক দিন এমন প্রচারণার পর হর্ন বাজালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো। এখন দেখার বিষয় কতটা কার্যকর হয়।
দিনভর বৃষ্টি ॥ ঢাকায় বর্ষার আমেজ। ক’দিন ধরে দেদার বৃষ্টি হচ্ছে। লঘুচাপের প্রভাব। এ কারণে অসময়ে বৃষ্টি। গত বুধবার এত বৃষ্টি হয়েছিল যে, জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। মালিবাগ মৌচাক, শান্তিগর, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা চলে গিয়েছিল জলের নিচে। আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমানের তথ্য : সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। বৃহস্পতিবারও থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আগামী দু-একদিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। সুতরাং একটু সতর্ক থাকা চাই। আর বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সঙ্গে রাখা চাই ছাতাটাও!